ধান কাটা শ্রমিকের অভাবে পাকা ধান নিযে শঙ্কায় কৃষকরা
তোফায়েল হোসেন জাকির, গাইবান্ধা
🕐 ৯:৩০ অপরাহ্ণ, মে ১১, ২০২৪
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার দিগন্তজুড়ে নজর কাড়ছে কৃষকের বোরো ধান। ইতোমধ্যে ক্ষেতের ধান পাকতে শুরু করেছে। কেউ কেউ কাটা-মাড়াইয়ের কাজও করছেন। এর মধ্যে দেখা দিয়েছে আকাশের বিরূপ আচরণ। কখনো কালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে, আবার কখনওবা গুড়িগুড়ি ঝরছে। এ অবস্থায় পাকা ধান ঘরে তুলতে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন অনেকে। মেঘ দেখলেই বুক কেপে ওঠে বলে জানালেন একাধিক কৃষক।
সম্প্রতি সাদুল্লাপুরের নিভৃত অঞ্চলে দেখা গেছে, কৃষকের মাঠে দুলছে পাকা ধান। লক্ষাধিক হেক্টর ধান কাটার উপযুক্ত সময় হলেও পর্যাপ্ত কৃষি শ্রমিক না থাকায় জমির ধান ঘরে ওঠানো নিয়ে আতঙ্কে আছেন কৃষকরা। হঠাৎ শিলাবৃষ্টি কিংবা ঝড় হলে ধানের যে পরিমাণ ক্ষতি হবে তা বলা বাহুল্য। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একসময় এই অঞ্চলে বোরো ধান কম আবাদ করা হয়েছিল। সেই সময়ে শ্রমিকের কোন সংকট ছিলো না। কিন্তু বর্তমানে স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তিতে প্রত্যেক বছরই ধানের আবাদ বাড়ছে। একই সঙ্গে নিম্ন আয়ের মানুষদের পেশা বদলের কারণে শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। এই শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় সমলয় পদ্ধতি ধানের আবাদ ও কাটা-মাড়াইয়ের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে বিতরণ করা হচ্ছে কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিন। যা দিয়ে কৃষকের স্বল্প সময় ও খরচে দ্রুত ধান কাটা ও মাড়াই করা সম্ভব।
কিন্তু এসব মেশিন চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় কৃষকের কোন কাজে আসছে না। অন্যান্য বছরের ন্যায় চলতি মৌসুমেও একযোগে ধান কাটার উপযোগী হয়ে এসেছে। দিগন্ত মাঠে দুলছে সোনালী শীষ। ব্লাস্ট রোগ, খরা আর বাড়তি খরচ সামাল দিয়ে এখন এসব ধান ঘরে তোলা নিয়ে চরম হিমশিম খাচ্ছেন কৃষক।
ইতোমধ্যে উপজেলার আশপাশের এলাকা দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ঝড়বৃষ্টি। এর প্রভাব পড়তে পারে গাইবান্ধা অঞ্চলেও। কখনো কখনো মেঘে ঢাকছে পুরো আকাশ। এই মুহূর্তে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে কৃষকের পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না বলে জানান কৃষকরা। এক সময়ে এলাকার অধিকাংশ কর্মজীবী মানুষ ধান কাটার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে সেইসব শ্রমিকরা অন্য পেশার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার কারণে তারা আর ধান কাটার কাজ করেন না।
বর্তমানে এক বিঘা ধান কাটা-মাড়াই ৪ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন সবুজ মিয়া নামের এক শ্রমিক। আরেক কৃষক জামাত আলী বলেন, আকাশের গর্জন শুনলেই ভয়ে বুকটা কেপে ওঠে। এই বুঝি শিলাবৃষ্টি শুরু হবে। জমিতে পাকা ধান অথচ কৃষি শ্রমিক সংস্কটের কারনে ধান কাটতে পারছি না। সরকারের সেই হারভেস্টর মেশিন খুঁজেও পাওয়া যায় না। ফনি চন্দ্র সরকার নামের এক কৃষক বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে চার বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছেন। এর মধ্যে ব্রি ধান-২৮ জাতে ব্লাস্ট রোগে ১৫ শতক জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। অবশিষ্ট হাইব্রিড জাতের ধান ক্ষেতে পেকেছে। শ্রমিকের অভাবে এসব ধান কাটা-মাড়াই করতে সময় লাগছে।
অধিক মূল্য দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। গাইবান্ধা জেলা কৃষি বিভাগের উপ পরিচালকক খোরশেদ আলম জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ধান ফসল রক্ষায় কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে যেসব কৃষকের ৮০ ভাগ ধান পেকেছে সেইসব কৃষকদের ধান কাটার জন্য বলা হচ্ছে।