ঢাকা, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৩ ভাদ্র ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বাজেটে ১০ চ্যালেঞ্জ

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
🕐 ১২:১৯ অপরাহ্ণ, জুন ০৬, ২০২৪

বাজেটে ১০ চ্যালেঞ্জ

টানা চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী আজ বৃহস্পতিবার যে বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন, সে বাজেটে অন্তত ১০টি চ্যালেঞ্জ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতির বেশির ভাগ সূচকে নেতিবাচক প্রভাব বিদ্যমান। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় কমছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আশঙ্কাজনক পর্যায়ে নেমে গেছে। ডলার সংকটের কারণে বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা যাচ্ছে না। টাকার মান হ্রাস পাওয়ায় কমে গেছে মানুষের আয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মূল্যস্ফীতি উসকে দিচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি রয়েছে রাজস্ব বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জ। রয়েছে অপচয় ও দুর্নীতি কমিয়ে একটি ব্যয়-সাশ্রয়ী বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলেও সরকারের রাজস্বনীতি ও মুদ্রানীতির সঙ্গে অন্যান্য নীতির সমন্বয় নিশ্চিত করা না গেলে এটিও একটি রুটিন বাজেট হবে। এ ধরনের রুটিন বাজেট দিয়ে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা যাবে না। বাজেট শুধু আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়, সরকারের আর্থিক কাঠামোর সংস্কার এবং আগামী দিনের সক্ষমতা অর্জনের কৌশল। সে কৌশল গ্রহণে সরকারকে অপচয় কমাতে হবে, দুর্নীতি কমানোর বিষয়ে রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকতে হবে, আর অতিরিক্ত লোক দেখানো প্রকল্প গ্রহণ না করে ব্যয়-সাশ্রয়ী বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। এজন্য সরকারকে কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে।

বাজেটের আরেকটি চ্যালেঞ্জ দুর্বল ব্যাংকিং খাত। যাচাই-বাছাই না করে ঢালাওভাবে ঋণ প্রদানের ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অত্যধিক বেড়ে গেছে। ঋণ আদায় করতে না পেরে ব্যাংকগুলো তারল্য ঝুঁকিতে পড়েছে। কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব আদায় না করতে পারাও বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ। এর ফলে সরকারের ব্যয়-সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। উপরন্তু রাজস্ব কমার কারণে বাজেট ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। ঘাটতি মোকাবিলায় সরকার দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিচ্ছে। সে ঋণ পরিশোধ বাজেটে বড় ঝুঁকি তৈরি করছে।

সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দিতে হলে সরকারকে আয়বর্ধক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে বাজেটে। একই সঙ্গে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে কর্মসংস্থান এবং বিনিয়োগ দুটোতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ দূরের কথা, দেশি বিনিয়াগকারীরাও বিনিয়োগে যেতে নানা সমস্যায় পড়ছেন। ডলার সংকটের কারণে অনেক কোম্পানি মুনাফা ফেরত নিতে পারছে না। শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ডলার মিলছে না ব্যাংকে।

এমনকি বিমানের টিকিটের টাকা নিতে না পেরে বিমান কোম্পানিগুলো টিকিটের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। রিজার্ভ বাড়াতে আইএমএফসহ দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সরকার কঠিন শর্তে ঋণ নিচ্ছে। এ কারণে ভর্তুকিসহ অনেক জনবান্ধব উদ্যোগ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হচ্ছে সরকার। ওয়াসার পানির দাম, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে হু হু করে। বাড়ছে অন্যান্য সেবার দাম। ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় অত্যধিক বেড়ে যাচ্ছে। মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাওয়ার পর এখন ঋণ করে সংসার চালাচ্ছে। একদিকে ব্যয় বেড়ে যাওয়া, অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি ও টাকার অবনমনের কারণে আয় কমে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। সবকিছু ছাড়িয়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমানোই হবে এবারের বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ।

 
Electronic Paper