প্রস্তাবিত বাজেট বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির সহায়ক হবে না : ইএবি
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
🕐 ৫:৪২ অপরাহ্ণ, জুন ১০, ২০২৪
প্রস্তাবিত বাজেট বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সহায়ক হবে না বলে মনে করছেন এক্সপোর্র্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)-এর সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, এমপি। এজন্য ২০২৯ সাল পর্যন্ত পোশাক ও বস্ত্র খাতের চলমান সকল নীতিসহায়তা অব্যাহত রাখা এবং বিকল্প নীতিসহায়তা প্রবর্তন না করা পর্যন্ত চলমান নীতিসহায়তাগুলো কাঁটছাট না করার দাবি জানান তিনি।
আজ সোমবার (১০ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তি এ দাবি জানান তিনি।
আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা ও দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, অবকাঠামো ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এগুলো বাজেটের ইতিবাচক দিক। তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসায় আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের প্রধান খাত, রফতানিখাতের প্রস্তাবনার প্রতিফলন প্রস্তাবিত বাজেটে পাওয়া যায়নি।
কারণ হিসেবে তিনি, প্রস্তাবিত বাজেটে স্টিল বিল্ডিং তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরণের নির্মাণ সামগ্রীর উপর আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা, অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মূলধনী যন্ত্রাংশ ও নির্মাণ সামগ্রীর আমদানি শুল্ক ০ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ নির্ধারণ, জ্বালানী সাশ্রয়ী বাতির উপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশের প্রস্তাব এবং নতুন বন্ড লাইসেন্স ফি ৫০ হাজার টাকার স্থলে ১ লাখ টাকা এবং লাইসেন্স নবায়ন ফি বার্ষিক ৫ হাজার টাকার স্থলে ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
বাজেটে রফতানি খাত শিল্পের জন্য সহায়ক কিছু নীতি সহায়তার ব্যবস্থা রাখার জন্য প্রস্তাব করেন ইএবি সভাপতি। এর মধ্যে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ এ নামিয়ে আনা এবং এটিকে চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য করা এবং আগামী ৫ বছর পর্যন্ত অব্যাহত রাখা, রফতানি খাতে নীতি সহায়তার উপর আয়কর অব্যাহতি, শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্য ও সেবার উপর ভ্যাট ও পরোক্ষ ট্যাক্স প্রত্যাহার, ২০২৬ এ এলডিসি উত্তরণের পর বিকল্প সহায়তার ব্যবস্থা করা। এছাড়া এইচএস কোড ও ওজন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা, ইআরকিউ এর উপর আয়কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, অগ্নি ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম পুনঃস্থাপনের ক্ষেত্রে আমদানির উপর কর রেয়াত, পোশাক শিল্পের ঝুট বা বর্জ্য সংগ্রহের উপর ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার, রিসাইকেল ফাইবার সরবরাহের উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন।
পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব কারখানার অন্যতম উপাদান সোলার প্যানেল আমদানিতে শুল্কহার শুন্য (০ শতাংশ) করা। ব্যাংক সুদের উৎসে করহার কোম্পানি করদাতার জন্য বাজেটে প্রস্তাবিত ২০ শতাংশ করা হয়েছে যা পূর্বের ন্যায় ১০ শতাংশ রাখা, এক্সিট পলিসি এবং এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি সুবিধা প্রবর্তন, নন-কটন টেক্সটাইলে বিশেষ নীতি সহায়তা বরাদ্দ রাখা, রফতানিখাতসহ সকল শ্রমিকদের জন্য ফুড রেশনিং বাবদ বরাদ্দ রাখা। অগ্নি ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম আমদানির উপর কর রেয়াত সুবিধা দেওয়া, ব্যাংক সুদ সহনীয় পর্যায়ে রাখা, রফতানিমুখী শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসে ভর্তুকি, নীতিসহায়তার আওতা বাড়ানো, ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পগুলোকে বিশেষ নীতি সহায়তা ও অর্থায়ন সুবিধার আওতায় আনা, নতুন বাজার ও নতুন পণ্য উৎসাহিত করতে নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখাসহ ম্যান-মেইড ফাইবার ভিত্তিক শিল্পে বিনিয়োগ উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ নীতি সহায়তার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করেন আব্দুস সালাম মুশের্দী।
এছাড়া মাংস প্রক্রিয়াজাত এবং রপ্তানি প্রসারের জন্য তিনি হিমায়িত চিংড়িতে ১০ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা প্রদান। একই সঙ্গে হিমায়িত মাছ রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ৫ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করা। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য; পাট ও পাটজাত পণ্য এবং কৃষিজাত পণ্য এই তিনটি খাতকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করে এই খাতের বিকাশে নীতি সহায়তা দেওয়া, বর্তমানে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের অপরিহার্য রাসায়নিক আমদানির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাটের হার কমিয়ে সাড়ে ৭.৫ শতাংশ করা, শিল্প ও অর্থনীতির স্বার্থে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য স্থিতিশীল রাখা, শিল্পের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে কোয়ালিটি এবং কম্পিটিটিভ দামে গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহের সুপারিশ করেন তিনি।