ঢাকা, শনিবার, ২২ জুন ২০২৪ | ৮ আষাঢ় ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিএনপি বলছে লুটেরাবান্ধব বাজেট

বাজেট নিয়ে বাকযুদ্ধে আ.লীগ-বিএনপি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
🕐 ১০:৫২ পূর্বাহ্ণ, জুন ১০, ২০২৪

বাজেট নিয়ে বাকযুদ্ধে আ.লীগ-বিএনপি

সংসদে উপস্থাপিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেট প্রত্যাখান করেছে বিএনপি। বাজেট নিয়ে গতকাল রোববার দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এ বাজেট ‘ঋণনির্ভর, লুটেরা-বান্ধব’। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘লুটেরা সরকারের এই বাজেট কেবলমাত্র দেশের গুটিকয়েক অরিগার্কেদের জন্য, যারা শুধু চুরিই করছে না, তারা ব্যবসা করছে, তারাই পলিসি প্রণয়ন করছে, আবার তারাই পুরো দেশ চালাচ্ছে।’

 

অপরদিকে রাঘববোয়ালদের লুটপাট বন্ধ করার জন্য এবারের বাজেট করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের এক যৌথসভায় এ কথা বলেন তিনি। এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপি আমলে যে লুটপাটের রাজত্ব সৃষ্টি হয়েছিল, দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গিয়েছিল, তা থেকে দেশকে রক্ষা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লুটপাট করে কেউ এখানে পার পাবে না। নিজের লোকদের শায়েস্তা করার সাহস বিএনপির নেই। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রতি প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সাইফুর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়া কালোটাকা সাদা করেছেন। তাহলে তারাও কী দুর্বৃত্ত?’

গতকাল রোববার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন ‘অসহনীয় মুদ্রাস্ফীতির চাপে সাধারণ জনগণের ত্রাহি অবস্থা, এর উপরে বাজেটে করের বোঝা। এ বাজেট কল্পনার এক ফানুস, ফোকলা অর্থনীতির উপরে দাঁড়িয়ে আছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘লুটেরা সরকারের এই বাজেট কেবলমাত্র দেশের গুটিকয়েক অরিগার্কেদের জন্য, যারা শুধু চুরিই করছে না, তারা ব্যবসা করছে, তারাই পলিসি প্রণয়ন করছে, আবার তারাই পুরো দেশ চালাচ্ছে।’ ‘জবাবদিহিতাহীন এই সরকারের কাছ থেকে জনকল্যাণমূলক বাজেট আশা করাটাই বোকামি। আমরা এই বাজেট প্রত্যাখান করছি’-বলেন ফখরুল।

তিনি বলেন, এই বাজেট পুরোপুরি ঋণ নির্ভর। তারওপর ঘাটতি বাজেট। সেই ঘাটতি মেটানো হচ্ছে ঋণ দিয়ে। একদিকে বৈদেশিক ঋণ, অনদিকে ডোমেস্টিক লোন। যে মানুষগুলো অলিরেডি খাদের(গর্ত) মধ্যে পড়ে গেছেৃ তাদের ওপরে কথাকথিত হাতি চেপে বসেছেৃ তাদের কাছ থেকেও ঋণ নেয়া হয়। পুরো বাজেটটাই করা হয়েছে মেগা প্রকল্প, মেগা চুরির জন্য, দুর্নীতি করার জন্য।

‘অর্থনীতির এই ত্রিশঙ্কু অবস্থায় উচিত ছিলো অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্পসমূহ বা অর্থহীন, অনুৎপাদক দৃশ্যমান অবকাঠামোগুলো বন্ধ রাখা। সেই অর্থ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ জনকল্যাণমূখী খাতে ব্যবহার করা’- যোগ করেন তিনি। বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও সম্প্রসারিত করা যেতো। কিন্তু সেগুলা বন্ধ করলে তো দুর্নীতির পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। তাই বোধগম্য কারণেই সেটা করা হয়নি।

শিক্ষা স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্ধ কমিয়ে দেওয়ার সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে অত্যন্ত কম। কৃষির বরাদ্ধও তারা কমিয়ে দিয়েছে। অথচ করোনাকালে পুনরায় প্রমাণিত হয়েছে আমাদের অর্থনীতির মূল ভিত্তি কৃষি। সরকার কৃষিকে সহায়তা না করে ক্যাপাসিটি চার্চের নামে লক্ষ কোটি টাকা ভর্তুকির অর্থ তুলে দিয়েছে বিদ্যুৎ সেক্টারের অলিগার্কদের হাতে, অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ না কিনেই।

ফখরুল বলেন, এই বাজেটে কর্মসংস্থানের তৈরির কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ডলার সংকটের কথা বলে আমদানি সংকুচিত করায় ক্যাপিটাল মেসিনারিস এবং কাঁচা মাল আমদানি প্রায় অবরুদ্ধ। যার ফলে শিল্প কারখানা বন্ধের পথে। ব্যাংকগুলো শূন্য। সুদের হার অনেক বেশি। সরকার নিজেই ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ নেওয়ায় বেসরকারি সেক্টরে ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ কমে গেছে। ডিএফআই(ডাইরেক্ট ফরেন ইনভেষ্টমেন্ট) ও শূন্যের কোঠায়। নতুন কর্মসংস্থান না থাকায় শ্রমিকরা গ্রামে চলে যাচ্ছে-সেখানেও কর্মের সংস্থান নেই।

তিনি বলেন, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির কোনো আশা বাজেটে নই। নেই চাকুরিহারা এবং দুর্দশাগ্রস্থ শ্রমিকদের পুনর্বাসন রোডম্যাপ নেই।

মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা কমানো বিষয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো পথ নির্দেশনা নেই উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মূল্যস্ফীতির চরম চাপে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। কিভাবে এই মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে তার কোনো কথা নেই বাজেটে। কে না জানে, সরকারি আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তাদের আর্শিবাদপুষ্ট কিছু সিন্ডিকেটের কারণেই নিত্যপণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। এই সকল সিন্ডিকেট কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বাজেটে সেই বিষয়ে কোনো আলোচনাই স্থান পায়নি।

মির্জা ফখরুল বলেন, যে সরকার নিজেরাই আইনকানুন ও সংবিধান লঙ্ঘন করে তারা কিভাবে আর্থিক ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কতিপয় অর্থ-পিপাসু অরিগার্ক ও দুষ্ট রাজনীতিকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরকারি কাজে ব্যয় সংকোচন, ব্যাংকিং খাতে নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা স্থাপন কিংবা আর্থিকখাতে মৌলিক সংস্কার নিয়ে এই বাজেটে কোনো উদ্যোগ নেই কালো টাকা সাদা করতে বাজেট প্রস্তাবের সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল বলেন,দেশ এক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের নিপতিত। এর মূলকারণ সুশাসনের অভাব ও জবাবদিহিহীন এই মাফিয়া সরকার।

তিনি বলেন, এই মহাসংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় এই মাফিয়া চক্রে ও চেপে সবা মাফিয়া স্বৈরশাসকের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। অবিলম্বে একটি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে যেটা একমাত্র সম্ভব একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে। আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র এই ধাপ্পাবাজির অবসান ঘটিয়ে জনগনের ভোটাধিকার প্রয়োগের অবাধ ও নিরপেক্ষ সুযোগ সৃষ্টি করতেই হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

লুটপাট বন্ধের বাজেট : রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের এক যৌথসভায় দলেল সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি আমলে যে লুটপাটের রাজত্ব সৃষ্টি হয়েছিল, দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গিয়েছিল, তা থেকে দেশকে রক্ষা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লুটপাট করে কেউ এখানে পার পাবে না। নিজের লোকদের শায়েস্তা করার সাহস বিএনপির নেই।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রতি প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সাইফুর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়া কালোটাকা সাদা করেছেন। তাহলে তারাও কী দুর্বৃত্ত?’ বিএনপির আমলে লুটপাটকারীদের বিচার হয়নি বলেও মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে কেউ দুর্নীতি করে পার পাবেন না। তিনি যে-ই হোক না কেন।

দেশে বিএনপি আগুন সন্ত্রাসের যে সংস্কৃতি চালু করেছে, এর বিরুদ্ধে জনগণের জানমাল রক্ষায় অবশ্যই শান্তি সমাবেশ করতে হবে বলে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। রাজপথে প্রস্তুত থাকতে হবে।’

যৌথসভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, সুজিত রায় নন্দী, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, জেলা আওয়ামী লীগ এবং সব সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

 
Electronic Paper