ঢাকা, রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪ | ১৬ আষাঢ় ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

চরফ্যাশনে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে গলদা রেনু আহরণ, নীরব প্রশাসন

চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি
🕐 ৫:২৫ অপরাহ্ণ, জুন ২৬, ২০২৪

চরফ্যাশনে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে গলদা রেনু আহরণ, নীরব প্রশাসন

ভোলার চরফ্যাশনে নিষিদ্ধ মশারি জাল দিয়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে চলছে গলদা ও বাগদা রেণু আহরণ। প্রকাশ্যে পোনা আহরণ করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাছাড়াও যে জাল ব্যবহার করে গলদা-বাগদা রেণু সংগ্রহ করা হয়ে তা দিয়ে বিভিন্ন মাছের পোনা ধ্বংস হয়ে বলেও জানান তারা।

নদীতে মশারি জাল দিয়ে গলদা-বাগদা রেণু শিকার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তবে সে নিষেধাজ্ঞা মানছেন না চরফ্যাশনের জেলেরা। জানা যায়, প্রত্যেক বছরের এসময় মেঘনার উপকূলীয় অঞ্চলে গলদা-বাগদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির রেণু অবস্থান করে এবং জোয়ারের সময় এসব রেণু পোনা পাড়ে চলে আসে বলে। তখন এক শ্রেণির জেলে গলদা-বাগদা রেণু ধরতে গিয়ে নদী ও সামুদ্রিক প্রজাতির বিভিন্ন পোনা নিধন করছেন।

বুধবার (২৬ জুন ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মেঘনা নদীর তীরবর্তী সামরাজ, নতুন সুলিজ ও তেঁতুলিয়া নদীর তীরবর্তী বকশি নদীর এলাকা জুড়ে চলছে গলদা-বাগদা রেণু ধরার মহোৎসব। এতে কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ মশারি এবং ঠেলা জাল নিয়ে চিংড়ি রেণু আহরণ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক জেলেরা জানান, মৌসুমের শুরুতে এখন নদীতে গলদা পোনা পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন একজন জেলে ৭ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার গলদা ও বাগদা পোনা ধরতে পারে। তাতে আড়তদারের কাছে ১শ পোনা ১০০-১৫০ টাকা দরে বিক্রি করে। আড়তদার চিংড়ি ঘের মালিকদের কাছে ১০০ গলদা পোনা ৫০০ টাকা করে বিক্রি করেন। মহাজনেরা অগ্রিম ঋণ দেওয়ায় পোনা শিকারে উৎসাহী হয়ে উঠছে তারা।

পোনা শিকারী হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের সাম্রাজ এলাকার আনচলক ও মাদ্রাজ গ্রামের কালু মাঝি, সাইফুল জানান, গলদা চিংড়ির পোনা ধরা যে অবৈধ, তা তারা জানেন। একদিকে সাগরে ইলিশ শিকারে চলছে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পেটের দায়ে বাধ্য হয়েই রেণু পোনা শিকার করতে হচ্ছে।

মেঘনা নদীর তীরবর্তী সাম্রাজ বেড়িবাঁধের এলাকার রেণু শিকারী কিশোর মো. শামিম জানান, বাবা পেশায় একজন দিন মজুর হওয়ায় সে পড়াশোনা করতে পারি নাই। তার চার সদস্যের পরিবার। পরিবারে দৈনিক ব্যয় বহুল খরচ হয়। তার বাবা যেই টাকা ইনকাম করে তাতে তার পরিবার খুব কষ্ট চলতে হয়। তাই পেটের দায়ে বাধ্য হয়েই পরিবারের সচ্ছলতা ফিরাতে গলদা পোনা আহরণ করছেন।

মাদ্রাজ গ্রামের রেণু ব্যবসায়ী ইউপি সদস্য রাসেল জানান, মেঘনা নদীর গলদা চিংড়ির পোনা অল্প সময়ে বড় হয়ে যায়। এ জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকার চিংড়ি ঘের মালিকদের কাছে মেঘনার পোনার কদর বেশি। তাই জেলেদের কাছ থেকে রেণু পোনা কিনে উপজেলার চরকচ্ছপিয়ার স্থানীয় রেণু ব্যবসায়ীসহ নদী পথে ট্রলার যোগে খুলনার ও বাগের হাটে চিংড়ি ঘের মালিকদের কাছে বিক্রি করেন। এ ব্যবসায় তাদের লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। এর সঙ্গে এই এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত আছে বলে তিনি জানান।

চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মারুফ মিনার বলেন, গলদা-বাগদা রেণু পোনা আহরণ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যারা অবৈধভাবে রেণু পোনা আহরণ করছে তাদেরকে খুব দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। এক শ্রেণির অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ীদের কারণে নদী থেকে পোনা ধরা বন্ধ করা যাচ্ছে না। পোনা আহরণ বন্ধে অভিযান আরো জোরদার করা হবে।

 
Electronic Paper