ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১ আশ্বিন ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

লালমোহনে ৫৫৫ কি.মি. কাঁচা সড়কে লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ

মাহমুদ হাসান লিটন, লালমোহন (ভোলা)
🕐 ৬:৫৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৬, ২০২৪

লালমোহনে ৫৫৫ কি.মি. কাঁচা সড়কে লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ

বর্ষার এই সময়ে ভোলার লালমোহন উপজেলার ৫৫৫ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক দিয়ে চলাফেরা করতে গিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে রয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। একটু বৃষ্টি হলেই কিছু কিছু এলাকার এসব কাঁচা সড়ক পানিতে নিমজ্জিত হয়ে কাদাময় হয়ে যায়। যার ফলে এসব সড়কগুলো দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাও চরম দুষ্কর হয়ে পড়ে। শুষ্ক মৌসুমে সীমিত পরিসরে এসব কাঁচা সড়ক দিয়ে ছোট ধরনের যানবাহন চলাচল করলেও বর্ষা মৌসুমে কোনো যানবাহনই চলে না। ফলে চরম বিপাকে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। এমন পরিস্থিতিতে কিছু কিছু এলাকার মানুষ একপ্রকার গৃহবন্দির মতো দিন পার করেন।

লালমোহন উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় মোট সড়ক রয়েছে ৯৬০ কিলোমিটার। যার মধ্যে ৫৫৫ কিলোমিটার সড়কই কাঁচা। এর মধ্যে উপজেলার লালমোহন ইউনিয়নে ৫৯.১৪ কিলোমিটার, চরভূতা ইউনিয়নে ৯৫.৬৮ কিলোমিটার, ধলীগৌরনগর ইউনিয়নে ৬৯.৪৬ কিলোমিটার, লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নে ৬১.৫৯ কিলোমিটার, রমাগঞ্জ ইউনিয়নে ৬১.৭১ কিলোমিটার, পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নে ৪২.৬৬ কিলোমিটার, ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নে ৩৩ কিলোমিটার, বদরপুর ইউনিয়নে ৭৫.৪৬ কিলোমিটার এবং কালমা ইউনিয়নে ৫৬.৩৬ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক রয়েছে। এছাড়া বাকি সড়কগুলো পাকা, এইচবিবি, আরসিসি এবং ইউনি ব্লকের আওতায় রয়েছে।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উপজেলা যেসব এলাকায় কাঁচা সড়ক রয়েছে ওইসব এলাকার মানুষজন বৃষ্টির সময় চরম দুর্ভোগে পড়েন। ঘরে থেকে বের হওয়াই এসব মানুষের কাছে দুষ্কর হয়ে পড়ছে। বৃষ্টিতে বেহাল এমনই একটি সড়ক লালমোহনের রমাগঞ্জ ইউনিয়নের ডা. আজাহার উদ্দিন সড়কের পূর্ব মাথার ব্রিজের পূর্ব পাশ থেকে ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের কাজীবাজার পর্যন্ত যাতায়াতের সড়ক।

চরমোল্লাজী এলাকার বাসিন্দা মো. নূরুল ইসলাম, মো. বাবুল এবং মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ধলীগৌরনগরের চরমোল্লাজী থেকে কাজীবাজার সড়কটি খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে শত শত মানুষ যাতায়াত করেন। তবে বর্ষার মৌসুমে চলাচলের জন্য খুবই অনুপযোগী হয়ে যায় সড়কটি। বর্ষায় এই সড়ক দিয়ে যানবাহনতো দূরের কথা পথচারীদের পায়ে হেঁটে চলাচল করতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

পূর্ব চরউমেদ আহম্মদিয়া দাখিল মাদরাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাছনা আক্তার, সোনিয়া বেগম এবং মো. তানজিল হোসেন জানান, শুষ্ক মৌসুমে সড়কটি দিয়ে কিছুটা ঠিকমতো যাতায়াত করতে পারলেও বিপত্তি বাঁধে প্রতি বছরের বর্ষার মৌসুমে। এই মৌসুমে আমাদের মাদরাসায় যেতে খুবই কষ্ট হয়। কারণ সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি আর মাটি একাকার হয়ে সড়টির চরম বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়। অনেক সময় পিছলে পড়ে আমাদের জামা-কাপড় এবং বইখাতা ভিজে যায়।

পূর্ব চরউমেদ এলাকার গৃহবধূ মোসা. রাহিমা বেগম এবং বিবি ছকিনা বলেন, এই এলাকার অনেক পরিবারই গরীব। যার জন্য অনেকেই অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন না। আমারও তেমন। কোনো সমস্যা হলে আমরা স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে সেবা নিই। তবে বর্ষার মৌসুমে সড়কটিতে পানি জমে কাদাময় হয়ে যায়। যার কারণে প্রচুর শারীরিক সমস্যা হলে এই বেহাল সড়কটি দিয়ে চরম দুর্ভোগ সঙ্গী করে উপজেলা সদরের হাসপাতালে যেতে হয়। তাই আমরা অতিদ্রুত এই সড়কটি পাকা করার দাবি জানাচ্ছি।

আরেকটি বেহাল সড়ক উপজেলার লালমোহন ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বালামচরের দক্ষিণ পাশ থেকে দেওয়ানকান্দি পর্যন্ত সড়কটি। বছরের পর বছর অতিবাহিত হলেও এই সড়কটি কাঁচাই রয়ে গেছে। এই কাঁচা সড়কে চরম দুর্ভোগ নিয়ে চলাফেরা করেন স্থানীয়রা।

ওই এলাকার আলী একাব্বর, মো. সিদ্দিক এবং বারেক পাটোয়ারী জানান, শুকনোর সময় সড়কটি দিয়ে অটোরিকশা এবং মোটরসাইকেল চললেও বর্ষায় এসবের কিছুই চলে না। এমনকি পায়ে হেঁটে চলাফেরা করাও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। খুবই বেশি প্রয়োজন না হলে এই এলাকার অনেকেই বর্ষার সময় ঘর থেকে বের হন না। বলতে গেলে বর্ষা মৌসুমে একপ্রকার জিম্মি দশায় থাকেন এই এলাকার মানুষজন। আমরা দ্রুত এই কাঁচা সড়কটি পাকা করার দাবি জানাচ্ছি।

এবিষয়ে এলজিইডির লালমোহন উপজেলা প্রকৌশলী রাজীব সাহা বলেন, উপজেলার কাঁচা সড়কগুলোর ভেতর থেকে গুরুত্ব বিবেচনায় ইতোমধ্যে ১০২ কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের লক্ষ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ওই প্রস্তাবটি পাস হয়ে বরাদ্দ পেলেই ১০২ কিলোমিটার সড়কের কাজ শুরু করা যাবে। এছাড়া অন্য যেসব কাঁচা সড়ক রয়েছে সেগুলোও পাকাকরণের জন্য পর্যায়ক্রমে প্রস্তাব পাঠানো হবে।

 
Electronic Paper