ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১ আশ্বিন ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পিরোজপুরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

পিরোজপুর প্রতিনিধি
🕐 ৭:১৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২৪

পিরোজপুরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শ্রীরামকাঠী ইউ.জে.কে. মাধ্যমিক বিদ্যালয়য়ের প্রধান শিক্ষক র‌মেন্দ্রনাথ মন্ড‌লের বিরুদ্ধে স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ের এসএমসি কমিটির অভিভাবক সদস্য শাহীন মৃধা ও ছাত্র অভিভাবক মো. নাসির মল্লিক এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে পৃথক ৫টি অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগের আলোকে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক রমেন্দ্রনাথ মন্ডল শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের চিঠি স্মারক নং-শা/১১/৩-৯/২০১১/২৫৬, তারিখ: ০৬/০৬/২০১১ এর পরিপত্রে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষকের পদশূন্য হলে জেষ্ঠতম শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু তার থেকে জেষ্ঠতম শিক্ষক থাকার পরেও তিনি প্রভাব খাটিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করে। পরে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন এবং রাজনৈতিক শক্তি ব্যাবহার ও বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষকের পদে অধিষ্ঠিত হন।

তিনি ভর্তি ফরম, উপবৃত্তি আবেদন ফরম, প্রত্যয়ন বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়া রেজিষ্ট্রেশনের নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ, সংগীত বাবদ প্রতি মাসে প্রাপ্ত অর্থ, সার্টিফিকেট বাবদ শিক্ষার্থীদের নিকট হতে অর্থ, প্রতি বছর টিউশন ফি বাবদ ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা এবং ঘর ভাড়া ১ লক্ষ টাকা নিজেই আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগে জানা যায়।

এছাড়া ২০২৩ সালে পিবিজিএসআই স্কিমের প্রাপ্ত ৫ লক্ষ টাকা সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধিদের নামে বরাদ্দ থাকলেও সামান্য কিছু টাকা শিক্ষকদের সন্তান ও কমিটির কয়েকজন অভিভাবকদের সন্তানদের নামে নামমাত্র টাকা দিয়ে বাকি টাকা নিজেই আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ২০২৩ সালে স্কুলের সহকারি শিক্ষক আশিষ মন্ডল সপ্তম শ্রেনীর ক্লাসে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সম্পর্কে কটুক্তিমূলক আলোচনা করা এবং এক ছাত্রীকে নিয়ে তার রুমে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তার বিচারের দাবি জানান এবং তিনি আত্মগোপনে থেকে বিদ্যালয়ে ৭ মাস অনুপস্থিত থাকার পরে বিদ্যালয়ে আসলে পূর্বের সকল বকেয়া হাজিরা স্বাক্ষর তিনি এক দিনেই করেন এবং এতে প্রধান শিক্ষক কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই পুনরায় তাকে বহাল করেন এবং বেতন-ভাতাদি তুলতে সহায়তা করেন।

বিদ্যালয়ের জেষ্ঠ সহকারি শিক্ষক রোকেয়া বেগম জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষক আশিষ ছিলেন প্রভাবশালী। এ কারণে আমরা এতদিন মুখ খুলতে পারি নাই, আমাদের উপর অন্যায়-অত্যাচার ও জুলুম করেছেন প্রধান শিক্ষক। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে নিয়ে কটুক্তিমূলক আলোচনা করার ও প্রতিবাদ জানাতে পারি নাই।

বিষয়টি অস্বীকার করে সহকারী শিক্ষক আশিষ বলেন, আমি ধর্ম নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি করিনি। এটা তো অনেক আগেই স্থানীয়ভাবে সমাধান হয়ে গেছে, এমনেই সরকার পতনের পরে আমি এখনও স্কুলে যেতে পারি নাই।

এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক রমেন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, এ নিয়ে আমি কোনো বক্তব্য দিব না।

এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২ সেপ্টেম্বর সোমবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অরূপ রতন সিংহ তদন্তে স্কুলে যান এবং তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া যায়। আমি অধিকতর তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করব। তাদের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এছাড়া সহকারি শিক্ষক আশিষ মন্ডলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাকে শোকজ করার জন্য প্রধান শিক্ষককে নোটিশ দিতে বলেছি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আপাতত তার বেতন স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে।

 
Electronic Paper