ঢাকা, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৩ ভাদ্র ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঢাকা যেনো এক যুদ্ধবিধ্বস্ত নগরী

শিপার মাহমুদ
🕐 ৩:২৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০২৪

ঢাকা যেনো এক যুদ্ধবিধ্বস্ত নগরী

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিনে ঘটে যাওয়া সহিংসতায় বদলে গেছে চিরচেনা রাজধানী ঢাকার চিত্র। ধ্বংসযজ্ঞের কবলে ব্যস্ত নগরীর বুকে নেমে এসেছে অন্ধকার। হঠাৎ দেখলে মনে হবে এ যেনো ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত নগরী’। গতকাল সোমবার রাজধানীর মহাখালী, পুরানা পল্টন, মতিঝিল, আরামবাগ, নিউমার্কেট, আজিমপুর, মোহাম্মাদপুর, রামপুরা, বাড্ডা লিংকরোড ও নতুনবাজারসহ ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো। সহিংসতা থেকে বাদ যায়নি মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, সেতু ভবন, বিআরটিএ ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর, দেশের একমাত্র সরকারি টেলিভিশন বিটিভি, পুলিশ বক্স ও টোল প্লাজা। এছাড়াও ভেঙে ফেলা হয়েছে ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কের রোড ডিভাইডারের গ্রিল। পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে বিআরটিএ বাস ও মোটরসাইকেলসহ অসংখ্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যানবাহন ও প্রাইভেট গাড়ি। ফলে এখন রাজধানীর যেদিকে চোখ যায়; সেদিকেই ধ্বংসস্তূপের ভয়াবহতা চোখে পড়ছে।

এদিকে, সহিংসতার পর থেকেই সরকারি ভবন ও সড়কে আইনশৃঙ্খলা জোরদার করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আনসার-ভিডিপি সদস্যদের।

সরেজমিনে গতকাল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের গিয়ে দেখা যায়, অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে প্রায় অর্ধশত গাড়ি। ভবনের ভেতরে ভাংচুরসহ করা হয়েছে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কেমন হতে পারে তা প্রাথমিকভাবে বলা না গেলেও ভবনটি যে অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হয়েছে তা বলার অবকাশ রাখে না। তবে, গত কয়েকদিনে সহিংসতায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে সড়কে পড়ে থাকা ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নিতে কাজ করছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। গতকাল দুপুরে বাড্ডা লিংকরোডে আগুনে পুঁড়িয়ে দেয়া একটি গাড়িকে অন্যত্র সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতে দেখা গেছে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের। এছাড়াও আরামবাগে সহিংসতায় রাস্তায় পড়ে থাকা গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি সরাতে কাজ করছেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা।

গতকাল কথা হয় আলম নামের একজন পথচারীর সঙ্গে। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, ‘গত কয়েকদিনে আন্দোলনে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এখনো বের হতেই ভয় করে। কিন্তু কোনো উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে রাস্তায় এসেছি বাজার করতে।’ তিনি বলেন, ‘কারফিউ চলছে। রাস্তায় বের হলেই পড়তে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে। এটা আমাদের সাধারণ মানুষের জন্য খুবই ভোগান্তির।’

রাজধানীর দৈনিক বাংলার মোড়ে কথা হয় রিকশাচালক নজির মিয়ার সঙ্গে। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। পেটের দায়ে এই কারফিউর মধ্যেও রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। তবে, রাস্তায় সেনাবাহিনী থাকায় ভয়ে সব রাস্তায় যাত্রী নিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে না।’ এছাড়া মনের মধ্যে একধরনের ভীতিও কাজ করছে বলে জানান তিনি।

গতকাল দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ ছিলো না। এরপর আবার কারফিউ শুরু হয়। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকাল এটি বলবৎ থাকবে। এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ আন্দোলন করছে বিএনপি-জামায়াত। সহিংসতা হয়েছে তারেক রহমানের নির্দেশে। তবে দু-চার দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।’

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে গত বুধবার থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ ও সহিংসতা শুরু হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার রাত ১২টা থেকে সারাদেশে কারফিউ জারি করে সরকার। বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।

 
Electronic Paper