ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১ আশ্বিন ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পর্যটক আকৃষ্ট করবে চাম্বী লেক

লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
🕐 ৬:৩৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২৪

পর্যটক আকৃষ্ট করবে চাম্বী লেক

চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলাধীন জ্ঞানী-গুণী ও সুফী-সাধক ও পীর-আউলিয়ার চারণভূমি চুনতি ইউনিয়ন। বন-জঙ্গল ও খরস্রোতা ডলু নদী বিধৌত ইউনিয়নের পানত্রিশা গ্রাম। গ্রামের এক পাশে রয়েছে ডলু নদীর মানসকন্যা খরস্রোতা চাম্বী খাল। সুদূরপ্রসারী স্বপ্ন নিয়ে এলাকার সমাজ হিতেষী কয়েকজন এগিয়ে আসেন চাম্বী খালের উপর রাবার ড্যাম নির্মাণে মৎস্য চাষ ও কৃষি বিপ্লব ঘটাতে।

অপরূপ শোভামন্ডিত নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সবুজ-শ্যামল চুনতি ইউনিয়নের বনাঞ্চলসমূহ। রকমারি বৃক্ষ, বাঁশ ও বেতে ভরপুর বনভূমি। বন্য প্রাণীর বিচরণ ও পাখির কলতান, পাতার মর্মর ধ্বনি, বনভূমির নিঃসঙ্গতা সব যেন প্রকৃতির আড়ালে লুকিয়ে থাকা অদৃশ্য এক লুকোচুরি খেলা।

চুনতি ইউনিয়নের চাম্বী এলাকা একটি জনপদ। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে খরস্রোতা চাম্বী খাল। উৎপত্তিস্থল গহীন অরণ্যের পাদদেশে। এলাকার অসংখ্য খেটে খাওয়া মানুষ কৃষি নির্ভরশীল। চাম্বী খালকে কেন্দ্র করে কৃষি ও মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে আসেন প্রকৃতি প্রেমিকেরা।

চুনতি ইউনিয়নের পানত্রিশা একটি গ্রাম। পানত্রিশা গ্রামের জয়নগর এলাকায় একটি রাবার ড্যাম স্থাপন করার স্বপ্ন দেখেন তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান এবং পার্শ্ববর্তী ফারাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ১৯৯৮ সালে রাবার ড্যাম স্থাপনে তাঁর চিন্তাধারা ক্রমশঃ গতিশীল হতে থাকে।

তাঁর ধারণা, উল্লেখিত স্থানে রাবার ড্যাম নির্মিত হলে কৃষি নির্ভরশীল এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠী কৃষিক্ষেত্রে উপকৃত হবেন। অনুরূপভাবে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধিকরণে ও সুযোগ পাবেন। ফলে, ১৯৯৮ সালে তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পুরোপুরি উদ্যোগ নেন। তৎকালীন সরকার প্রধানের সামরিক সচিব ও চুনতির কৃতি সন্তান প্রয়াত মেজর জেনারেল মিঞা মোঃ জয়নাল আবেদীন বীর বিক্রম, পিএসসির প্রচেষ্টা ও এলজিইডির অংশগ্রহণমূলক ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ সেক্টর প্রকল্পের অধীনে রাবার ড্যাম স্থাপন প্রক্রিয়ার প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। জনগণের সাড়া ও উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখে উদ্যোক্তারা এ স্থানকে চাম্বী লেক নাম দিয়ে অন্যতম পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন।

প্রাকৃতির সবুজ মেলায় নৈসর্গিক শোভামন্ডিত চুনতির এ চাম্বী লেক বর্তমানে প্রকৃতি প্রেমিক ও উৎসুক জনতার আনাগোনায় মুখরিত। দক্ষিণ চট্টলার অন্যতম ব্যস্ততম উপ-শহর তথা লোহাগাড়া উপজেলা সদর বটতলী মোটর স্টেশন সংযুক্ত দরবেশ হাট ডিসি সড়ক দিয়ে সোজা দক্ষিণে পুটিবিলার এমচর হাট পেরিয়ে সামান্য দক্ষিণে এ চাম্বী লেকের অবস্থান। চাম্বী লেক পর্যটন কেন্দ্র বাস্তবায়ন কমিটির অন্যতম উপদেষ্টা ও চুনতি ইউনিয়নের একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, চুনতি চাম্বী লেক চিত্ত বিনোদন স্পট। বর্তমানে পর্যটনকেন্দ্রের সমতূল্য। গ্রামীণ পরিবেশে এ চাম্বী লেক গড়ে ওঠে রূপ-রস ও আনন্দদানে মুগ্ধ করছে দর্শনার্থীদেরকে। দূর-দূরান্তের এলাকা থেকে আগত দর্শনার্থীরা এই চাম্বী লেকে এসে আনন্দ উপভোগ করছেন।

তিনি মনে করেন -সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ফেলে এর সুযোগ-সুবিধা, সুনাম ও প্রচার আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। তাই এ লেকটি পূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র পরিণত করতে সরকারের শুভদৃষ্টি দাবি করেছেন তিনি।

চাম্বী খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি শিক্ষাবিদ মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, চুনতির পানত্রিশা একটি স্বনামধন্য গ্রাম। চাম্বী খালকে কেন্দ্র করে এ গ্রামের পরিচিতি আরো ছড়িয়ে পড়েছে। ত্রিমুখী পরিকল্পনা নিয়ে এলাকার জয়নগরস্থ খরস্রোতা চাম্বী খালের উপর রাবার ড্যাম স্থাপিত হয়। চিত্ত বিনোদনে আনন্দ পাচ্ছে দর্শনার্থীরা। পানি সেচ ব্যবস্থায় কুষিপণ্য উৎপাদন এবং মৎস্য চাষে মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধিকরণ প্রভুতি মহৎ উদ্যোগ নিয়ে গড়ে ওঠেছে এ চাম্বী লেক প্রকল্প বা পর্যটন কেন্দ্র। পরিকল্পনা সুদূরপ্রসারী। কিন্তু, আর্থিক সমস্যায় বাস্তবায়নের অগ্রযাত্রা ব্যাহত বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরো বলেন, আনন্দ-খুশীতে মানুষের মন প্রফুল্ল থাকে। মন-মানসিকতার উৎকর্ষে মানুষের নৈতিকতা বলীয়ান হয়। এতে মানুষ খুঁজে পায় উন্নত জীবন ও চরিত্র গঠনের সুযোগ। অবকাশ যাপনে মানুষের মনে বয়ে যায় সুখ-শান্তি ও অগ্রগতির অমৃত সুধা। চিত্ত বিনোদনে মানুষের মনের চিন্তা-ভাবনার বিকাশ ঘটে। তাই তিনি চিত্তবিনোদনে, কৃষিজ ও মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধিকরণে এ চাম্বী লেককে পর্যটন কেন্দ্রে গড়ে তোলার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।

 

 
Electronic Paper