ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১০ আশ্বিন ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রশাসনিক কর্মকর্তার ইন্দনে ইউপি ডিজিটাল সেন্টারে তালা

সৈয়দ মো. শহিদুল ইসলাম
🕐 ৫:৪৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪

প্রশাসনিক কর্মকর্তার ইন্দনে ইউপি ডিজিটাল সেন্টারে তালা

সোনাইমুড়ী উপজেলার ৪নং বারগাঁও ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) কামরুল হাসানের গভীর ষড়যন্ত্র-ইন্দনে স্থানীয় সন্ত্রাসী মীর হোসেন বাদসার নেতৃত্যে ২০-২৫ জন যুবক সশস্ত্র হামলা চালিয়ে উদ্যেক্তা মো. শাহপরানকে টেনেহিঁচড়ে বের করে ডিজিটাল সেন্টারে তালা লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যেক্তা মো. শাহপরান ২০১১ সাল থেকেই অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে সরকারি বিধি-নিয়ম মোতাবেক জনসেবা দিয়ে আসছে। জন্ম নিবন্ধন, মৃত্যু নিবন্ধন ও সংশোধন, ট্রেড লাইসেন্স, বিভিন্ন প্রত্যেয়ন সংক্রান্তে আবেদনে প্রশাসনিক কর্মকর্তা কামরুল হাসান স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক থাকায় ইউনিয়নের নাগরিকগণ ও বিভিন্ন সেবা প্রত্যাশীদের কাছ থেকে সর্বনিম্ন দুই শত টাকা থেকে শুরু করে ক্ষেত্র বিশেষ কয়েক হাজার টাকা উৎকোচ আদায় করে স্বাক্ষর করে। এতে এলাকার সেবাপ্রত্যাশী নিরীহ জনসাধারণ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সরকারি বিধি মোতাবেক ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যেক্তা সেবা নিতে আসা বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে। এতে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কামরুল হাসান তার অনৈতিক ঘুষ-দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যেক্তা মো. শাহপরানের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন থেকে ক্ষিপ্ত মনোভাবসহ গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে থাকে। সম্প্রতি ৫ আগস্ট রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতি ও আ.লীগ সরকার পতনের পর স্থানীয় কথিত সন্ত্রাসীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে কামরুল হাসান এবং ১৭ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কামরুল হাসানের সরাসরি ইন্দনে ও উপস্থিতিতে স্থানীয় রাজীবপুর পশ্চিম পাড়ার মীর হোসেন বাদশার (৩০) নেতৃত্বে ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে অতর্কিত প্রবেশ করিয়া উদ্যেক্তা মো. শাহপরানকে ভয় ভীতি প্রদর্শনসহ টেনে হেঁছড়ে মারধর করে ডিজিটাল সেন্টার থেকে বের করে ডিজিটাল সেন্টারে তালা লাগিয়ে দেয় ও সেবামূলক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ঐ সময় প্রশাসনিক কর্মকর্তা কামরুল হাসান তার চেয়ারে বসে হাসতেছে এবং তার এজেন্ডা বাস্তবায়নে মোষগুলে ব্যস্ত ছিলেন। স্থানীয়দের অনেকেই মোবাইলে এ ঘটনার ভিডিও চিত্র ধারন করে। যা এই প্রতিবেদকের কাছে এসে পৌঁছেছে। ঘটনার পরবর্তীতে মীর হোসেন বাদশার কাছ থেকে ডিজিটাল সেন্টারে লাগানো তালার চাবি প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বাভাবিকভাবেই বুঝে নেয়।

এদিকে একটি মহল ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা কামরুল হাসানের সাথে সমঝোতা ও মীর হোসেন বাদশা গংকে টাকা দিয়ে সুরাহ করে শাহপরানকে ডিজিটাল সেন্টারে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে বিভিন্নভাবে প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়দের অনেকেই অভিমত প্রকাশ করে বলেন, সর্বপরী ঘটনার সবকিছুই প্রশাসনিক কর্মকর্তার ইন্দনেই সংঘটিত হয়েছে। কামরুল হাসান রেজুলেশানে স্বাক্ষর আদায়ে ব্যর্থ হয়ে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সমন্বয়ে থাকা বারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ নামীয় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এ সংক্রান্তে কামরুল হাসান নিজ কন্ঠের ভয়েস শেয়ার করে। জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বয়স বাড়িয়ে-কমিয়ে গত ২-৩ বছরে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের নামে সেবা প্রত্যাশীদের হয়রানিসহ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ৪নং বারগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল আলম জানান, ডিজিটাল সেন্টারে তালা লাগানোর ঘটনা সংক্রান্তে বিষয়ে উদ্যেক্তা শাহপরান আমাকে অবহিত করলেও প্রশাসনিক কর্মকর্তা কামরুল হাসান কোনোকিছুই জানায়নি। উদ্যেক্তা শাহ পরানকে রাখা না রাখার ইখতিয়ার আমাদের কাহারোর নেই, তা কেবল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তবে দীর্ঘদিন থেকেই জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, প্রত্যয়ন আবেদনে অগ্রগামী ও স্বাক্ষর নিতে সেবা প্রত্যাসিদের কাছ থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা সরকারি বিধি-নিয়মের বাহিরে অতিরিক্ত টাকা নেওয়াকে কেন্দ্র করে আমি পরিষদের মেম্বারগনকে নিয়ে আলোচনা করে তাকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করি। কিন্তু কে শুনে কার কথা, এ নিয়ে কামরুল হাসান দীর্ঘদিন থেকে শাহ পরানের উপর ক্ষুব্ধ। যার ফলশ্রুতিতে হয়তো আজ এ ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। এ নিয়ে মীর হোসেন বাদশা গং ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার পক্ষে অবলম্বনকারী এলাকার বিভিন্ন প্রভাবশালীরা আমাকে মোবাইল ফোনে বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রশাসনিক কর্মকর্তা উদ্যেশ্য মূলক রেজ্যুলেশান লিখে তাতে আমিসহ মেম্বারদের স্বাক্ষর আদায়ের চেষ্টা করে।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রশাসনিক কর্মকর্তা কামরুল হাসান প্রসঙ্গ এড়িয়ে উদ্যেক্তা শাহ পরানের বিষয়ে উল্টো ক্ষোভ প্রকাশ করে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উদ্যেক্তা শাহ পরান ঘটনার পর পরই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছে।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্নিজ ফাতেমা জানান, আমি বিষয়টি অবগত হয়েছি ও ডিজিটাল সেন্টারের নিয়মিত সেবা দানের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

 
Electronic Paper