ঢাকা, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৩ ভাদ্র ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

হরিরামপুরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান, আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা

সায়েম খান, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ)
🕐 ২:৫১ অপরাহ্ণ, জুলাই ১১, ২০২৪

হরিরামপুরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান, আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা

ভবনে ফাটল, কখন যেন ভবনটি ভেঙে পড়ে, এই বুঝি ছাদ থেকে পলেস্তারা পড়ল, প্রতিনিয়ত এসব চিন্তা মাথায় নিয়েই শতাধিক শিক্ষার্থীর ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকেরা। শিক্ষার্থীরাও থাকে আতঙ্কে।

এমনই অবস্থা মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কোটকান্দি এলাকার ১৭ নং কাঞ্চনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। ব্রিটিশ শাসনামলে কাঞ্চনপুর এলাকার তৎকালীন জমিদার রাধা গোবিন্দ বাবু ১৯৪০ সালে কাঞ্চনপুর গ্রামে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। পঞ্চাশ দশক থেকে অনবদ্য পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়ে কাঞ্চনপুর এলাকা সম্পূর্ণভাবে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

পরবর্তীতে ইউনিয়নের গৌরবিরদিয়া এলাকায় বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয়। এক সময় নদী ভাঙনের কবলে গৌরবিরদিয়া এলাকাও নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেলে কোটকান্দি গ্রামে আনা হয়। সে জায়গাও নদীতে বিলীন হলে ১৯৯৬ সালের দিকে একই গ্রামের শেষ মৌজায় ৮ শতাংশ জায়গা কিনে তার ওপর টিনের ঘর নির্মাণ করে বিদ্যালয়টি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়। ১৯৯৭ সালের দিকে টিনের ঘরের পরিবর্তে ওখানেই চার রুম বিশিষ্ট একতলা একটি ভবন নির্মাণ করে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। দিনে দিনে বিদ্যালয়ের ভবনটির সাদা রঙ বিবর্ণ হতে থাকে এবং আস্তে আস্তে খসে পড়তে থাকে দেয়ালের পলেস্তারা। কোথাও কোথাও ভবনের দেয়াল ও ছাদের নিচের অংশসহ অনেক পিলারেরও পলেস্তারা খসে রড বের হয়ে এসেছে। এছাড়াও ভবনের বীমের কোথাও কোথাও রড বের হয়ে এসেছে। বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনে ঝুঁকি নিয়েই ক্লাস করছে শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থী।

বিদ্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পিইডিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ভবনটির সাথেই দোচালা ৫ রুমের একটি ঘর নির্মাণ করা হলেও অত্যধিক গরমের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে না পারায় জরাজীর্ণ ভবনেই ক্লাশ করতে দেখা যায়। বিদ্যালয়টির জায়গার অভাবে সামনে নেই আঙিনা, নেই কোনো খেলার মাঠ। বিদ্যালয়ের এক কোণে ছোট পরিসরে নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ মিনার। তাছাড়াও বিদ্যালয়ের কোনো আঙিনা না থাকায় শিক্ষার্থীদের অবসর সময়টাও ক্লাসরুমেই বসে কাটাতে হয়।

বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্র স্বাধীন ইসলাম বলে, আমাদের বিদ্যালয়ের দেয়াল ভেঙে পড়ছে। আমরা অনেক ভয়ে ভয়ে ক্লাস করি। আমাদের ক্লাসরুমে ফ্যানের অভাব। এতে করে গরমে আমরা ক্লাস করতে পারি বা। আমাদের এখানে টয়লেটের সমস্যা। কোনো টয়লেট দেয়ার জায়গা নেই। আমরা অনেক সমস্যা নিয়ে এখানে পড়াশোনা করছি। আমাদের খেলাধুলার মাঠ নেই। ফলে আমরা খেলাধুলাও করতে পারি না। আমাদের ক্লাস রুমেই বসে থাকতে হয়।

সহকারী শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমাদের বিদ্যালয়ে সমস্যার শেষ নেই। মূল সমস্যাই হলো জায়গার। মাত্র ৮ শতাংশ জায়গার ওপর বিদ্যালয়টি। জায়গার কারণে আমরা নতুন ভবন পাচ্ছি না। পুরাতন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই আমাদের ক্লাস করাতে হচ্ছে। একটা টয়লেট নেই। টয়লেট দেয়ার জায়গাও নেই। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ এলাকার দানবীর ব্যক্তিবর্গের নিকট জোর দাবি করবো, ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখতে হলে আগে একটু জায়গার প্রয়োজন। যাতে করে আমরা অন্যান্য বিদ্যালয়ের মতো ভবন পেতে পারি।

প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন জানান, বর্তমান ভবনটির অবস্থা খুবই খারাপ। ভবনের বিভিন্ন পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। বছর তিনেক আগে একবার মেরামত করা হলেও এখন অবস্থা আরও খারাপ। ২০১৮ সালে একটি টিনশেড ঘর তোলা হলেও সেখানে রোদের সময় বাচ্চারা থাকতে পারে না। তাই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়ও এখানেই ক্লাস নেওয়া হয়। আমাদের মূলত যে জায়গাটুকু দরকার তা এখানে নেই। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে। খেলার মাঠ নেই, ওদের চলাফেরার জন্য আঙিনা নেই। কোনো অনুষ্ঠান করতে পারি না। সবমিলিয়ে একটা হযবরল অবস্থায় আছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, বিদ্যালয়টির সার্বিক বিষয়ের ওপর নজর দিয়ে যেন সকল সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কাজী সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে দুই দিন পরেই প্রধান শিক্ষকদের সাথে মাসিক মিটিং আছে। সেখানে আমি তাদের সাথে কথা বলে বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেব। শুধু এটাই নয়, ঝুঁকিপূর্ণ যে সকল ভবন আছে তার একটা তালিকা তৈরি করে যত দ্রুত, যেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব, আমি প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করবো।

 
Electronic Paper