ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সরকার পতনে গা ঢাকা দিয়েছে কুবির ২ কর্মকর্তা

হাছিবুল ইসলাম সবুজ, কুবি
🕐 ৫:২৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪

সরকার পতনে গা ঢাকা দিয়েছে কুবির ২ কর্মকর্তা

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর গা ঢাকা দিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার দপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জাকির হোসাইন এবং সেকশন অফিসার ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল ইসলাম মাজেদ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে অনুমতি না নিয়ে টানা ৩৯ দিন চাকরিতে অনুপস্থিত আছে কুবির এ দুই কর্মকর্তা। তবে কি কারণে তারা কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত রয়েছেন সেটা জানে না প্রশাসন। অনুপস্থিতির কারণও অবগত করেনি বলে অভিযোগ করেছে প্রশাসন।

সরকারি কর্মচারী (নিয়মিত উপস্থিতি) বিধিমালা, ২০১৯’-এ বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো সরকারি কর্মচারী নিজ কাজে অনুপস্থিত থাকতে পারবে না। এ বিধান লঙ্ঘন করলে কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দিয়ে প্রতিদিনের অনুপস্থিতির জন্য এক দিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ কাটতে পারবে। এছাড়া, কোনো সরকারি কর্মচারী ৩০ দিনের মধ্যে এ অপরাধ (বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিতি) একাধিকবার করলে কর্তৃপক্ষ কর্মচারীর সর্বোচ্চ সাত দিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ কাটতে পারবে। তবে জাকির ও মাজেদের বিরুদ্ধে এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়নি কুবি প্রশাসন।

এদের দুইজনের বিরুদ্ধেই রয়েছে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ। নথি জালিয়াতি, একাধিক শিক্ষককে মারতে তেড়ে যাওয়া, সহকর্মী ও কর্মচারীদের সাথে অসদাচরণ, হেনস্তা ও গালমন্দ, জামাত-শিবির ট্যাগ লাগিয়ে হয়রানি, বিভিন্ন নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্যের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ উপাচার্যের কক্ষে শিক্ষকদের থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে এই কর্মকর্তা। এতসব অভিযোগ থাকার পরও বহাল তবিয়তে ছিলেন তিনি। সর্বশেষ গত ৫ জুন ৯৫ তম সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষকদের উপর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের তাকে ওএসডি (যাদের বেতন ভাতা সবই আছে, কিন্তু বসার স্থান নাই, দায়িত্ব নাই, কাজ নাই, নাই কোন গুরুত্ব) করা হয়।

অন্যদিকে রেজাউল ইসলাম মাজেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী। ২০১৬ সালের ১ আগস্ট ছাত্রলীগের আন্তঃকোন্দলে নিহত হন খালেদ সাইফুল্লাহ। ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর সেকশন অফিসার হিসেবে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তার নিয়োগে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় নোট অব ডিসেন্ট দেন এক সিন্ডিকেট সদস্য। তবুও তাঁকে নিয়োগ দেন তৎকালীন উপাচার্য আবদুল মঈন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নিজ দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীকে মারধর, বিভিন্ন সংগঠনের কাজে হস্তক্ষেপ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষকদের কটুক্তি, টেন্ডারবাজি, উপাচার্যের গাড়ি রোধসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।

কেন তারা অনুপস্থিত রয়েছেন জানতে জাকির ও মাজেদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাদেরকে পাওয়া যায়নি।

রেজিস্ট্রার মো. মুজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, তারা ছুটিও নেয়নি এবং আমাদেরকে অবহিতও করেনি। এটা তারা করতে পারে না। আমি এই মাস থেকে ওদের বেতন বন্ধ করে দেওয়ার জন্য অর্থ দপ্তরে কথা বলবো। জাকির আমাকে জানিয়েছে সে অসুস্থ কিন্তু সে অফিসিয়ালি ছুটি নেয়নি। তাঁর ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যোগদান করার সময় তাঁরা অবশ্যই বৈধ কারণ উল্লেখ করতে হবে। যদি বৈধ কোন কারণ উল্লেখ করতে না পারে তাহলে আমরা শোকজ, বিভাগীয় মামলাসহ পরবর্তী ব্যবস্থা নিব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনকৃত অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাকির ছায়াদউল্লাহ খান বলেন, এ ব্যাপারে আমি রেজিস্ট্রারের সাথে কথা বলেছি। ওরা অনুপস্থিতির ব্যাপারে আমাদেরকে জানাইনি। এখন যা কিছু হবে আমরা অফিসিয়াল প্রক্রিয়ায় আগাবো। আমার দায়িত্ব সীমিত। আমি কোন ব্যবস্থা নিতে পারবো না। কিন্তু আমি কি করতে পারবো আমি নোট করতে পারবো। এরপর উপাচার্য আসলে উপাচার্য ব্যবস্থা নিবে।

 
Electronic Paper