ঢাকা, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪ | ১ কার্তিক ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ছাত্র আন্দোলনে শহিদ সবুজ পাশ করেছে এইচএসসি

মহিউদ্দিন সোহেল, শেরপুর
🕐 ৮:৪৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৫, ২০২৪

ছাত্র আন্দোলনে শহিদ সবুজ পাশ করেছে এইচএসসি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সবুজ মিয়া এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার এইচএসসির প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায় শ্রীবরদী সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে সবুজ জিপিএ-৪.৩৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

শহিদ সবুজের এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্যের খবরে পরিবার, শিক্ষক ও সহপাঠীদের মাঝে আনন্দের পরিবর্তে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শহীদ সবুজ মিয়া শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়নের রুপারপাড়া গ্রামের আজহার আলীর ছেলে।গত ৪ আগস্ট শেরপুর জেলা শহরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে শহিদ হন সবুজ মিয়া।

সবুজের মা শমেজা খাতুন বলেন, আমার ছেলে আজ বেঁচে থাকলে রেজাল্টটা নিয়ে আমার কাছে আসতো সবার আগে। সবাইকে খুশিতে মিষ্টি খাওয়াতো। আজ আমার ছেলে না থাকায় সবকিছু অন্ধকার। ছেলে মারা যাওয়ার পর থেকে আমার ঘুম নেই। সারাক্ষণ টেনশনে মাথা ব্যথা করে। সবুজ আমাদের গোবরে পদ্ম ফুল ছিল, এলাকার সবার সঙ্গে ও খুব ভালো ব্যবহার করতো। প্রতিদিন কবিতা লিখে ও আমাকে শোনাতো। এখন আর কেও আমাকে কবিতা শুনায় না। আমার ছেলে পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল, ওর কবি হওয়ার ইচ্ছা ছিল। আমার ছেলেকে যারা গুলি করে মারছে আমি তাদের বিচার চাই।

সবুজের মা রেজাল্টের কার্ড নিয়ে ঘুরছেন। এ দিকে সবুজের অসুস্থ বাবা সবুজের অপেক্ষায় বাড়ির সামনে পথ চেয়ে বসে আছেন।

সবুজের সঙ্গে আন্দোলনে যাওয়া শিক্ষার্থী মমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা একসঙ্গে আমাদের গ্রাম থেকে আন্দোলনে যাই । সবুজ দুষ্কৃতিকারীদের গুলিতে মারা যায়। আজ ওর রেজাল্ট হয়েছে কিন্তু সবুজ বেঁচে নেই, এটা আমার জন্য খুবই কষ্টের। আজ সবুজ বেঁচে থাকলে সবাইকে নিয়ে আনন্দ করতো। আমার আমাদের গ্রামের একজন মেধাবী ভাইকে হারিয়েছি। খুব খারাপ লাগছে, এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালে সবুজ মারা গেছে। আমরা সবুজের হত্যাকারীদের বিচার চাই, খুব দ্রুত যাতে সবুজ হত্যার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।

শ্রীবরদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এ.কে.এম আলিফ উল্লাহ আহসান বলেন, সবুজ অনেক ভালো ছেলে ছিল, আমাদের সঙ্গে সবসময় ওর যোগাযোগ ছিল। খুব দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার বাবা অসুস্থ, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল সবুজ। এলাকার একটি ফার্মেসিতে ছোট থেকেই কাজ করে পরিবার চালাত। ছাত্র আন্দোলনে সবুজ মারা যাওয়াতে পরিবারে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আমরা আমাদের কলেজের পক্ষ থেকে সবুজের পরিবারকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। সবুজ আমাদের গর্ব। অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে, কিন্তু সবুজ বেঁচে নেই। সবুজের এই মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আজ সবুজ বেঁচে থাকলে রেজাল্ট দেখে তার পরিবার অনেক খুশি হতো।

সবুজের মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে শেরপুর পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত চলছে, তদন্ত চলাকালীন এই বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।
খোলা কাগজ/এমএস

 
Electronic Paper