ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১ আশ্বিন ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

তুলির আঁচড়ে বিপ্লবের সাজে চবি ক্যাম্পাস

সৈয়ব আহমেদ সিয়াম, চবি
🕐 ২:৪৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৭, ২০২৪

তুলির আঁচড়ে বিপ্লবের সাজে চবি ক্যাম্পাস

বসন্ত এসেছে বাংলায়। এ বসন্ত স্বাধীনতার। এ বসন্ত ছাত্র-জনতার। বিপ্লবী বসন্তের রঙ তুলির আঁচড়ে সাজ-সজ্জায় সজ্জিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি দেওয়াল ও রাস্তাঘাট। শিক্ষার্থীদের স্বাধীন ক্যাম্পাসে বরণ করে নিতেই এতসব আয়োজন। ৫ অগাস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে দেওয়াল লিখন ও গ্রাফিতির কাজ। এতে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নান্দনিক কাটাপাহাড় রোড থেকে শুরু করে শহীদ মিনার পর্যন্ত আলপনায় রাঙানো হয়েছে পুরো সড়ক। এছাড়াও জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে আলাওল হল পর্যন্ত এবং প্রতিটি হলের দেওয়ালে গ্রাফিতি করা হয়েছে। মুছে দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক সংগঠনের বিভিন্ন লেখা।

তাদের এই লেখনীর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশের কথা। তাদের প্রতিটি লেখা যেন এক একটি প্রতিবাদী কন্ঠস্বর। পরবর্তী প্রজন্মকে জানানো এবং অন্যায় দেখলেই যেন আওয়াজ তোলা হয় এই উদ্দেশ্যে তাদের এই লেখনী।

ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের ২০২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা স্বৈরাচারের চিহ্ন মুছে ক্যাম্পাসে শহিদদের আত্মত্যাগ ও বিপ্লবের স্মৃতি সংবলিত গ্রাফিতি করেছি। তবে, বিপ্লবকালীন সময়ে খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে দেয়ালে করা স্প্রে গুলো রেখে দিচ্ছি আমরা। চারুকলার ভাইবোনেরা আল্পনা তৈরিতে যথেষ্ট সময় দিয়েছেন আমাদের সাথে।’

শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী লাকী আক্তার বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান পূর্ববর্তী সময়ে ক্যাম্পাসের দেয়ালগুলো সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের লেখাজোঁকায় পূর্ণ ছিলো। ওদের সব স্লোগান আমাদের মনে ঘৃণা তৈরি করতো। খুনি-রক্তপিপাসুদের চিহ্ন মুছে দিয়ে বিপ্লব আর শহিদের স্মৃতিচিহ্নে সাজানো হচ্ছে আমার ক্যাম্পাস। আল্পনা, গ্রাফিতি আর ক্যালিগ্রাফিতে সুন্দর হয়ে উঠেছে দেয়ালগুলো। এমন স্বাধীনতা সত্যিই স্বপ্নের মতো।’

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী সৈয়ব আহমেদ সিয়াম বলেন, ‘পরাধীনতার শেকল ছিঁড়ে আমরা চব্বিশে স্বাধীনতার নতুন সূর্য পেয়েছি। সত্য আর সুন্দরের কথা বলতে আমাদের আর বাধা নাই। আমরা বাংলা, ইংরেজি, আরবি সব ভাষায় গ্রাফিতি করার অধিকার রাখি। স্বাধীনতা আর অধিকারের স্লোগানে স্লোগানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালগুলো ভরিয়ে দিয়েছি আমরা। তারপর, ‘চবিয়ান দ্বীনি পরিবার’ প্লাটফর্ম থেকে আমরা ভাবলাম, বাংলা আর ইংরেজির মতো আরবিতেও কিছু ক্যালিওগ্রাফি থাকুক এই ক্যাম্পাসে। যেই ভাবা, সেই কাজ। আমরা শাহজালাল হলের দেয়াল রাঙিয়ে দিলাম আরবি ক্যালিওগ্রাফির রঙে। অনেকেই ছবি তুলে পোস্ট করতেছেন এখন। এই তো স্বাধীনতা। সবাই বলতে পারছে, আঁকতে পারছে।’

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২১ সেশনের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বিপ্লবের চিহ্ন রাখতে অনেক গ্রাফিতি করেছি আমরা। চারুকলার ভাইবোনেরা সুন্দর সব আল্পনা করেছেন। তো এই ক্যাম্পাসে তো আরবি, ইসলামিক স্টাডিজ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি এসব ডিপার্টমেন্টও আছে। চব্বিশে তারুণ্যের এই বিজয়ে সবার অংশগ্রহণ রয়েছে। সবার চিহ্নই ফুটে উঠুক ক্যাম্পাসে। এই আশা নিয়ে শাহজালাল হলের দেয়ালে আমরা আরবি ক্যালিওগ্রাফি করেছি।’

সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল রানা জানান, ‘এ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা যেন নতুন করে জীবন ফিরে পেয়েছি। ক্যাম্পাস ও নতুন সাজে সজ্জিত হচ্ছে। স্বাধীনতার স্বাদ যে এত সুমধুর আগে জানতাম না। আমাদের সকলের উচিত এই স্বাধীনতা আঁকড়ে ধরা।’

 
Electronic Paper