ঢাকা, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪ | ২১ আশ্বিন ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শখের শাড়িতেও অনিহা!

ইয়ান্তী দাস
🕐 ২:০৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৭, ২০২৪

শখের শাড়িতেও অনিহা!

শাড়ি পড়া কতই না ঝামেলা? অনেকের শাড়ি পড়তেই ঘণ্টার পর ঘন্টা লাগে। আবার এত্তো গরম! দুই অক্ষরের খুবই পরিচিত শব্দটি দিন কে দিন শাড়ি অবহেলিত হয়ে পড়ছে। বর্তমানে যুগের তরুণীদের কাছে আরো বেশি। পহেলা বৈশাখ, বিয়ে কিংবা বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া শাড়ি পড়তে দেখা যায় না। এইযে এইটা দেখ, একটি সারারা কিনেছি বিয়েতে পড়ার জন্য, কেমন হয়েছে বল তো? এমন কথা বলেনি বা শুনেনি এমন নারী পাওয়া যেমন দূর্লভ তেমনি হালে শাড়ি পড়া, আঁচল দেয়া, কুঁচি দিতেও তেমন আর দেখা যায় না। যদি কেউ একজন দর্জির কাছে সালোয়াড় কামিজ আর শাড়ির ব্লাউজ পেটিকোটের অর্ডারের অনুপাত দেখতে যান তাহলে বিষয়টা সহজে অনুমান করতে পারবেন।

আমার ছোট বেলার প্রথম শাড়ির অভিজ্ঞতার কথা কিছুটা মনে আছে। প্রথম শাড়ি ছিল গামছা বা ওড়না। মাঝে মাঝে ভাবি বর্তমান যুগের বাচ্চারা কি শাড়ির আঁচলে মুখ লুকাতে জানে? তপ্ত দুপুরে মায়ের আঁচলের ভাজে শ্বাস নিতে জানে? স্নান শেষে বাড়ির ছাদে ভেজা চুলের সাথে আাচলটাকে কখনো উড়তে দেখেছে? জ্যোৎস্না রাতে জোনাকি বসতে দেখেছে? ‘এই মেয়ে তৃমি শাড়ি পড়েছো কেন? কেমন বুড়ি বুড়ি লাগছে। মা পড়ে জিন্স, মেয়ে পড়ে শাড়ি এত খ্যাত হইসে মেয়েটা!’ শড়ি পড়া একটি অপরাধের নাম। একটি লজ্জার নাম। কারণ ছাড়া শাড়ি পড়া যেন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ‘কেন পড় এসব? পেট দেখা যায়! পিঠ বের হয়ে থাকে! কী নোংরা রুচি! সেফটি পিন লাগা!’

কেন পড়ি শাড়ি? কারণ শাড়ি পড়লে নিজেকে নিরাপদ লাগে। নিজের শরীরকে ভালোলাগে। শাড়ি শুধু পোষাক নয়, দেহের লজ্জাও নিবারণ করে। এজন্য পড়ি শাড়ি। নিজের দেহকে আর সমাজের দশ জনের থেকে লুকানোর মানসিক চাপ নিতে হয় না। কোনো কাটাকাটি নেই, কোনো অতিরঞ্জনতা নেই, কোনো আরটিকুলেশন নেই। কারো মর্জিমত শাড়ি চলে না, এটাই পছন্দের একমাত্র কারণ। কাপড়কে ছিড়ে কেঁটে, সুতার শেকল পড়ানো হয় না, সেখানে কোনো সাইজ মার্ক নেই, সেখানে কোনো ধনী গরিব নেই। সব শাড়ির দৈর্ঘ্য এক, মাহাত্ম এক, জামদানি আর সুতি উভয়ই এক আলমাড়ির নিচে থাকে। ঠিক যেন প্রজাপতির পাখার রং এর মতো। সেখানে একটি স্বাধীনতা আছে, নিজস্বতা আছে, একটি ‘কাপড়’ হিসেবে তার পরিচয় আছে।

সর্বোপরি, এটি বিশুদ্ধতা আছে। এই আত্মপরিচয়, আত্মবিশ্বাস, আত্মপ্রেমই চাই আমরা। তবে শাড়ি নিয়ে কেন এত অবহেলা, উদাসীনতা, সমালচনা হয়। পড়েই দেখ না একটি জামদানি! ইচ্ছে হবে আকাশে আচলটি উড়িয়ে দিতে, বৃষ্টির পানির সাথে শাড়িকে একাত্ম হতে! তবে পরিবারের শেষ শাড়ি পড়া প্রজন্মের সাথে ইচ্ছেগুলোও একদিন কবরে চলে যাবে। স্মৃতির সাথে শাড়িতেও শ্যাওলা পড়ে যাবে। ব্লাইজ, পেটিকোটে ধুলার অংশ হয়ে গেছে। শাড়ির রং, নকশা, উদ্দীপনা, সংস্কৃতি সবটাই কেবল ‘স্মৃতিটুকুই’!

লেখক: শিক্ষর্থী, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়

 

 
Electronic Paper