ঢাকা, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪ | ২১ আষাঢ় ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কোটা বাতিলের আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা কোটা বিরোধীদের

অনলাইন ডেস্ক
🕐 ৭:২৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ০২, ২০২৪

কোটা বাতিলের আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা কোটা বিরোধীদের

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল হওয়া পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ফের আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। আগামীকাল বুধবার দুপুর আড়াইটায় তারা আবার সড়কে নামবে। এবার তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান নেবেন। আগামীকালও অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিকেল পৌনে ৫টায় শাহবাগ অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।

এর আগে পদযাত্রা বের করে হলপাড়া ঘুরে নীলক্ষেত-নিউমার্কেট, সায়েন্সল্যাব হয়ে শাহবাগ মোড়ে যায়। বিকাল পৌনে ৪টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে। অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করেই স্লোগান তোলে গগনবিদারী কণ্ঠে। এরপর কোটা না মেধা, মেধা মেধা, আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম, আঠারোর পরিপত্র, পুনর্বহাল করতে হবে, কোটাপ্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক, সারা বাংলায় খবর দে, কোটাপ্রথার কবর দে, আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই, জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে ইত্যাদি স্লোগান ধরেন সম্মিলিত কণ্ঠে।

শাহবাগ মোড়ে এক ঘণ্টা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের পর বিকেল পৌনে ৫টার দিকে সড়ক অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা। এরপর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা চারটি দাবি উত্থাপন করেন ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে। ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, এটা বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন। আমাদের সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের যে ঘোষণাপত্র আছে সেখানে তিনটি মূলনীতি উল্লেখ আছে সাম্য, সামাজিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার। কোটা পদ্ধতি আমাদের এই তিনটি মূলনীতির বিরুদ্ধে। আমরা আমাদের সংবিধানের এই তিনটি মূলনীতি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করছি।

তৌহিদুল সিয়াম নামে ক্ষুব্ধ এক শিক্ষার্থী বলেন, কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে যারা দিনের পর দিন পড়ালেখা করছে তাদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে। আমরা এই বৈষম্যমূলক প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। অতি দ্রুত আমরা একটি সংগঠন দাঁড় করাব।

স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা বহাল রাখাকে বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আল মামুন বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সূর্যসন্তান। তাদের আমরা শ্রদ্ধা করি। তবে কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে আমাদের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। কোটা পদ্ধতি থাকলে আমার মতো সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের মেধার মূল্যায়ন পাবে না।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়। কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানায় আন্দোলনকারীরা। একপর্যায়ে ৪ অক্টোবর কোটা বাতিল বিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এর মাধ্যমে ৪৬ বছর ধরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যে কোটাব্যবস্থা ছিল, তা বাতিল হয়ে যায়। ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের রায়ে গত ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশটি অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছেন।

 
Electronic Paper