ঢাকা, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শেখ হাসিনা একজন সাইকোপ্যাথ: টাইমকে নাহিদ

অনলাইন ডেস্ক
🕐 ৪:১৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪

শেখ হাসিনা একজন সাইকোপ্যাথ: টাইমকে নাহিদ

শেখ হাসিনা একজন রক্তচোষা ও সাইকোপ্যাথ (মানসিকভাবে অসুস্থ) বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত মার্কিন সাময়িকী টাইমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

চলতি সেপ্টেম্বরে এক রোববার সন্ধ্যায় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে টাইমকে সাক্ষাৎকার দেন নাহিদ। কাঠের প্যানেলে সাজানো কক্ষে অভিজাত এক কালো চামড়ার চেয়ারে বসে শান্ত কণ্ঠে টাইমকে তিনি বললেন, হাসিনা রক্তচোষা ও সাইকোপ্যাথ (মানসিকভাবে অসুস্থ)।

খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। নাহিদ ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার এড়াতে গাঢাকা দিতেও বাধ্য হন তিনি। বর্তমানে তিনি আইসিটি ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী (উপদেষ্টা)।

গত জুন মাসে মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাত্রের সঙ্গে নাহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে যান। সেখানে প্ল্যাকার্ড হাতে ছাত্র রাস্তায় নামার আহ্বান জানান। এর আগেই হাইকোর্ট বিতর্কিত কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করেন। এর মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখা মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থায় বিশেষ সুবিধা রাখা হয়। বিপরীতে নাহিদ ও তার সহযোদ্ধারা সবার জন্য ন্যায্য সুযোগ দাবি করেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, কোটাব্যবস্থা নিয়ে প্রথম দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ২০১৮ সালে। তখন সরকার শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে গেলে বিক্ষোভের সমাপ্তি ঘটে। এ বছরও সরকার পিছিয়ে গেলে কোটাব্যবস্থা নিয়ে বিক্ষোভ-আন্দোলন শেষ হয়ে যেতে পারত।

তবে নিরাপত্তা বাহিনী কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালাতে শুরু করে। ১৬ জুলাই আবু সাঈদ নামের এক ছাত্রনেতা নিহত হন। পুলিশের সামনে দুই হাত প্রসারিত করে বুক টান করে দাঁড়ালে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মারা মান।

নাহিদ বলেন, সেই হত্যাকাণ্ড আন্দোলনের জন্য গেমচেঞ্জিং মুহূর্তে পরিণত হয়। ছাত্র আন্দোলন দ্রুত দেশজুড়ে জনসংখ্যার একটি বড় অংশের সমর্থন পায়। এ আন্দোলন দেশের মানুষকে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার, ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং ক্রমবর্ধমান স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে তাদের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ প্রকাশ করার একটি সুযোগ করে দেয়। দ্রুতই আন্দোলনকারীদের দৃষ্টি পড়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। ৩ আগস্ট ছাত্ররা তার পদত্যাগের এক দফা দাবি তোলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে সেই দাবির ঘোষণা দেন নাহিদ ইসলাম।

৫ আগস্ট লাখো ছাত্র-জনতা ঢাকায় শেখ হাসিনার বাসভবনের দিকে যাত্রা শুরু করলে তিনি হেলিকপ্টারে পাশের দেশ ভারতে পালিয়ে যান। তিনি এখনো সে দেশেই নির্বাসিত রয়েছেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘কেউ ভাবেনি তার (শেখ হাসিনার) উৎখাত হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখন নাহিদ ইসলামের চেয়ে বড় পদে আছেন। তাদের মধ্যে কে কার কাছ থেকে আদেশ নিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, ‘মুহাম্মদ ইউনূস সব বড় সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করেন।’

মন্ত্রণালয়ে নিজের টেবিলে একটি লাল ল্যান্ডলাইনের দিকে দেখিয়ে নাহিদ বলেন, ভিআইপি ফোন। এটি কী জন্য ব্যবহার করা উচিত, আমি জানি না। আমি মুহাম্মদ ইউনূসকে হোয়াটসঅ্যাপে টেক্সট করি।

আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার এড়াতে এক বন্ধুর বাসায় লুকিয়ে ছিলেন নাহিদ। এক রাতে সাদা পোশাকে প্রায় ৩০ জন গোয়েন্দা কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত হন। নাহিদ বলেন, তাদের মাথায় কালো কাপড় পরিয়ে দেওয়া হয়। পরে বলা হয়, পৃথিবী আর কোনো দিন তোমাদের দেখতে পাবে না।

নাহিদের বিশ্বাস, গোপন কারাগারে তাকে রাখা হয়েছিল। তাকে পেটানো হয়। তার মনে হচ্ছিল, লোহার রড দিয়ে পেটানো হয়েছিল। হাতে-পায়ে পেটানোর দাগও ছিল। ব্যথা, যন্ত্রণাদায়ক শব্দ এবং উজ্জ্বল আলোর তীব্রতায় তার মাথা ঘোরাচ্ছিল; তিনি মাঝে মাঝেই অচেতন হয়ে যাচ্ছিলেন ওই সময়।

নাহিদ বলেন, কর্মকর্তারা জানতে চাচ্ছিলেন, ‘মাস্টারমাইন্ড কে? টাকা কোত্থেকে আসছে? তুলে নেওয়ার একদিন পর নিজেকে একটি ব্রিজের পাশে আবিষ্কার করি। গোয়েন্দা বাহিনী কেবল পরিচিত মুখদের, বিশেষ করে আমাদের আন্দোলনের নেতার খোঁজ করছিল। তবে আমরা শুধু একজন ছিলাম না। এটিই ছিল আমাদের প্রধান শক্তি।

নাহিদকে দেখেই মনে হচ্ছে, বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। আন্দোলনে নেতৃত্ব ছিল দলগত- এমনটি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম সবসময় একটি মুখ খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু আমি একাই এ আন্দোলনের নেতা নই। আমরা অনেকেই ছিলাম।’

 

 
Electronic Paper