জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহিদ পারভেজের বাবা এখনো তার সন্তানের কবর চিহ্নিত করতে পারেননি। এমনকি মৃত্যুর সঠিক তারিখও নিশ্চিতভাবে জানেন না। তবে শুনেছেন, তার একমাত্র সন্তান পারভেজকে শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। ছেলের লাশ খুঁজতে গিয়ে চাকরি হারাতে হয়েছে তাকে। এখন তিনি ছোট্ট এক টং দোকানে চা বিক্রি করে সংসার চালান।
পারভেজ ছোটবেলা থেকেই মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত ছিলেন। বাবার সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তার মা অন্যত্র বিয়ে করেন। দাদির স্নেহেই বড় হয়েছেন পারভেজ। কিন্তু সেই দাদিই আজ কাঁদতে কাঁদতে নিঃস্ব হয়ে গেছেন নাতির শোকে।
পারভেজের বাবা মো. সবুজ বেপারী খোলা কাগজকে বলেন, আমি লঞ্চে সামান্য বেতনে চাকরি করতাম। কিন্তু পারভেজের লাশ খুঁজতে গিয়ে এবং শহিদ হওয়ার পর যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করতে গিয়ে চাকরিতে সময় দিতে পারিনি। ফলে চাকরি হারিয়েছি। এখন আমি বেকার।
তার সংসারে বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও তিন মেয়ে। বড় মেয়ে নুপুরের বিয়ে হয়ে গেছে। মেজো মেয়ে ঝুমুর কলেজে পড়ে আর ছোট মেয়ে খাদিজা সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। সংসার চালানোর উপায় না থাকায় তিনি বাড়ির পাশে ছোট্ট এক টং দোকানে চা বিক্রি করে কোনোরকমে দিন পার করছেন।
সবুজ বেপারী জানান, জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ৫ লাখ টাকা সাহায্য পেয়েছিলেন। সেই টাকা দিয়ে বড় মেয়ে নুপুরের বিয়ের খরচ মেটান, পুরোনো ঋণ শোধ করেন এবং পারভেজের নিখোঁজ হওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি ও যাতায়াতে ব্যয় করেন।
১৯ জুলাই তিনি জানতে পারেন, তার ছেলে পারভেজ নিখোঁজ। ছেলের খোঁজ নিতে ঢাকায় ছুটে যান। ২১ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে জানতে পারেন, আটটি লাশ আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামকে হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপর সেখান থেকে শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে গেলে তাকে জানানো হয়, তার ছেলেকে সেখানেই দাফন করা হয়েছে।
কিন্তু কবরস্থানের লোকজন নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি, কোনটি তার ছেলের কবর। “আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই। সর্বোচ্চ শাস্তি—ফাঁসি চাই।” বলেন সবুজ বেপারী।
পারভেজের দাদি মাফিয়া বেগম (৭০) নাতির স্মৃতি ভুলতে পারছেন না। তিনি কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা যান। “আমার নাতিরে মাইরা লাইছে, আমি হেগো ফাঁসি চাই।”—এটাই তার শেষ আর্তনাদ।
কেকে/এএম