কুমিল্লার লাকসামে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার ৫ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে।
সোমবার (১৭ মার্চ) বিকালে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না আক্তারের আদালতে এ জবানবন্দি দেওয়া হয়। এছাড়াও একই আদালতে নির্যাতিত ওই নারী ঘটনার বিষয়ে জবানবন্দি দিয়েছে।
রাতে আসামিদের জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও লাকসাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আনোয়ার হোসেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃত ৫ আসামির মধ্যে মোহাম্মদ আলী ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক মো. মাসুদ ওই নারীকে পৃথক দুটি স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করে। অন্যরা ধর্ষণে সহায়তা করেছে বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য, ভুক্তভোগী নারী ঘটনার আদ্যপ্রান্ত বর্ণনা করেছেন। তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ফরেনসিক বিভাগে ডাক্তারি পরিক্ষা করা হয়েছে, কিছু টেস্ট বাকি আছে। মঙ্গলবারের মধ্যে এগুলো শেষ হলে তাকে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হবে।
এর আগে ওই দম্পতি গত বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) তার নানা শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য লাকসামে আসেন। পরদিন (শুক্রবার) ভোরে তারা লাকসাম বাইপাস মোড় থেকে বাড়ি ফেরার জন্য সিএনজিতে ওঠেন। এ সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক মো. মাসুদ তাদের স্বামী-স্ত্রী কিনা জানতে চেয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে। একপর্যায়ে কৌশলে তাদের লাকসামের গন্ডামারা এলাকায় নিয়ে গিয়ে তাদের ব্যাগ তল্লাশি করা হয়। পরে পরিকল্পিতভাবে ওই দম্পতিকে পাশের লালমাই উপজেলার মগবাড়ি এলাকায় নিয়ে স্বামীকে জোরপূর্বক সিএনজি থেকে নামিয়ে দিয়ে তার স্ত্রীকে অপহরণ করে লাকসামে নিয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, পরে ভিকটিমকে লাকসামের পাইকপাড়া এলাকায় সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে অভিযুক্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক মো. মাসুদ ও মোহাম্মদ আলী তাকে ধর্ষণ করে। এরপর শনিবার ভিকটিমকে লাকসাম পৌর শহরের ৮ নং ওয়ার্ডের তালুকদার ভিলায় আসামিদের পরিচিত বিলকিছ আক্তার কল্পনার ভাড়া বাসায় নিয়ে আবারো তাকে দলবদ্ধ ধর্ষণ শেষে আল আমিন নামের এক যুবক তাকে একটি সিএনজিতে তুলে দেয়।
পুলিশ জানায়, শনিবার এ ঘটনায় ওই নারীর মা লাকসাম থানায় মামলা করেন। রোববার দিনভর অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন, লাকসাম উপজেলার মনোহরপুর এলাকার মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ আলী (২৫), পৌরসভার শ্রীপুর মধ্যপাড়ার মো. মমিনের ছেলে সিএনজি চালক মো. মাসুদ (২৩), একই উপজেলার বাতাখালী এলাকার আবু তাহেরের ছেলে মনির হোসেন হৃদয় (২৩), উত্তর বিনই এলাকার মৃত ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে আল আমিন (২৩) এবং মধ্য লাকসাম এলাকার মৃত মোস্তাফিজ মজুমদারের স্ত্রী বিলকিছ আক্তার কল্পনা (৪০)।
লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজনীন সুলতানা বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে কম সময়ের মধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ নিয়ে অভিযান চালিয়ে ধর্ষণে সরাসরি জড়িত ও সহযোগিতার অভিযোগে ৫ জনকে গ্রেফতার করে। এছাড়াও নির্যাতিত ওই গৃহবধূকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়।
ওসি আরো বলেন, মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার এবং তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেওয়ার কারণে দ্রুততম সময়ে মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা সম্ভব হবে।
এর আগে, ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের খবর পেয়ে সোমবার সকালে স্থানীয় লোকজন থানার সামনে বিক্ষোভ করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন গ্রেফতারকৃতদের তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানান। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে কঠোর নিরাপত্তায় তাদের আদালতে নেওয়া হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে দুপুরে লাকসাম বাইপাস সড়কে নুপুর যুব নারী কল্যাণ সমিতি, স্টুডেন্ট কমিউনিটি লাকসাম, মানবতার তরে মানবপ্রেমী, আমরা বইপ্রেমী সংঘটন, তৃতীয় লিঙ্গ, সিরাতে কারাত অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে।
কেকে/ এমএস