রেমিটেন্সে হঠাৎ বড় উল্লম্ফন
*ফেব্রুয়ারিতে বেড়েছে ৩৯ শতাংশ *এক মাসে এলো প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০২৪, ৯:২৬ এএম আপডেট: ০৭.০৩.২০২৪ ৯:২৭ এএম (ভিজিটর : ৩৭)
রেমিটেন্সে হঠাৎ বড় উল্লম্ফন ঘটেছে। সদ্য বিদায়ী মাস ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৯ শতাংশ। আর এই মাসে প্রবাসীরা ২১৬ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ আয় দেশে পাঠিয়েছেন, টাকার অংকে ২৪ হাজার কোটি টাকা। আগের মাস জানুয়ারিতে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ২১০ কোটি ডলার। ফলে জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাস ২ দিন কম হলেও প্রবাসী আয় বেশি এসেছে।
রোববার (৩ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাত প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে আসে।
অন্যদিকে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৫৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গত বছরের বেশির ভাগ সময়ে প্রবাসী আয় পরিস্থিতি খুব আশাপ্রদ না থাকলেও শেষের দিকে রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করে। গত ডিসেম্বরে দেশে প্রবাসী আয় আসে ১৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার ও নভেম্বরে ১৯৩ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে গত ২০২৩ সালে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ২ হাজার ১৯০ কোটি ডলার, যা আগের বছরে ছিল ২ হাজার ১৩০ কোটি ডলার। অর্থাৎ ২০২৩ সালে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল প্রায় ৩ শতাংশ।
এর আগে ২০২১ সালে ২ হাজার ২০৭ কোটি ডলার, ২০২০ সালে ২ হাজার ১৭৩ কোটি ডলার এবং ২০১৯ সালে ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় দেশে আসে।
প্রবাসী আয় কেনার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোয় এখন ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম ১১০ টাকা। তবে ডলার-সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো ডলারপ্রতি ১২০ টাকারও বেশি দামে প্রবাসী আয় কিনছে। এই কারণে বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়ছে। আবার দেশ থেকে পাচার করা অর্থ কেউ কেউ প্রবাসী আয় হিসেবে দেখিয়ে ফেরত আনছেন বলে মনে করছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা।
ডলারের জোগান ও চাহিদার ওপর নির্ভর করে সময়-সময় বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণ করে আসছে। এ দুটি সংগঠন মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংক-সংশ্লিষ্ট।
ডলার-সংকটের কারণে গত বছর ডলারের দাম নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বেশি দামে প্রবাসী আয় কেনা, প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়াতে অতিরিক্ত প্রণোদনা দেওয়াসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে এর পরও গত বছরের বেশির ভাগ সময় বৈধ পথে প্রবাসী আয় কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়েনি। ব্যাংকগুলো অবশ্য এখন সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি নিজেরাই সমপরিমাণ প্রণোদনা দিচ্ছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রাবাসীরা যে ২১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন তা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি এক ডলার সমান ১১০ টাকা ধরে) যা ২৩ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা।
রেমিট্যান্স বাড়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, ডলারের জোগান ও চাহিদার ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণ করে আসছে। এ দুটি সংগঠন মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংক সংশ্লিষ্ট। বৈধ পথে রেমিট্যান্স আনতে ব্যাংকগুলো অবশ্য এখন সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি নিজেরাও প্রণোদনা দিচ্ছে।
অন্যদিকে প্রবাসীদের বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে সচেতনতা বৃদ্ধি করছে ব্যাংকগুলো। এসব কারণে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসা বাড়ছে বলে জানান তারা।
২০২৩ সালের শুরু থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী রেমিট্যান্স না এলেও বছরটির শেষ দিকে ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ২০২৩ সালের পুরো সময়ে ২ হাজার ১৯০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। যা আগের বছর ২০২২ সালে ছিল ২ হাজার ১৩০ কোটি ডলার। সে হিসাবে ২০২৩ সালে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল প্রায় ৩ শতাংশ।
অন্যদিকে ২০২০ সালে হুন্ডি বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে সর্বোচ্চ সংখ্যক রেমিট্যান্স এসেছিল। বিদায়ী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২ হাজার ১৬১ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স। এটি এ যাবৎকালের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে করোনাকালীন ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল দেশে।