বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫,
৫ চৈত্র ১৪৩১
বাংলা English

বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
শিরোনাম: ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে মুজিববাদের স্থান হবে না: নাহিদ ইসলাম      দুই দিনে ৯৭০ ফিলিস্তিনির প্রাণ কাড়ল দখলদার ইসরায়েল      সমকামী প্রেমের জেরে ঘর ছেড়েছে দুই কিশোরী      সংবাদপত্রে ঈদুল ফিতরের ছুটি ৩ দিন      অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের সাজা থেকে খালাস পেলেন বাবর      চীনে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেতে যাচ্ছেন ড. ইউনূস      হামজা আমাদের মেসি হয়ে এসেছে: জামাল ভূঁইয়া      
গ্রামবাংলা
অনিয়ম ধরার ২ মাস: ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কৃষি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে
পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রকাশ: বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫, ৮:১৩ পিএম  (ভিজিটর : ২৯)
ছবি : প্রতিনিধি

ছবি : প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় নির্ধারিত প্রকল্পের ধান বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানে কৌশলে (নামবিহীন টোকেন দিয়ে) ভিন্ন প্রকল্পের তালিকায় নাম থাকা কৃষকদের মাঝে বীজ বিতরণের সময় হাতেনাতে ধরা পড়ার ২ মাস হলেও উপজেলা কৃষি অফিসার তামান্না ফেরদৌসসহ অনিয়মের সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।

বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কার্যালয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রবি মৌসুমে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ হিসেবে ধান বীজ বিতরণে অনিয়মের সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন কৃষি অফিসারসহ তার অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

জানা যায়, তেঁতুলিয়া উপজেলায় রবি মৌসুমে ২ কেজি করে বোরো (হাইব্রিড জাতের) ধানের বীজ ১ হাজার জন তালিকাভুক্ত কৃষকদের মাঝে বিতরণের জন্য জেলা কৃষি পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির গত বছরের ৩১ অক্টোবর সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়নের নীতিমালা অনুযায়ী একজন কৃষক ১ বিঘা জমির জন্য ২ কেজি বোরো ধানের বীজ সহায়তা পাবেন।

কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক অনুমোদিত ও প্রকাশিত কৃষকদের তালিকা অনুযায়ী বীজ বিতরণের পরিবর্তে প্রতি ৫ জন কৃষকের জন্য একটি করে নামবিহীন টোকেন প্রস্তুত করে বীজ বিতরণ করা হচ্ছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে সেদিন কৃষি সম্প্রসারণ অফিস চত্বরে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পান সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বিসহ গণমাধ্যমকর্মীরা।

এদিকে গত ২ জানুয়ারী বিতরণের এক পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা নির্বাচন অফিসার, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাসহ কয়েকজন এ বিতরণ কার্যক্রম পরিদর্শনের লক্ষ্যে কৃষি অফিসারের কার্যালয়ে যান।

পরে উপকারভোগী তালিকাভুক্ত কৃষকসহ সকল কর্মকর্তা মিলে বিতরণের ছবি তুলতে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন কৃষককে ধানবীজসহ দাড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ সময় তালিকা অনুযায়ী কৃষককদের নাম মেলাতে গিয়ে দেখা যায়, ধানবীজসহ উপস্থিত অনেক কৃষকদের নাম তালিকায় নেই। উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা কৃষকদের হাতে থাকা টোকেন যাচাই করে দেখতে পান, একই অর্থ বছরের আরেক প্রকল্প (রাজস্ব ফলোআপ বা প্রর্দশনী) এর তালিকা প্রাপ্ত কৃষককে এ ধান বীজ দেওয়া হয়েছে।

তিনি ব্যাখ্যা জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিস সংশ্লিষ্ট সকলে তা স্বীকার করেন এবং ফটোসেশনের জন্য অন্য প্রকল্পের কৃষককে ডেমো হিসেবে ব্যনারের সামনে দাড়িয়ে রাখা হয়েছে বলে স্বীকার করেন কৃষি অফিসারসহ তার দফতরের অন্যান্য সকলে।

ঘটনাস্থলের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ২ কেজি করে ধান বীজ যাদের দেওয়া হবে তাদের ৫ জনকে নিয়ে একটি টিম করেন কৃষি অফিস। প্রতি ৫ জনকে ১টি টোকেন দেন বলে জানান তারা। অতিথিরা বিতরণ করার সময় কৃষকদের হাতে ১ কেজি করে দুটি ধান বীজের প্যাকেট ধরিয়ে দেন এবং ফটোশেসন করলে বীজ পাওয়া কৃষকদের উপস্থিতি জানতে চায় গণমাধ্যমকর্মীরা।

এ সময় সাথে সাথে টোকেন চেক করা হলে, আমিরুল নামে এক কৃষক ২ কেজি ধান সংগ্রহের জন্য ছবি তোলার জন্য দাঁড়ান এবং বীজ সংগ্রহ করেন। পরে তার হাতে থাকা টোকেন যাছাই করে দেখা যায় তার কাছে থাকা টোকেনটি অন্য প্রকল্পের টোকেন। আর সেই প্রকল্পে কৃষকদের ৫ কেজি ধান বীজ বিতরণ করা হবে এটি কৃষি অফিস অতিথিদের অবগত করেননি। এমনকি জানানোও হয়নি। ফলে এক প্রকল্পের আড়ালে অন্য প্রকল্প বাস্তবতায়ের চেষ্টা করে কৃষি অফিস।

এ বিষয়ে কৃষক আমিরুল ইসলাম ভোলা বলেন, এই টোকেন আমাকে বিপ্লব দিয়েছে। স্যার এই ধান আমার নয়। এই ধানে ওদের। ৫ জন লোককে ধান দেবে তাই এখানে দাঁড়িয়ে দিয়েছে ছবি তোলার জন্য। ৫ কেজি ধান দেবে তাই এসেছি। আমাকে দাঁড়াতে বলল, তাই দাঁড়িয়েছি।

একটি টোকেন সংগ্রহ করা যেখানে লেখা রয়েছে, আনিছুর ৫ কেজি, চান মিয়া ৫ কেজি। অথচ খবর নিয়ে জানা যায়, ধান বীজ উত্তোলন করতে আসা ওই ব্যক্তির নাম আমিরুল হক ওরফে ভোলা। পেশায় তিনি কাঁচামাল বিক্রেতা। তিনি তার ছেলের নামে ধান বীজ তুলতে আসেন।

এ ছাড়া উপজেলার ৬ হাজার কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে গম বীজ, ভুট্টা, পেয়াজ, ধান, চিনাবাদাম ও সার বিতরণ করা হলেও ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল উপজেলা কৃষি অফিসার তামান্না ফেরদৌস ও তার দফতরের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। একাধিকবার মৌখিক ও তথ্য আইনে আবেদন করা হলেও এখন পর্যন্ত অনুমোদিত সুবিধাভোগী কৃষকদের তালিকা হস্তান্তর করেনি।

স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করেন, প্রকৃত কৃষকদের মাঝে সরকারের এই প্রণোদনা বিতরণ না করে নিজের পছন্দের মানুষদের সেগুলো বিতরণ করা হয়েছে। একই পরিবারের কয়েকজন সদস্যদের নামে তালিকা, একই ব্যক্তির নাম বারবার তালিকাভুক্ত করা এবং প্রনোদনার বীজ ও সার বিতরণ না করে বিক্রির অভিযোগও পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া উপসহকারীরা তাদের নিজস্ব দোকান থাকায় তাদের নিজেদের পছন্দের লোকের তালিকা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুল মোতালেব ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মির্জা শাহরিয়ার রাজিবসহ কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের নিজস্ব সার কীটনাশকের দোকান রয়েছে। আব্দুল মোতালেব উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা হলেও তিনি এই অফিসের প্রধান কর্তা হিসেবে দাপট দেখান। কৃষি অফিসার অফিস মা আসলেও যাবতীয় কাজ তিনি-ই করেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ হলে সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফজলে রাব্বি বলেন, সেদিনের ঘটনায় আমি অত্যন্ত বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিলাম। উপজেলা পর্যায়ে একাধিকবার সভা করে তালিকা প্রনয়নসহ সকল কার্যক্রমে সতর্কতা স্বচ্ছতা অবলম্বনের জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাসহ সকলকে একাধিকবার অনুরোধ করে ছিলাম। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ কর্তৃক ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক নির্বাচন করে অগ্রাধিকারপূর্বক খসড়া তালিকা প্রস্তুত করার পরেও তা আবারো যাচাইয়ের অনুরোধ করে ছিলাম এবং সর্বশেষ সুধী সমাবেশের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও এ ধরনের বিশৃঙ্খলা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার তামান্না ফেরদৌস বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, শতভাগ প্রকৃত কৃষকদের তালিকা করে কৃষি প্রণোদনা বিতরণ করা হচ্ছে। এখানে কোনো অনিয়মের ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আব্দুল মতিন বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। কোনো ডকুমেন্টস থাকলে জানাবেন, খতিয়ে দেখা হবে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজ শাহীন খসরু জানান, এক প্রকল্পের আড়ালে আরেক প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় হাতেনাতে ধরা খাওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই৷  প্রথম আপনার কাছে জানতে পারলাম। বিষয়টি আমি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করব। 

কেকে/এএম



মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে মুজিববাদের স্থান হবে না: নাহিদ ইসলাম
আরব বিশ্বের ক্যান্সার ইসরায়েল, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত
চুরির অভিযোগে বর্বর নির্যাতন, চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা
সিরাজগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ছাত্রদল সভাপতির মৃত্যু
ফতুল্লায় বাবার উপর প্রতিশোধ নিতে শিশু মুস্তাকিনকে হত্যা করা হয়

সর্বাধিক পঠিত

বাঞ্ছারামপুরে বাল্যবিবাহ পড়িয়ে কোটিপতি, গ্রেফতার কাজী
সমকামী প্রেমের জেরে ঘর ছেড়েছে দুই কিশোরী
নিজ বাসা থেকে মাদরাসা শিক্ষকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার
জামালপুরে মাদক মামলায় একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
গাজীপুরে পোশাক কারখানায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক অসুস্থ, কারখানা ছুটি ঘোষণা

গ্রামবাংলা- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close