প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫, ৪:২৩ পিএম (ভিজিটর : ২৭৫)
ছবি: খোলা কাগজ
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পানান বিলের পাড়ে সোনা মিয়ার জমির ওপর গ্রাডার ব্রিজ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিহাদ এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে।
অনিয়মের সত্যতা মিললে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয় হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)। পরবর্তীতে ঠিকাদার নিহাদ এন্টারপ্রাইজকে সঠিকভাবে কাজ করার জন্য বলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)।
বুধবার (১৯ মার্চ) এলাকাবাসী নির্মাণকাজে অনিয়মের প্রতিবাদ করলে বাক-বিতন্ডা ও হুমকি দেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিহাদ এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার সুজন মিয়া। পরে স্থানীয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি জানানো হলে, ঘন্টাখানেক পর হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঘটনাস্থলে এসে অভিযোগের বিষয় ঠিকাদারকে জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু তারা কোনো উত্তর দিতে না পারার কারণে কাজ বন্ধ করে দেন। পরে টাকার বিনিময়ে স্থানীয়দের সঙ্গে রফা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইউএনওর কথা অমান্য করে পুনরায় কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের পানান বিলের পাড়ে এক কোটি আট লক্ষ ৭২ হাজার ৪২৮ টাকা ব্যয়ে ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলমান। কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছে হোসেনপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। ব্রিজটি নির্মাণের টেন্ডার পেয়েছে নিহাদ এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয়রা জানায়, ২০ মিলিমিটারের বদলে ১২ মিলিমিটার, ১৫ মিলির বদলে ৮ মিলিমিটার রড ব্যবহার করা হয়। ফ্রেশ পাথর ও সিলেকশন বালু দিয়ে কাজ করার কথা থাকলেও কারচুপি করে ঢালাই দিচ্ছে নিম্নমানের পাথর ও লোকাল বালু দিয়ে। সবমিলিয়ে পুকুর চুরির মাধ্যমে এলাকাবাসীর বহু আকাঙ্ক্ষিত ব্রিজের নির্মাণ কাজ চলছে। ব্রিজটির নিচের অংশের পাইল ঢালাই কাজে রড, সিমেন্ট, পাথর পরিমাণে কম দিয়ে বালুর পরিমাণ বেশি দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নিম্ন মানের রড ব্যবহার ও ব্রিজের পাইলে রডের খাঁচা পরিমাণের চেয়েও কম দেওয়া হয়েছে। শুধু পাথর ও সিলেকশন বালু ব্যবহার করার কথা থাকলেও তারা ইটের খোয়া ও লোকাল বালু মিশিয়ে ঢালাই কাজ করছে।
ছবি: খোলা কাগজ
এ বিষয়ে নিহাদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। পরে ব্রিজ নির্মাণের দায়িত্বে থাকা সুজন মিয়ার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সুজন জানান, ‘অযৌক্তিক অভিযোগ তুলে ঝামেলা করে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল কিছু ব্যক্তি। পরে আবার তারাই ইউএনও স্যারের কাছে গিয়ে বলে আসছে কাজে কোনো অভিযোগ নেই। পরে তাদের বিশ হাজার টাকা চা-নাশতা বাবদ দিয়ে পুনরায় কাজ চালু করেছি। আমি আপনার সাথে দুই তিন দিন পরে দেখা করবো এটা নিয়ে কোনো জামেলা কইরেন না আমার সঙ্গে দেখা করেন।’
হোসেনপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পিআইও মো. ইশতিয়াক হোসাইন বলেন, ‘অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি তাই কাজ বন্ধ করে দিয়েছি ইউএনও স্যার আমাকে বলেছে যে ওনাদেরকে এই ব্রিজের বিল না দেওয়ার জন্য।’ তিনি বলেন, ঠিকাদার সুজন মিয়া আমার কাছে ভুল শিকার করেছেন- সে বলেছে, এমন আর হবে না কাজ করার সুযোগ করে দেন। তাকে কাজ করার জন্য বলা হয়নি। অভিযোগের বিষয়ে আরো তদন্ত করে আর ১ টাকাও বিল দিব না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা ইভা বলেন, এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে আমি সরেজমিন পরিদর্শন করে কাজের অনিয়ম পেয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। এখন যদি আবার কাজ শুরু করে তাহলে করুক কাজের বিল না দেওয়ার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পিআইওকে বলে দিয়েছি এবং কার কথায় কাজ শুরু করেন তা খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।