শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫,
৭ চৈত্র ১৪৩১
বাংলা English

শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫
শিরোনাম: ঈদে ঢাকায় ভোগাবে চুরি-ছিনতাই-ডাকাতি      আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন জনগণ মেনে নেবে না: জামায়াত আমির      গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৩ দিনে ৬০০ নিহত      ভিনিসিয়ুসের শেষ মুহূর্তের গোলে ব্রাজিলের রোমাঞ্চকর জয়      প্রশাসনে সমন্বয়ের অভাব, বাড়ছে ক্ষোভ-উত্তেজনা      বিএনপিতে বাড়ছে অন্তর্দ্বন্দ্ব, ঘটছে প্রাণহানি      আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে মধ্যরাতে ঢাবিতে বিক্ষোভ      
সাহিত্য
মোহাম্মদ রোমেলের কাব্যসাধনার একদিক
উদয় হাসান
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫, ১০:২৩ পিএম  (ভিজিটর : ১১৬)
মোহাম্মদ রোমেল | ছবি : খোলা কাগজ

মোহাম্মদ রোমেল | ছবি : খোলা কাগজ

কবি মোহাম্মদ রোমেলের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অধরা শহিদী মিছিল’। এই ছোট পরিসরে আমাদের চেষ্টা থাকবে টেক্সট আকারে বা একটা ডিসকোর্সের অংশ হিসেবে আমরা কী করে এটাকে পড়তে করতে পারি সেই সূত্র বা পাঠপদ্ধতি ধরিয়ে দেওয়া। নিশ্চয়ই এই কাব্যগ্রন্থটাকে বিচিত্রভাবে পড়তে পারা এবং এর অন্তর্নিহিত চিহ্নতত্ত্ব উন্মোচনের মাধ্যমে আমরা কিছু জরুরি জিজ্ঞাসা এবং চিন্তার মুখোমুখি হব। সেক্ষেত্রে আমরা শুরুর বিন্দু হিসেবে ‘আমি’ কবিতাটিকে বাছাই করেছি। আত্মতত্ত্ব বা সজ্ঞান জিজ্ঞাসা আকারে এই কবিতায় কবি ও তার কাব্যসাধনার মূল এবং উৎসের দিকগুলো খোলাসা হয়।

কবিতাটির প্রথম এলান: “আমি অর্জনহীন বাংলার ফকিরি ভাবের মধ্যেই ডুবে থাকতে চাই।” নিঃসন্দেহে ‘অধরা শহিদী মিছিল’ কাব্যগ্রন্থের ভেতর যাপিত জীবন থেকে উঠে আসা বাংলার ভাবসম্পদের পাটাতনে দাঁড়িয়ে একটা এন্টিকলোনিয়াল গণসাহিত্যের ভাব ও ভাষাকে রপ্ত, আত্মস্থ এবং বিচিত্রভাবে প্রয়োগ করবার সজ্ঞান প্রয়াস ধরা পড়ে।

ভূমিকায় কবির ইঙ্গিত, “আধুনিক সভ্যতা, প্রগতিশীলতার বাইরে আমাদের নিজেদের ইতিহাসের, ভাবের কথা আছে। এই সবকিছুই আমার নিত্য যাপন থেকে ওঠে আসা ভাষা-চিন্তা।” (মিছিল, ১২) ‘আমি’ কবিতায় এই নোক্তাটা আরো স্পষ্ট হয়, “মানবিকতা বুলির আড়ালে কতটা দানবীয় ভাবে মুছে ফেলতে চাও তুমি ভিন্ন ভিন্ন রুচি, ইতিহাস।” লিবারেল মানবতাবাদ পশ্চিমা আলোকায়ন ও উপনিবেশবাদের অন্যতম প্রধান মতাদর্শিক হাতিয়ার। অথচ এর উছিলায়/ আড়ালেই সাবঅল্টার্ন বা ইতিহাসের সীমানায় নির্বাক করে রাখা ছোট ছোট সামাজিক গোষ্ঠী প্রিকলোনিয়াল নিদর্শনকে সে ধ্বংস করে দিয়েছে। আলোকায়ন চুইয়ে আসা আধুনিক প্রগতিবাদী বয়ান তো পশ্চিমা সভ্যতার বর্ণবাদেরই নামান্তর: “প্রগ্রেস কিংবা সভ্যতার স্লোগানে তোমার চ্যাটের তলে কত কত জাতি কতল হয়েছে সেসব আমি জেনে গেছি বহু আগে/ কলোনিয়াল গোলাম আমাকে মিষ্টি কথার বুলিতে নিজের ইতিহাস, ভিন্ন ভিন্ন বাসনার সহবাস থেকে হটাতে পারবে না আর” (৯১)।
 
মোহাম্মদ রোমেল তার কবিতায় এই উপনিবেশিত গোলামের মানে মজলুমের ভাষা বা বাসনার প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। যে ‘আমি’ বা নতুন ঐতিহাসিক কর্তাসত্তা একটা নতুন দার্শনিক-রাজনৈতিক প্রস্তাবনা নিয়ে হাজির হয়েছিল নদীয়ার ভক্তি-ভাবের পরম্পরায়, পুঁজি ও উপনিবেশের ভোগদখলের বাইরে তাকে চিনতে পারার আকুতি আমরা এই কবিতায় দেখি। এর শিকড় বাংলার সাধুভাবের জমিনে কিন্তু এর যুদ্ধ বৈশ্বিক পুঁজি, সাম্রাজ্য ও উপনিবেশের বিরুদ্ধে। “আমি ডুবে থাকব বাংলার গহিনে সমগ্র বিশ্বকে ধারণ করার আকুতি নিয়া বসে থাকা দাস্যভাবে সিজদা দিয়ে/ সেবা ভিন্ন অধর্মে আমি নামাজ পড়ি না রব তোমার দাসত্ব থেকে জুদা হয়ে যেতে পারি বলে” (ঐ)। গায়েব বা নিত্য অবর্তমানতার কাছে আত্মসমর্পণ বা দাস আকারে পরমের কাছে সিজদা দেয়া মানে যে মানুষের মাঝে রুহানিয়াত আকারে দয়াল সর্বত্র বর্তমান তাকে সেবা দেওয়া—এটাই ইসলামের সর্বোচ্চ ইমান ইবাদতের ঘোষণা। এটাই ধর্ম।

কিন্তু কবি লক্ষ্য করেন, “ইয়া রব মানুষ-প্রকৃতির বিনাশ ঘটাতে/শস্যের দানায় দানায় যে বিষ আজ মুনাফাখোর ধার্মিকেরা ঢুকিয়ে দিয়েছে ‘উচ্চফলনশীল কৃষি দরকার’ স্লোগানে,/ আমার ইমান-ইবাদতের কসম,/ তোমাকে আমার কলবে উচ্ছেদের এমন আমল আমি করতে চাই না” (৯২)। মানে শস্যে বিষ মিশানোর কথাটাকে আমরা পুঁজির গ্রহবিনাশী রূপ আকারেও পড়তে পারি। এই মোটিফটা—রূপক আকারে বিষ এবং কৃষি—মোহাম্মদ রোমেলের কবিতায় বারবার ফেরে। কবি উপরের পঙক্তিতে ধরিয়ে দিচ্ছেন বিষ মেশানো এই সভ্যতা বা বিশ্বব্যবস্থা আসলে অধর্মের উচ্চফলন বৈ কিছু না। এই বিষ যা কি না পুঁজি মানুষের মাঝে, গ্রহের মাঝে মিশিয়ে দিয়েছে বাংলার ভাবসম্পদের পাটাতনে দাঁড়িয়ে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা জিহাদ ঘোষণার বাইরে আসলে সবই অধর্ম। এই যুগের পুঁজি বনাম মানুষের বৈশ্বিক লড়াইয়ে ধর্ম মাত্রই বৈপ্লবিকতা, তা পুঁজির ইতিহাসের বিপরীতে মানুষের ইতিহাস কায়েমের মামলা।
 
আমরা ‘আমি রাগীদের ভালোবাসি’ নামের আরেকটা কবিতায় লক্ষ্য করব, কবি স্বীকারোক্তি দিচ্ছেন, “ভালোবাসি জিহাদ/ নদীয়ার ফকিরি ভাবের ভক্ত আমি ভালোবাসি মজলুমের প্রতিরোধ ... শ্রেণিসংগ্রামের বিকশিত রূপ.../ ‘ভাবের জিহাদ’ তোমায় রসগোল্লার মতো ভালোবাসি” (১১৫)। এখানে ভাবের জিহাদ কথাটা গুরুত্বপূর্ণ, কবি এর মাধ্যমে বাংলার ভক্তি ও ভাবের ধর্মীয়-দার্শনিক পরম্পরায় গড়ে ওঠা মজলুমের প্রতিরোধী বয়ানকে শ্রেণিসংগ্রামের রূপ আকারে চিহ্নিত করতে পারছেন। ধর্মের বা ভাবের খোলসের ভেতর কী করে গণমানুষের লড়াইয়ের মর্মশাঁস নিহিত থাকে এবং তাকে পাঠ করতে পারাটাই বিপ্লবী রাজনীতির মূল সংগ্রাম, সেটা আমরা এঙ্গেলসের কাছ থেকে শিখেছি। ‘যুদ্ধ’ কবিতায় এই লড়াইয়ের স্বরূপ অনেকটা উন্মোচিত হয়, “তুমি নিশ্চয় টের পাও তোমার খেতের/ ফসলে যারা বিষ ঢেলে বীজের দখল নিয়েছে/ তোমার দেশও আজ তাদের দখলে।/ নিজেকে দখলমুক্ত রাখার অধিকার মানুষের অধিকার জেনে/ তোমার যুদ্ধ ছাড়া আর কী উপায় আছে বলো, মমতাজ?” (৮২)
 
পুঁজি তার সর্বগ্রাসী খাসিলতের দ্বারা, দুনিয়ার ইতিহাসকে নিজের পুঞ্জীভবন, স্ফীতি ও বিস্তারের ইতিহাসে পরিণত করে মানুষকে স্রেফ তার জৈবিক দেহে পর্যবসিত করেছে। যে দেহ কেবল পুঁজির মুনাফা হাসিলের উপায়। দেহ নিয়ে ‘শরিল’ কবিতায় কবি দেখিয়েছেন কী করে শরীরের ইতিহাসে কাম কাজ করে বা “কামহীন কাজের বাজার” মানে কারখানার “মুক্তদাস” দেহ কী করে পুঁজির দখলে চলে গেছে। কবি বলবেন “প্রেম-কাম ভিন্ন বাসনার ভিন্ন ভিন্ন শরিল”, কারখানার লোহালক্কর কিংবা ভোগপণ্য কোনটাতেই শরিলের দখল আর মানুষের হাতে নাই। তদুপরি পুঁজি প্রকৃতিকে মানুষের থেকে আলাদা করে তাকে বানায়েছে নিজের উৎপাদন ও পুনরুৎপাদনের কাঁচামাল: বীজ দখল করে বিষ মিশিয়েছে। পুঁজির আরেকটা খাসিলত হলো সে শেখায় মানুষের ইতিহাস বা তার বিবর্তন আসলে শেষ। যেই ইতিহাস জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক সভ্যতাকে একটা নিওলিবারেল সামরিক-শিল্প ও বিশ্বপুঁজিব্যবস্থার দ্বারা টিকিয়ে রাখে; যার দরুন কর্তা আকারে মানুষের মৃত্যু এবং প্ল্যানেটারি স্কেলে প্রাণবৈচিত্রের বিলোপ ঘটে গেছে।

তথাপি আল্লার ওহিতে যারা ইমান এনেছেন তারা বলবেন, পুঁজি নামক দাজ্জালের তৈরি করা ‘ব্যক্তি’ মানুষই ইতিহাসের শেষ রূপ হতে পারে না। পুঁজির ধর্ম ধর্মের চূড়ান্ত রূপ নয় বরং তা আসলে অধর্ম। পুঁজির ইতিহাস থেকে সত্যিকারের মানুষের ইতিহাস বা অধর্ম থেকে ধর্মের দিকে (পুঁজির বিনাশের দিকে) যাত্রা কেবল শ্রেণিসংগ্রামের মধ্য দিয়েই সম্ভব। এ কারণে শ্রেণিসংগ্রামের রাজনীতি এ যুগে মানুষের ইতিহাসে কর্তা হয়ে ওঠবার লড়াইও বটে। বিপ্লবী কর্তাসত্তা আকারে গঠিত হতে পারার মধ্যেই শ্রেণিসংগ্রামের সত্য নিহিত। কবি মোহাম্মদ রোমেল যুদ্ধের এই গ্লোবাল ফ্রন্ট সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল, যুদ্ধটা কেন বিষ-মেশানো বীজ দখলদারের বিরুদ্ধে তা বুঝতে আমাদের কষ্ট হয় না। আমাদের প্রতিটা ক্ষেত যেন একেকটা ছোটো ছোটো ফিলিস্তিন।

আরেক কবিতা ‘সাধু ভাবের জমিনে’ কবি বলছেন, “বহু আগেই বিষে বিষে সয়লাব আমার জমিন কানে কানে তার বেদনার কথা, নির্বিচারে প্রাণ হত্যার উৎসব কিংবা সকল শরীল বিষাক্ত হয়ে ওঠার সভ্য কাহিনী বলে দিয়েছে” (৮০)। সভ্যতার নামে বিষ মেশানোর উৎসবের বিপরীতে কবির আহ্বান “কৃষির সাথে সখ্য” গড়ার। কবি কসম কাটছেন, “ভরা পূর্ণিমায় সাধুভাবের জমিনের কসম,/ সব বুঝে শুনে প্রকৃতির হালে নিজেকে বিষহীন পরহেজগাররূপে সাজাব বলে আমি অসভ্য হয়ে মাটির কাছে তার মতো ফিরি,/ আমাদের সখা ভাবের কৃষিচর্চা আমাদের রবের মতো সহজ-সরল করে তোলে।” যে কৃষির মাধ্যমে জগতের সঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষ সবচেয়ে নিবিড়ভাবে জৈব-বৈষয়িক সম্বন্ধে লিপ্ত হয় বা মাটি ও জলের সাথে সখ্য গড়ে তোলে, সেটা আল্লার ইবাদতের সমতুল্য। তা জগতকে রুহানিয়াতের আয়াত বা হুজ্জাত আকারে ইন্দ্রিয়োপলব্ধ করবার সবচেয়ে কাঁচা উপায়।

বিষহীন কৃষি তাই রুহানি সম্ভাবনাময় মানুষের খলিফা হবার খাসিলত, সে যে পরমের অবর্তমানে কুল মাখলুক বা সৃষ্টিজগতের রব বা প্রতিপালকের গুণে গুণান্বিত তার প্রমাণ। আরো বলবেন, “ইতিহাসের খাসলত ধরে তারপরও ঠিক ঠিক আমার সখা ভাবের কৃষি স্বভাব তোমাদের বিষাক্ত ছোবল মোকাবিলা করেই/ এই ভরা পূর্ণিমায় জমিনের কাছে, কৃষির কাছে, আমার নিজের কাছে ফিরে ফিরে যাব” (ঐ)। এই পৃথিবী বা গ্রহ আমাদের আবাস। যে মানুষ বসত গড়ে, সে আবার প্রতিপালকও; মানে দুনিয়ায় সে তার রবের খলিফা। মানুষ হিসেবে প্রাণ ও প্রকৃতির মাঝে বর্তমান থাকা, তাকে নাজাত দেওয়া বা সুরক্ষা করা, মুক্ত করা, হেফাজত করা আসলে প্রতিপালকেরই গুণ। কৃষির সাথে, ভাবের সাথে সখ্য গড়বার এই রুহানিয়াত ধারণ করার অর্থই হলো খলিফার জীবন যাপন করা।
 
ফকির লালন বলেছিলেন, “নদীয়ার ভাবের কথা অধীন লালন জানে কি তা?” বাংলা অঞ্চলের মানুষের যে দার্শনিক জিজ্ঞাসা ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরম্পরা কলোনিয়াল আমলের আগে নদীয়া অঞ্চলে এসে একাকার হয়েছিল; লালন শাহ, পাঞ্জু শাহ, সতীমা, চৌধুরী আর দেলবর শাহ—এই পাঁচ ঘর মিলেই নদীয়ার ভাব। ভাব কথাটা ফকির লালনের কাছে ভিন্নভাবে অর্থবহ—ভূ থেকে ভাব কথাটার মানে ‘হয়ে ওঠা’ বা ভবন (নবরহম)। এই জ্ঞানকাণ্ড বা বাচিক সিলসিলা কলোনিয়াল গোলামির আমলে আমরা হারিয়ে ফেলেছি—আমাদের চিন্তার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শেকড়ের সাথে ছেদ ঘটেছে।

ফরাসি মনোবিশারদ জাক লাকাঁর সাথে বাগড়া দিয়ে ফ্রাঞ্জ ফানো একবার বলেছিলেন, কলোনিতে কখনো পিতার নাম থাকতে পারে না। কবি মোহাম্মদ রোমেল তার ‘শহুরে কলিজার পিচঢালা রাস্তায়’ কবিতায় বলছেন এভাবে, “বাবার ধর্ম-রীতি-নীতিরে টার্গেট কইরা/ তোমার আধুনিক বিদ্যার গুলি” (২৮)। আধুনিক কলোনিয়াল বিদ্যাকে কবি পুঁজির দোসর ভোগবিদ্যা আকারে চিনছেন, “আমি পুঁজির বাইরে অবিদ্যা ধর্ম-নীতি লইয়া থাকি/ ভোগের লালসা আমারে টলায় না”। এই যে জালিম খুনিয়ারা “বিদ্বান বিবেকবান ভোগী দুনিয়ার রক্ষাকর্তা, শাসক”, যে কিনা “ভোগরে বিদ্যা-অভোগরে অবিদ্যা” আকারে চেনে, তাদের বিরুদ্ধে কবির ঘোষণা, “কসম গায়েবের, আমি আবার, হয়তো বারবার ফিরে আসব/ তোমার ভোগের খায়েশ গায়েব করতে/ অবিদ্যা-অধরা-অভোগী ‘গায়েব’ খোদ খোদারূপে” (২৯)।
 
অধরা বা গায়েবের ধারণা মোহাম্মদ রোমেলের কবিতার আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বুননবিন্দু। ‘অধরা ভাব’ কবিতায় এটা কোরানের আয়াতে হাজির সত্যের মতো স্পষ্ট হয়ে ওঠে, “রহমত-সংযমের উৎস কিতাব মানুষ পড়ো তোমার রবের নামে/ পড়ো অক্ষর-শব্দের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা অধরা ভাব/ পড়ো অক্ষরে যা নাই সেই গায়েবের হাজিরানায় নজর রেখে” (৭৯)। এখান থেকে কিছু জরুরি নোক্তা বের করা যায়। যেমন : প্রথম পঙক্তি অনেকটা বিসমিল্লার ঘোষণার মতো, “শুরু করো দয়ার দয়ালের নামে”। কোরানের প্রথম আয়াতে যে রবের নামকে সাক্ষ্য রেখে পাঠের ঘোষণা দেয়া হয়েছে (“পড়ো তোমার রবের নামে”), তা একটা বৈপ্লবিক ঘটনা।

মোহাম্মদ রোমেল সেই পড়ার আহ্বানটাকেই ভেতর থেকে বুঝতে চেষ্টা করেছেন। যিনি লা শরিক, আবার গায়েব মানে নিত্য অবর্তমান—তার নামে মানুষকে যখন পড়তে বলা হয়েছে, মানুষকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে অক্ষর-মূর্তির বাইরে যে অধরা এবং গরহাজির তাকে পড়তে, তার সাক্ষ্য দিতে। আল্লা গায়েব বা নাই দেখেই মানুষ জগতে তার খলিফা আকারে হাজির—কোরান এই সত্য মানুষের ইতিহাসে প্রতিষ্ঠা করেছে। মানুষ এই নিত্য অবর্তমানতার সাক্ষী। যা নেই সেই নিত্য অনুপস্থিতির সাক্ষ্য দেবার ঘটনাই মোশাহাদা, মানে ইমান বিল-গাইব। কেন না অক্ষর বা মুর্তির থাকার অর্থ মানুষের রুহানি ক্ষমতা তার বাইরে সেই তাগুতে আরোপিত থাকা।

আর আল্লার বৈপ্লবিক “না-থাকার” অর্থ মানুষের তার রুহানি ক্ষমতার কর্তা এবং দুনিয়ার খলিফা আকারে, খোদার রুহের অংশ হয়ে জগতে হাজির থাকা। এই বোধটা ‘ইচ্ছার ইবাদত’ কবিতায় আরো খোলাসা হয়। সেখানে মূল সন্দর্ভ হলো: “মূর্ত দুনিয়ার বিমূর্ত ইতিহাসে প্রজ্ঞার সাধনাই ইবাদত।” মানে ইতিহাসের জন্ম খোদ ইচ্ছার ইবাদতঘরে, প্রজ্ঞার সাধনায়। এই ইবাদতে অধর্ম ঘটে কেতাবি বা অক্ষরপূজারিদের দ্বারা, যারা এখনো গায়েবের সাক্ষ্য হয়ে প্রজ্ঞা-বুদ্ধি-কল্পনা দিয়ে পড়তে শিখেনি। কবি তাদের প্রশ্ন করছেন, “তুমি কে হে কিতাবি,/ নিয়মের খড়গে তাকে [প্রজ্ঞার দয়ালকে] হত্যায় নিয়ত ক্রিয়াশীল?” অথচ, “সকল কল্পনা-ইবাদতের পাহারাদার/ প্রজ্ঞা তুমি/ মুমিনের কলবে ধর্ম হয়ে আছ” (১০০)। অক্ষরপূজারিরা এখনো কোরান পড়তে শেখেনি।

কবি ‘অক্ষর হকের কিসসা’ কবিতায় সাক্ষ্য দিচ্ছেন, অক্ষরবাদিতা বা কেতাবের মাঝে সত্য বা হক নাই। “চিহ্ন দুনিয়ার আঁকাআঁকি-বাঁকাবাঁকির ফাঁকে দোহাই তোমার/ নাই নাই তোমার হাজিরানা নাই নাই হক” (৩৭)। যারা দলিল আর বরাত দিয়ে প্রজ্ঞার দয়ালকে হত্যারত, তাদের চিনছেন কবি এভাবে: “নাফরমান গ্রন্থকীট অক্ষরপূজারি গ্রন্থকার/ তোমাকে হারিয়ে কিতাবেই খোঁজে আবার।” যে দয়াল অক্ষর-কেতাবে আছেন মানলে শিরক হয়, অথচ অক্ষরের শিরকের খবর সেই খোদা খোদ জানান অক্ষরে, “অক্ষরে হক নাই তুমি জেনেও জানাও অক্ষরে বাণী।”

আরেক কবিতা ‘লা শরিক বাসনায়’ কবি বলছেন, “ছবি-অক্ষরে তোমাকে চুমু খেয়ে খেয়ে ডুবে যাই, চলে যাই শিরকে।/ অক্ষর-ছবির বাইরে যে তুমি আড়াল হয়ে, গায়েব হয়ে, হাজির হয়ে আছ/ লা শরিকের আড়ালের গায়েব” (৬৪)। এই অক্ষরপূজারি কিসসাখানার শিরকে কবির সায় নাই, তিনি আছেন লা শরিক বাসনার গায়েবি হক আরাধনায়: “গায়েবি হক আরাধনা/ গায়েব না হোক গায়েবি ওহি থেকে ইলহাম হয়ে/ হক তোমার মধ্যে উচ্চারিত কিতাব/ তোমার হক ধারণ করে/ স্বয়ং ইহ-পর জগতের পবিত্র কিতাব হয়ে ফুটবে” (৩৮)। এই অচিহ্নের আরাধনাই ইবাদত। মানে: যেখানে মূর্তি-অক্ষর-ছবি আছে সেখানে মানুষ নাই আর যেখানে আল্লা ‘নাই’ সেখানে মানুষ আছে।

জাহেলি যুগে এটাই কোরানের সবচেয়ে বৈপ্লবিক প্রস্তাবনা। ‘আকুতি’ কবিতায় সত্য বা হক এবং মানুষের সম্বন্ধ নিয়ে একটা দুর্দান্ত নোক্তা হাজির করা হয়েছে: “মানুষের সত্য হয়ে ওঠা/ ধর্ম হয়ে ওঠার মতোই সত্য” (৪৯)। সরল ভাষায়, ধর্মের অর্থ মানুষের সত্য হয়ে ওঠা। যে মানুষ নিজে সত্য হয়ে উঠে নাই, তার মধ্যে ধর্মের সত্য অর্থ তৈরি হওয়াও সম্ভব না মানে সে কোরান পড়তে নালায়েক। সেজন্যেই কোরান মানুষের হয়ে সত্য পথ বা সিরাতুল মুস্তাকিম কামনা করে, মানুষের সত্য হয়ে ওঠা বা ধর্ম হয়ে ওঠার মানে মানুষের রুহানি সম্ভাবনাময় খলিফা হয়ে ওঠা। মুমিনের কাছে যে সত্য জগতের মাঝে আয়াত আকারে ইতোমধ্যে হাজির, সে সেই সত্যের বা গায়েবি হকের শহিদ (সাক্ষী)। তার মোশাহাদাই সত্য বা হক। ‘কোন দেশেতে থাকো তুমি সখা ইনসাফ?’ কবিতায় কবির মোনাজাত লক্ষ্য করি: “মোনাজাত পড়ি মনে মনে/ ‘সর্ব আহাজারির আহত আকুতি ধারণ করে/ তুমি; একালের ধর্ম হয়ে ওঠো।’” ধর্ম সম্বন্ধে এই বোধ মার্কস-এঙ্গেলসের ধর্মচিন্তা থেকে খুব দূরের কিছু না। (ফরহাদ মজহারের ‘মোকাবিলা’ দ্রষ্টব্য।)
 
‘মিছিল’ নামে একটি কবিতা কবি ২০১৮ সালে লিখেন, যেখানে গণঅভিপ্রায়ের গণক্ষমতায় রূপ নেবার উত্তুঙ্গ লহমায় সমাজের বিভেদের পর্দা উঠে গিয়ে হক আকারে, মানে ‘সত্য’ আকারে, গণমানুষের এক হয়ে ওঠা, কলেমা হয়ে ওঠার মাহদীয় ঘটনা ধরা পড়ে। কবির ভাষায়, “এমন মিছিলে মিছিলে জালিম ছাড়া সকল রং একাকার হয়ে যায়!” এটা অনুমান করতে সংকোচ হয় না, সূরা বাকারায় উল্লিখিত আল্লার রং বা সিবগাতুল্লাহ এই রঙের থেকে ভিন্ন কিছু না। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের সাথে একাকার এই কবিতাটি আসলে সেই অধরা গায়েবের নিশান, যা মিছিলের মাঝে সত্যের বর্তমান হয়ে ওঠার সাক্ষ্য দিচ্ছে (শহিদের এক অর্থ যে ‘সাক্ষী’ তা যেন আমরা না ভুলি)। এই অধরা হকের বর্তমান হয়ে ওঠার সাক্ষী-সাবুত খোদ মিছিলে হাজির থাকা দয়াল মাবুদ, যে দয়াল সবার আমির ভেতর অনামি হয়ে—বাতাসের মতো কি রূহের মতো ভাষারূপে—বিরাজ করে। তাই এই কবিতায় কবির এলান: “লাখো জনতার মিছিল ছাড়া কোনো সত্য নাই! যেন কলেমায়ে তৈয়ব মিছিলের মতো করে বেজে উঠে বলছে, ‘তোমরা এক! তোমরা ছাড়া জগতে কোনো সত্য নাই!’/ এমন জেগে ওঠা মজলুমের মিছিল জালিমের সকল কিছু মিছা ঘোষণা করছে! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ!” (১০৯) কবি এখানে মিছিলে এক হওয়া গণমানুষ আর আল্লাকে কলেমার মধ্যে একাকার করে পাঠ করছেন।
 
মানুষের ফিতরাত ও সিফাতের থেকে খোদার রুহানিয়াতের যে জুদা অবস্থা, তাকে একের সাক্ষী বা শহিদ আকারে রিক্লেইম করার—তার নিজের কর্তাসত্তা আকারে হাজির করে তোলার মতো ব্যাপারই ঘটে যাচ্ছে কলেমার লা ইলাহা ইল্লাল্লার মধ্য দিয়ে। ২০১৫ সালের আরেকটা কবিতায় আমরা দেখব ভাব ও ভাষায় শহিদীর ফেনোমেনা নাজিল হয়ে গেছে, “শহরজুড়ে আমিও অনেকের মতো নিজের লাশের অপেক্ষায়।/ হয়তো অপেক্ষা নয় নিজেকে স্বেচ্ছায় খুন হতে দিয়ে/ মুক্তির যুদ্ধে শহিদের কাফেলা সমাপ্তির দিকে যাবে” (৫১)। আবার গণক্ষমতা কায়েমের তীব্র আকুতি আমরা আরেক কবিতায় দেখি: “খোদার কসম/ বেদখল হয়ে যাওয়া জনতার ক্ষমতা, না দখল করে কেউ ফিরছে না” বা “কোটি কোটি শরীল/ প্রতিরোধের বুলেট হয়ে আজ মাঠে নামবে/ এক শরীল হয়ে” (৬৭)। এই এক বা তাওহিদের এলান বিপ্লবের মুহুর্তে মুর্ত হয়ে ওঠে।

কোরানের মধ্যে কলেমা আকারে যে একের বা তাওহিদের এলান এসেছে তা মূলত মানুষের নিজের সাথে নিজের রুহানি সম্ভাবনার যে অ্যালিয়েনেশন বা বিচ্যুতি সেই জুলুমের বিরুদ্ধে বা জাহেলির বিরুদ্ধে জিহাদের আহ্বান। আজকের বিশ্বে যেই লড়াইয়ের আখেরি রূপ ইনসানের বিরুদ্ধে পুঁজির লড়াই। সুযোগ থাকতে যোগ করে রাখি, ২০২৩ সালের আরেকটা কবিতা পড়ে মনে হয় যেন সেটা ঠিক ৪ঠা আগস্ট ২০২৪ ‘মার্চ টু ঢাকার’ উত্তেজনা ভেতরে ধারণ করে আছে, “আজ রাতে আমার ঘুম হবে না/ আমার আত্মা পড়ে আছে রাস্তায়/...জালিমের জুলুম গুঁড়িয়ে দিতে/ আমরা ঘুটঘুট আন্ধার রাইতে/ দলে দলে আসছি” (১২৫)। এই প্রতিরোধী আত্মা যেন-বা সবসময় রাস্তায় পড়ে থাকে আর মিছিলে মিছিলে দানা বাঁধে। এই কাব্যগ্রন্থের নাম কেন “অধরা শহিদী মিছিল” তা এতক্ষণে খোলাসা হয়ে গেছে।

মোহাম্মদ রোমেল তার কবিতায় মজলুম মনের লড়াইয়ের ভাষা ও ধর্ম নিয়ে অত্যন্ত সচেতন। মজলুমের কাছে “বেহেস্ত বাসনার অধর্মবোধের” বাইরে ধর্মের যদি কোনো অর্থ থেকে থাকে তা হলো জালিমের বিরুদ্ধে জিহাদ। কবি মজলুম মনকে কাতর না হবার নির্দেশ ‘মজলুম মন তুমি কাতর হইয়ো না’ কবিতায় এভাবে দিচ্ছেন, “মজলুম মন তুমি জপে যাও দয়াল খোদারে/ মাটিলগ্ন আরশে তার খলিফারা প্রতিরোধের উপাসনালয় হয়ে/ নিজেরাই হয়ে উঠবে ‘প্রতিরোধী দয়াল’” (২৪)। মানে খোদ মজলুম যখন প্রতিরোধী দয়ালের প্রকাশ, জুলুমের বিরুদ্ধে জিহাদই তখন একমাত্র সম্ভাব্য ইবাদত। ‘দয়াল’ কথাটাও বাংলার ভাবের জায়গা থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কোরানে আল্লার যে রূপ বা গুণটা প্রধান হয়ে উঠেছে তা হলো তার পরম করুণা ও দয়ার স্বরূপটা। মানুষে মানুষে যে সম্বন্ধ বা কথোপকথন তা টিকে থাকে এই দয়া বা করুণার মহৎ গুণে, একজন ব্যক্তি যখন অপরের হেফাজত করেন বা অপরের নাজাত ঘটান—এর মাঝেই খোদ অধরা গায়েব আল্লা মানুষের মাঝে বর্তমান হয়ে ওঠেন। সবার মুখে তাই একই জিকির—দয়াল ভরসা। দয়াল ভরসা মানে যে মানুষ নিজেই দয়ার দাতা ও গ্রহিতা তাকে ভরসা করতে পারা। এই ধারণার সঙ্গে শ্রেণিসংগ্রাম বা প্রতিরোধের আইডিয়াকে যুক্ত করছেন মোহাম্মদ রোমেল।

এ ছাড়াও তার কবিতায় মাতৃভাবের বাসনা আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ নিশান। মা হয়ে ওঠার অর্থ প্রাণের ইতিহাস হয়ে ওঠা, কবি বলছেন: “মা, আমি প্রাণের ইতিহাস মা হতে চাই।” এই মাতৃভাব নিয়ে ‘পয়দা, পরমের পরম্পরার পরম প্রাণ পয়দা’ কবিতায় আছে, “পয়দা, সে তো মাতৃভাবের বাসনার মধ্যে খোদা হয়ে জেগে ওঠার গপ্পো।” পয়দা বা প্রাণের ইতিহাস অথবা মা/আম্মা/উম্মের বাসনা আসলে উম্মতের বাসনাই। উম্মত বা বিশ্বসমাজ হয়ে ওঠার অর্থ পৃথিবী বা গ্রহ (গ্রিক গায়া) যেভাবে আমাদের ধারণ করেন মাতৃরূপে, সকল মানুষ এক হয়ে সেই মাতৃভাবাপন্ন হতে পারা। পৃথিবীর ঔরসে যে জল ও মাটি আর মানুষের গঠনে যে জল ও মাটি তা একই উৎসের। এই বোধ যে পৃথিবীর কাছে “উচ্ছেদ হয়ে থাকা প্রতিটা মখলুকাত পরম মমতায়/ আমার আশ্রয়ে নিজের মতো বাঁচে” (৭১)। পুঁজির এই অনন্ত উচ্ছেদের যুগে মাতৃভাবের বাসনা বা উম্মতের ধারণা আমাদের নতুন করে ভাবায়। ‘এতিম’ কবিতায় মোহাম্মদ রোমেল এই পুঁজিদাস জগতকে তাই “ভূ এবং ভূমি থেকে উচ্ছেদের অনন্ত এতিম জগৎ” ডাকেন।

এই লেখাটি যখন লিখিত হচ্ছে, ইজরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনে এক রাতে অন্তত ৪৩৬ জনের মৃত্যুর খবর আসছে (যার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ নারী ও শিশু)। মসজিদুল আকসা, আমাদের পুরাতন কিবলা, থেকে ক্রন্দনরত আজানের শব্দে বিশ্বজগতের বুক ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। পরিশেষে কবি মোহাম্মদ রোমেলের ‘ফিলিস্তিন’ কবিতাটায় নজর দিই। “তথাকথিত সভ্য মাতব্বর” বা পশ্চিমা সভ্যতার সাম্রাজ্যবাদীরা ফিলিস্তিনিদের “ভূমি দখলে নিতে/ যুগ যুগ ধরে উচ্ছেদ করেছে/ খুন করেই চলছে”। (১২৬) সেখানে “দখলদার খুনিরা বলে, তোমাদের দেশপ্রেমিক প্রতিরোধযোদ্ধারা সন্ত্রাসী!” সাম্রাজ্যবাদ আজকে পৃথিবীর বুকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ বা ক্রুসেডের নামে জল্লাদের মতো চেপে বসে আছে।

তথাকথিত সভ্যতা, আলোকায়ন, আধুনিকতা, মানবতাবাদ, লিবারেলিজম, গণতন্ত্র ইত্যাদি বর্গের অন্তঃসারশূণ্যতা গাঢ় হয়ে উঠছে ফিলিস্তিনের ওপর ইজরায়েলি-মার্কিন জুলুমকে ঘিরে: “ফিলিস্তিনে তথাকথিত ‘সভ্যতা’কে আমরা ন্যাংটাভাবে দেখতে পাচ্ছি!/ আহা তাহাদের ‘তথাকথিত আধুনিক সভ্যতা’! যেই সভ্যতায় দখলদার খুনি-সন্ত্রাসীরা/ তাদের আত্মরক্ষার অধিকারের কথা বলে উচ্ছেদ ও খুন চালায়!” আজকের বিশ্বে জালিমের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত মজলুমমাত্রই টেরোরিস্ট। ফিলিস্তিনিদের সংগ্রাম শুধু একটা ঐতিহাসিক ধারাবাহিক গণহত্যা আর ভূমি ডাকাতির ঘটনা না, এটা একটা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াইয়ের চিহ্ন। বিশ্বের যেখানে যেখানে এই লড়াইয়ের ধারা বেগবান হবে, সেখানেই একেকটা ফিলিস্তিন জন্মাবে। বাংলা থেকে ফিলিস্তিন মজলুমের প্রতিরোধ যুদ্ধ, তার জিহাদ জারি থাকুক। মোহাম্মদ রোমেলের শেষ আকুতি কণ্ঠে ধারণ করে ইতি নিই: “শুধু বিলাপ নয়, পৃথিবীর বিবেক বাঁচাতে/ তোমরা দখলদারদের কাছে আরো টেরোরিস্ট হয়ে ওঠো!”

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  মোহাম্মদ রোমেল   কাব্যসাধনা  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদের উপর হামলাকারী যুবলীগ ক্যাডার জসিম
গুলশানে পুলিশ প্লাজার সামনে গুলিতে নিহত ১
মর্যাদাপূর্ণ রজনি শবে কদরের তাৎপর্য ও ফজিলত
গাজীপুরে সড়ক অবরোধ, দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ
ঈদে ঢাকায় ভোগাবে চুরি-ছিনতাই-ডাকাতি

সর্বাধিক পঠিত

এসিল্যান্ড ও বনবিভাগ থামিয়ে দিলো অবৈধ বালু উত্তোলন
কাউনিয়ায় প্রয়াত ৪ সাংবাদিকের স্মরণে দোয়া ও ইফতার মাহফিল
‘পৃথিবীতে যতটুকু শান্তি ও শৃঙ্খলা বিরাজমান তা ইসলামের কারণেই’
কালিগঞ্জে বিএনপির উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল
বাগাতিপাড়ার আলোচিত সন্ত্রাসী আল আমিন কারাগারে

সাহিত্য- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close