ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলাকারী ছেংগারচর পৌর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ক্যাডার জসিম ভূইয়া এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এ ঘটনায় একাধিক মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। অথচ যুবলীগ ক্যাডার হিসেবে পরিচিত এই জসিমের ভয়েই গত জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত অজানা আতঙ্ক ছিল ছাত্র-জনতার।
ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর প্রথম কয়েকদিন সন্ত্রাসী জসিম গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও এখন প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। শুধু তাই নয়, মতলব উত্তরের শ্রীরায়ের চর বাংলা বাজার ব্রীজ ও ছেংগারচর বাজারের স্কুল রোডে ছাত্রদের উপর হামলা ঘটনায় কেউ মুখ খুললে তাদের দেখে নেয়ার হুমকি-ধমকিও দিচ্ছেন। তাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীরা।
জানা যায়, মতলব সেতু টোল প্লাজা ও নিশ্চিন্তপুর বাজার এলাকায় গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় পৌর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিম ভূইয়া ও তার ক্যাডার বাহিনী।
ছেংগারচর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান ঢালী ও পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির খান ও উপজেলা শ্রমিকলীগ নেতা শামীম প্রধানের নেতৃত্বে এই হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় অংশ নেয় সে। এ ঘটনায় শ্রীরায়ের চর ব্রীজে গুলিবিদ্ধ হয় দাউদকান্দি উপজেলার ভ্যান চালক নুরুল ইসলাম মিয়া এবং আহত হয় দুই শতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষাথী।
ভ্যান চালক গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তার স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজনের নামে দাউদকান্দি থানায় মামলা দায়ের করেন। কিন্তু সন্ত্রাসী জসিম ভূইয়া প্রকাশ্যে চলাফেরা করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অজানা কারণে তাকে গ্রেফতার করছে না।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, যুবলীগ ক্যাডার জসিম ভূইয়া সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া'র আস্থাভাজন হিসেবে এলাকায় পরিচিত।
চাঁদপুর সদরে কালীবাড়ি মোড় এলাকায় সংঘর্ষের পূর্ব মুহুর্তে জসিম ভূইয়াসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছাত্র-আন্দোলন বিরোধী নানা স্লোগান দেয়। পরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে হামলা ও গুলিবর্ষণ করেন। জেলা বিএনপির কার্যালয় এবং জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক সাহেবের বাসভবন (মুনিরা বভনে) ভাঙচুর করেন। সেখানে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে দেখা যায় আওয়ামী ক্যাডার জসিমকে।
৪ আগস্টের ওই হামলায় আহত এক শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, ওইদিন ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসী জসিম ছিল। আমার ছেলেও হামলায় আহত হয়েছে। কিন্তু সে এখনো প্রকাশ্যে ঘুরছে। আমি এর উচিত বিচার চাই।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক আরেকজন বলেন, দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি, দখল বাণিজ্য, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, পুলিশের ওপর হামলা থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরণের অপরাধেই জসিম যুক্ত ছিল। তবে ৫ আগস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে কয়েকদিন সে গা ঢাকা দিলেও বর্তমানে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিনি এলাকায় বলে বেড়াচ্ছেন, সবকিছু ম্যানেজ হয়ে গেছে।
চাঁদপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলেন অন্যতম সমন্বয়ক মো. রিয়াজ হোসাইন বলেন, ৪ আগস্ট চাঁদপুর সদর ও মতলবে যারা নৃশংস হত্যাযজ্ঞ হামলা চালিয়েছে, তাদের ছবি প্রশাসনকে দিয়েছি। তাদের গ্রেফতারের দাবীতে আমরা কথাও বলেছি। কিন্তু এখনো জসিম দের মতো আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের অনেকে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এটা ২৪ এর চেতনার জন্য হুমকি। প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি তাদের গ্রেফতারের জন্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রবিউল হক বলেন, জুলাই বিপ্লবে হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, যুবলীগ ক্যাডার জসিম ভূইয়ার বিরুদ্ধে মতলব উত্তর থানাসহ চাঁদপুরের বিজ্ঞ আদালতে কয়েকটি মামলা আছে।
কেকে/এআর