জয়পুরহাটে কালাই উপজেলা চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকরা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পাটের পরিবর্তে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের বস্তায় চাল বিক্রি করছেন।
প্রশাসনের নাকের ডগায় বছরের পর বছর এমন ঘটনা ঘটলেও দেখার যেন কেউ নেই। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, প্লাস্টিকের বস্তার ব্যবহার রোধে প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে মিল মালিকরা বলেন পাঠের বস্তার সহজলভ্য না হওয়ার বাধ্য হয়ে পাঠের পরিবর্তে প্লাস্টিকের বস্তায় চাল বাজারজাত করছেন।
জানা যায়, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ধান ও চাল বিপণনে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয় এ দুটি পণ্যে কোনো প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার না করার। এরও চার বছর আগে ২০১০ সালে ৭ অক্টোবর ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক আইন-২০১০’ করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। আইন প্রণয়নের পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও এর কার্যত কোনো প্রয়োগই নেই কালাই উপজেলা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এ উপজেলার বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা চালের দোকানে প্লাস্টিকের বস্তায় চাল পাওয়া যায়। সেগুলোর ওজন হয় ২৫ এবং ৫০ কেজি। ওই বস্তাগুলোর গায়ে লেখা থাকে-নওগাঁ, পার নওগাঁসহ রকমারি চটকদার ও ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা। যেগুলোর আদৌ কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। সেই চালের বস্তায় নেই কোনো জাত, উৎপাদনের তারিখ ও দাম। যার ফলে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে এবং ক্রেতাকে ফাঁকি দিয়ে বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
কালাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় প্রায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদন হয় প্রায় ৯০ হাজার টন। অন্যদিকে আমন মৌসুমে উৎপাদন হয় প্রায় ৬২ হাজার টন ধান। উৎপাদিত ধান এলাকার স্থানীয় ব্যবসায়ীরাই কৃষকদের কাছ থেকে বেশিরভাগ ক্রয় করে থাকেন। পরবর্তীতে তারা এ ধান থেকে চাল তৈরি করেন। এবং সেই চাল নিজ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় রফতানি করেন।
এ উপজেলার হাতিয়র গ্রামের নাজিম উদ্দীন নামে পৌরসভার পাঁচশিরা চালের মোকাম থেকে চাল কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, সে ২৫ কেজি ওজনের ২ বস্তা তার পরিবারের খাবারের জন্য চাল কিনেছেন নওগাঁ জেলার প্রসিদ্ধ কাটারি জাতের চাল মনে করে।
পৌরসভার পাঁচশিরা বাজারের পাইকারি এক চালের দোকানদার জানান, নিজ এলাকার চালের বস্তায় ঠিকানা থাকলে অনেক ক্রেতারা কিনতে চায় না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই অন্য এলাকার মার্কা এবং প্রস্তুতকারক ও মোড়কজাতকারী ঠিকানাবিহীন চাল বিক্রি করছেন।
কালাই উপজেলা চালকল মালিক সমিতির কয়েকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদস্য জানান, তাদের উৎপাদিত তৈরি চাল অন্য জেলার ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে প্লাস্টিকের বস্তায় লোগো ছাপিয়ে আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন ক্রেতাদের এমন মানসিকতার কারণে।
কালাই উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল আজিজ আকন্দ জানান, এ ধরনের কাজ অনেকে করেছেন কিছু অর্থ সাশ্রয়ের জন্য। তারা অন্য জায়গা থেকে বস্তা কিনে নিয়ে এসে মিলে নিজেদের কিংবা ভাড়া নিয়ে এ কাজ করে থাকেন। এটা অনৈতিক।
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামিমা আক্তার জাহান বলেন, প্লাস্টিকের বস্তায় কোনো কিছুই ব্যবহার করা যাবে না। এটা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কেকে/এএম