নতুন কাপড়ের নতুন গন্ধে ঈদের খুশিতে নতুন মাত্রা যোগ করে তাইতো আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে নতুন কাপড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার বিভিন্ন দর্জিপাড়ার কাপড় তৈরির কারিগররা। সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করছেন তারা।
কেউ কাপড় কাটছেন, কেউ সেলাই করছেন, কেউ আবার ব্যস্ত আছেন পাঞ্জাবি ও শার্টের বাহারি রঙের বোতাম লাগানোর কাজে। অপরদিকে নতুন নতুন ফরমায়েশ তৈরীতে ব্যস্ত টেইলার্সের মালিকরা। একদিকে সেলাই মেশিনের খটখট আওয়াজ আর পাশেই চলছে মাপ অনুযায়ী কাপড় কাটা। বিরতিহীন সেলাই মেশিনের যান্ত্রিক শব্দ বলছে, দম ফেলার ফুরসত নেই কারিগরদের। শবে বরাতের পর থেকেই ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পোশাক তৈরির এই চাপ।
কাজের চাপ থাকলেও দিনশেষে ৫শ থেকে ৬শ টাকা উপার্জন করে নিজের ছেলে-মেয়েদের কাপড় তৈরি করতে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন কাপড় তৈরীর কারিগররা। আড়পাড়া আলকারিম টেইলার্সের এমনি একজন দর্জি কারিগর ইমরান হোসেন। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, প্রতিটা কাপড়ের ভিত্তি করে আমরা টাকা পায় তবে তা দিয়ে ছেলে-মেয়েদের ভাল কাপড় দেওয়া তো দূরের কথা সংসারের ভোরন-পোষণ চালানোই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের মজুরি একটু বাড়িয়ে দিলে মোটামুটিভাবে পরিবার নিয়ে চলা যায়। অপর একজন দর্জি নিপু মোল্লা তিনি জানান, সকাল থেকে গভীর রাত অবধি কাজ করি। কাজের উপরে পারিশ্রমিক পাই তাতে করে দিনশেষে ৬ থেকে ৭শ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এদিকে গতবারের চেয়ে এবার কাপড় তৈরিতে বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ কাপড় তৈরি করতে আসা ব্যক্তিদের।
থান কাপড় ক্রয় করে তৈরি করতে আসা মৌসুমী খাতুন নামে এক মহিলা বলেন, গত বছর একটি থ্রি পিস তৈরিতে খরচ হয়েছে দেড়শো থেকে দুইশো টাকা এবার তা তিনশো টাকা। সরেজমিন উপজেলার আড়পাড়া সদরের আশা, আল কারীম, অনামিকা, সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি টেইলার্স ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটা টেইলার্সে ১০ থেকে ১৫ টা সেলাই মেশিনের মাধ্যমে স্ব স্ব দর্জিরা নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছেন। কাজের চাপ বেশি থাকায় বিরতিহীনভাবে কাজ করে চলেছেন। যেখানে প্রতিটি শার্ট-২৫০, প্যান্ট-৩৫০, থ্রিপিস-৩০০ এবং পাঞ্জাবি ৫০০ টাকা মজুরি প্রতি তৈরি করা হচ্ছে পাশাপাশি নতুন কাপড় চিপানোর কাজেও ব্যস্ত সময় পার করছেন অনেকে।
এমনই একজন দর্জি আবু সাঈদ মোল্লা তিনি বলেন, কাপড় তৈরি করার চেয়ে কাপড় চিপানোর কাজে একদিকে যেমন সময় কম লাগে অপরদিকে লাভও বেশি হয়। তিনি বলেন, প্রতিটা শার্ট বা গেঞ্জি চিপানোর জন্য ৫০ টাকা এবং প্যান্ট বা পাঞ্জাবি জন্য ১০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। কাপড় তৈরি বা চিপানোর জন্য গত ঈদের চেয়ে এবারের ঈদে একটু বেশি মূল্য নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। চলমান এ কাজের চাপ চাঁদরাত পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন টেইলার্সের মালিকরা। আড়পাড়া বাজারের সিঙ্গাপুর টেইলার্সের মালিক জাকির হোসেন বলেন, প্রতিবছরই ঈদুল ফিতরে কাজের চাপ একটু বেশি থাকে তবে কোরবানি ঈদে চাপ কম থাকে তাই ঈদুল ফিতরেই আমাদের একটু লাভ হয় আর সর্বোপরি কর্মচারীদের বেতন বোনাস দিয়ে লাভও খুব বেশি থাকে না বলেও জানান তিনি।
কেকে/এআর