ড. কর্নেল অলি আহমদ বীর বিক্রম (অব.)—যাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস লেখা কখনোই সম্ভব হবে না। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত তরুণ অফিসার। ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর ক্র্যাকডাউনের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রথম অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, যার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী বীর বিক্রম অলি আহমদ। প্রস্তাব পেয়েও তিনি নিজে ঘোষণা না দিয়ে নিজের সিনিয়র আর্মি অফিসার মেজর জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় যিনি ছিলেন শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছায়াসঙ্গী। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও ছিলেন জেনারেল জিয়ার পাশে। বিএনপির নাম নির্ধারণ, প্রথম কমিটি ও রূপরেখা তার হাতেই লেখা হয়েছে। তিনি ছিলেন প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমানের একান্ত ব্যক্তিগত সচিব।
শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদতবরণের পর বিএনপির মহাসচিব একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও যুগ্ম মহাসচিব ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী যখন দেশ ছেড়ে আমেরিকায় অবস্থান নেন তখন যে ব্যক্তি নিজের পরিবার পরিজন ভুলে বেগম খালেদা জিয়া, শহিদ জিয়াউর রহমানের সন্তান ও বিএনপির পাশে সর্বত্র থেকেছেন তিনি আর কেউ নন ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম।
অলি আহমদ এমন একজন ব্যক্তি যাকে দুর্নীতি, লোভ ও ক্ষমতা কখনোই স্পর্শ করতে পারেনি। ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ রাস্তা অবরোধ করেছিল। বিএনপিকে টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। ওই সময় শেখ হাসিনার বিশেষ দূত তার চাচা হাফিজুর রহমান ও সাবেক মন্ত্রী আ খ ম জাহাঙ্গীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন কর্নেল অলির কাছে। তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং থেকেছেন বিএনপি ও খালেদা জিয়ার পাশে।
এরপর ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪-এর নির্বাচনে শেখ হাসিনা তাকে শত শত কোটি টাকা, মন্ত্রিত্ব দিয়ে কিনতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি যোগাযোগমন্ত্রী থাকা অবস্থায় যমুনা সেতুর পুরো নির্মাণ কাজ সম্পাদিত হয়। অথচ মন্ত্রী হিসেবে সব সময় দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থেকেছেন তিনি। হাসিনা তাকে কিনতে ব্যর্থ হওয়ার পর, চেয়েছেন দুদকের জালে জড়াতে। তবে ৩ দফা পৃথক পৃথকভাবে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে পাননি কোনো দুর্নীতির ছোঁয়া।
কর্নেল অলি আহমদ বীরবিক্রমের ১৯৭৪ সালের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের ওপর প্রয়াত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মীর শওকত আলী বীর উত্তম লিখেছেন, ‘সাংগঠনিক ব্যাপারে এ কর্মকর্তার রয়েছে অসাধারণ দক্ষতা। তিনি অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রমী এবং বর্তমান পদবি থেকেও বড় দায়িত্ব নেওয়ার সামর্থ্য তার রয়েছে। যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ কর্মকর্তা একদিন সেনাবাহিনীর সম্পদ হতে পারেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কার্যত তিনি ছিলেন প্রথম কর্মকর্তা যিনি ঝুঁকি নিয়ে নিজ উদ্যোগে একাত্তরের ২৫/২৬ মার্চ রাতে স্বাধীনতার ঘোষণার ব্যাপারে জেনারেল জিয়াউর রহমানকে অবহিত করেন।’
উল্লিখিত বার্ষিক প্রতিবেদনের শেষাংশে জেনারেল জিয়াউর রহমান বীর-উত্তম ঊর্ধ্বতন অফিসার হিসেবে লিখেছিলেন, ‘তিনি (কর্নেল অলি) পরিপূর্ণভাবে অনুগত এবং অত্যন্ত সাহসী একজন অফিসার। তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত এবং কর্মোদ্যোগী।’
১৯৩৯ সালের ১৩ মার্চ চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার বিখ্যাত ‘কুতুব’ পরিবারে জন্মগ্রহণ নেওয়া ড. অলি আহমদ বীর বিক্রম ১৯৫৭ সালে নিজ উপজেলার গাছবাড়িয়া এন. জি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৬৬ সালে ন্যাশনাল কলেজ, করাচী থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর, ‘রেভ্যুলিউশন, মিলিটারি পারসোনেল অ্যান্ড দ্য ওয়ার অব লিবারেশন ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি গবেষণার ওপর যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ব্রুকস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ব্রুকস বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অনারারী রিচার্স ফেলো।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় গাছবাড়িয়া নিত্যানন্দ গৌরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র হিসেবে তিনি আন্দোলনে অংশগ্রহণ এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এলএলবি অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন এবং ১৯৬৫ সালে কমিশন লাভ করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে এবং ১৯৭০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে নিযুক্ত হন।
১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের রাতে ঢাকায় পাকিস্তান সামরিক জান্তার নৃশংস হত্যাযজ্ঞের সংবাদ পাওয়ার পর, ক্যাপ্টেন অলি আহমদ ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ করেন এবং সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হন এবং সব পাকিস্তানি অফিসারদের বন্দি করেন। মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বেই যুদ্ধের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। জিয়াউর রহমান ছিলেন চট্টগ্রামের ষোলশহরে অবস্থানরত ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সহ-অধিনায়ক এবং ক্যাপ্টেন অলি ছিলেন প্রথম কোয়ার্টার মাস্টার।
১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী থানার ফুলতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনি সেনাবাহিনী, বিডিআর, পুলিশ, আনসার এবং মুক্তিযোদ্ধাদের যৌথ হেডকোয়ার্টার স্থাপন করেন। তৎকালীন মেজর জিয়া ক্যাপ্টেন অলি আহমদকে বৃহত্তর চট্টগ্রামে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেন। তিনি সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা, চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিং এলাকা, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এলাকা, চকবাজার, কক্সবাজার এবং কালুরঘাট রেডিও স্টেশন এলাকায় মেজর জিয়াউর রহমানের নির্দেশে বিভিন্ন অফিসারের নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য সেনা দল মোতায়ন করেন। বস্তুত তারাই ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে ওই বিদ্রোহের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং বর্তমান আধুনিক সশস্ত্র বাহিনীর ভীত রচনা করেন। ২৭ মার্চ ১৯৭১ তিনি মেজর জিয়াউর রহমানকে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেন এবং পরামর্শ দেন।
যুদ্ধকালীন তিনি কালুরঘাট, মীরেরসরাই, মস্তাননগর, করেরহাট, তুলাতুলী, হেয়াকু, চিকনছড়া, রামগড় এবং বেলুনিয়ার প্রসিদ্ধ যুদ্ধক্ষেত্রে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। পরবর্তী পর্যায়ে এপ্রিল মাসেই তিনি চট্টগ্রাম ও ফেনী জেলার আংশিক অঞ্চলের (বেলুনিয়া, ফেনী নদী থেকে করেরহাট পর্যন্ত) সাব-সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত হন। ওই অঞ্চলে যুদ্ধ পরিচালনার সর্বময় ক্ষমতা তাকে প্রদান করা হয় এবং তিনিই ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম সাব-সেক্টর কমান্ডার।
স্বাধীনতাযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকার স্বীকৃতি স্বরূপ যুদ্ধ চলাকালীন তিনিই প্রথম ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত হন। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে প্রসিদ্ধ ‘জেড ফোর্সের’ প্রথম বিগ্রেড মেজর হিসেবে তিনি নিয়োগ প্রাপ্ত হন এবং যুদ্ধ চলাকালীন বাঙালি অফিসারদের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশি ‘ব্রিগেড মেজর’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭২ সালের অক্টোবর মাসে তিনি মেজর পদে উন্নীত হন। পরবর্তী সময়ে তিনি ১৯, ৯, ১০ এবং ষষ্ঠ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সহ-অধিনায়ক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। মেজর অলি আহমদ ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লে. কর্নেল হিসাবে পদোন্নতি পান। অতঃপর সৈয়দপুরে অবস্থানরত ২৪তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে তাকে নিযুক্ত করা হয়। নভেম্বর মাসের শেষ দিকে তিনি সেনা সদর দফতরে জেনারেল স্টাফ অফিসার-১ (অপারেশন) হিসাবে নিযুক্ত হন।
পরবর্তীকালে তিনি সেনাপ্রধান, ডি.সি.এম.এল.এ. সশস্ত্রবাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডার, সি.এম.এল.এ. এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ হইতে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত সামরিক বাহিনীতে ১৯টি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। লে. কর্নেল অলি এ বিদ্রোহ দমনে এবং দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮০ সালের জানুয়ারি মাসে কর্নেল পদে উন্নীত হন এবং ১০ জানুয়ারি ১৯৮০ সালে ১৩ বছর চাকরি অবশিষ্ট থাকা অবস্থায় চাকরি হতে পদত্যাগ করে অবসর গ্রহণ করেন।
শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দীর্ঘ দিনের সহযোগী এবং বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে বঙ্গভবনে থাকা অবস্থায় পর্দার আড়ালে থেকে ড. অলি আহমদ নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং দলটির নামকরণ (বিএনপি) তিনি করেন। সমগ্র দেশে বিএনপিকে সুসংগঠিত করার জন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম করেন। তিনি পার্টির অন্যতম একজন প্রতিষ্ঠাতা। যদিও তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিএনপিতে যোগদান করেন এবং মার্চ মাসে উপনির্বাচনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম-১৩ নির্বাচনি এলাকা থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।
১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে কর্নেল অলি আহমদ যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান এবং সামরিক আইন জারি হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত ওই পদে বহাল ছিলেন। তিনি প্রথমবার ১৯৮০ সালের মার্চে, দ্বিতীয়বার ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, তৃতীয়বার ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, চতুর্থবার ১৯৯৬ সালের ১২ জুন, পঞ্চমবার ২০০১ সালের ১ অক্টোবর এবং ষষ্ঠবার ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।
সুদীর্ঘ নয় বছর স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব, আন্তরিকতা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি নিজেকে বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি ১৯৮৪ সালে দলের বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী কমিটি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মনোনীত হন। ১৯৮৪ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তাকে একাধিকবার দলের মহাসচিব হওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু অর্থনৈতিক সচ্ছলতা না থাকায় তিনি রাজি হননি।
১৯৯১ সালের ২০ মার্চ বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করার পর কর্নেল অলি আহমদ পূর্ণ মন্ত্রী হিসাবে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন এবং ১৯৯৬ সালের মার্চ পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে তিনি অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, সফলতা এবং দক্ষতার সঙ্গে মন্ত্রণালয় পরিচালনা করেন।
প্রকৃতপক্ষে তিনিই বাংলাদেশে আধুনিক সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের রূপকার। ঢাকা মহানগর থেকে দেশের প্রতিটি জেলার সঙ্গে হাইওয়ে নির্মাণ এবং উপজেলার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী সড়ক তার সময়েই নির্মিত হয়। তার সময়ে দেশের বড় বড় সেতুগুলো নির্মিত হয় বা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, যেমন—যমুনা সেতু, (যার প্রায় ষাট শতাংশ কাজ তার সময় সম্পন্ন হয়) দাউদকান্দি সেতু, রূপসা সেতু এবং ভৈরব সেতুর নাম উল্লেখযোগ্য।
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসের পর তিনি প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ত্রাণ, পুনর্বাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৬ সালের মার্চে গঠিত নতুন মন্ত্রী সভায় শপথ নেওয়ার পর তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। কিন্তু একদিন পর পুনরায় তাকে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ বিএনপি সরকার পদত্যাগ করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি ওই দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি ১৩০ মেগাওয়ার্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করেন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দুই তৃতীয়াংশ মন্ত্রী এবং বড় বড় নেতারা নির্বাচনে পরাজয় বরণ করেন, অন্যদিকে কর্নেল অলি আহমদ চট্টগ্রামের ২টি আসন থেকে বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করেন। ২০০১ সালে ধানের শীষ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি এলডিপির প্রতীক ছাতা মার্কা নিয়ে বিজয়ী হন।
দীর্ঘ ১৭ বছর হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে লড়াই সংগ্রামে যিনি এক দিনও মাঠ থেকে সরে যাননি তিনি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম। বিগত ১৭ বছর দেশে অন্যায়ের ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সব সময় মাঠে থেকেছেন। সর্বশেষে ছাত্ররা যখন সেই আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে যোগ দিয়েছে তখনো মাঠে ছিলেন কর্নেল অলি। এত এত ত্যাগের পরও যখন দেখি অলি আহমদ বীর বিক্রমকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে তখন আমরা হতাশ হই।
পরিশেষে বলছি, পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহকারী, যুদ্ধ চলাকালীন প্রথম খেতাবধারী বীর বিক্রম, মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সাব-সেক্টর কমান্ডার, মুক্তিযুদ্ধের সময়ের প্রথম এবং একমাত্র বাংলাদেশি ব্রিগেড মেজর ও শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার একমাত্র পরামর্শক ড. কর্নেল অলি আহমদ বীর বিক্রমের মতো মানুষকে যখন মূল্যায়ন করা হয় না, স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয় না, তখন বুঝতে বাকি থাকে না বাংলাদেশ তার সঠিক পথে নেই। ধরেই নিতে হয় পথ হারিয়েছে বাংলাদেশ।
লেখক : প্রাবন্ধিক
কেকে/এএম