নাটক, চলচ্চিত্রে ধূমপানের দৃশ্য থাকলে সেগুলো পবিত্র ঈদুলফিতরের অনুষ্ঠানে প্রচার হতে বিরত থাকা এবং বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রতিপালনের আহ্বান জানিয়ে সকল টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে মানস।
রোববার (২৩ মার্চ) সংস্থার সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী স্বাক্ষরিত চিঠি টিভি চ্যানেলগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অনুষ্ঠান প্রধানদের প্রেরণ করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়—ধূমপান, তামাক সেবন ও মাদকাসক্তি বর্তমানে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের অন্যতম বড় প্রতিবন্ধকতা। বিশেষত করে কিশোর-তরুণদের মধ্যে ধূমপান ও মাদকাসক্তি প্রবণতা বাড়ছে যা পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য অশনিসংকেত! দেশে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মারা যায় তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে। দেশে প্রায় দেড় কোটি মাদকাসক্ত রয়েছে যারা সমাজের নানাবিধ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
এমতাবস্থায়, বিনোদন মাধ্যমগুলোতে সচেতনতা সৃষ্টির অপরিহার্যতা রয়েছে। বিশেষ করে নাটক, চলচ্চিত্রে কোনোভাবেই যেন ধূমপান, মাদক, ই-সিগারেটসহ নেতিবাচক দৃশ্য প্রচার না হয় সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকা প্রয়োজন। কারণ, কিশোর-তরুণরা এসব নেতিবাচক দৃশ্য দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং অনুকরণ করে।
উল্লেখ্য, ধূমপান ও মাদক নিয়ন্ত্রণে দেশে আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫’ এর ধারা-৫ (ঙ) অনুসারে, বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত বা লভ্য ও প্রচারিত, বিদেশে প্রস্তুতকৃত কোনো সিনেমা, নাটক বা প্রামান্যচিত্রে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য টেলিভিশন, রেডিও, ইন্টারনেট, মঞ্চ অনুষ্ঠান বা অন্য কোনো গণমাধ্যমে প্রচার, প্রদর্শন বা বর্ণনা করিবেন না বা করাইবেন না: মর্মে বলা আছে এবং বিধিমালায় বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, মানস বিনোদন মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ ও লঙ্ঘণ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করে আসছে। ২০২৪ সালে দুই ঈদেও টিভি চ্যানেলের প্রায় সব নাটক পর্যবেক্ষণ করা হয়। আমাদের দেশে প্রধানত দুই ঈদ উপলক্ষ্যে কিশোর-তরুণদের চাহিদা ও পছন্দসই নতুন নাটক, চলচ্চিত্র, টেলিফিল্ম তৈরি হয়। এক শ্রেণির অসাধু পরিচালক-প্রযোজকরা নাটক, চলচ্চিত্রে সেলিব্রেটি শিল্পীদের হাতে সিগারেট, মদের দৃশ্য অযাচিতভাবে প্রচার করে। যেহেতু কিশোর-তরুণরাই নাটক, চলচ্চিত্রের মূল দর্শক, তাই তামাক কোম্পানিগুলোও তাদের মৃত্যুপণ্যের প্রচারণায় পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ে। আগামী প্রজন্মের স্বার্থে ধূমপানের প্ররোচণা বন্ধে নির্মাতা, শিল্পী ও কলা-কূশলী এবং প্রচার মাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্টদের রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে সকলের প্রতি আহ্বান জানাই।
আইনজীবী ও নীতি বিশ্লেষক সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। দেশে তামাকজনিত রোগ, অকালমৃত্যু ও ক্ষয়-ক্ষতি কমাতে সরকার আইন ও বিধি প্রণয়ন এবং সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে। অপরদিকে, কতিপয় পরিচালক-প্রযোজক জনপ্রিয় তারকাদের দিয়ে সিগারেট, ই-সিগারেট এর আইন বিরোধী প্রচারণা করছে, যা শিশু, কিশোর-তরুণদের ধূমপান ও মাদকে আকৃষ্ট করছে। জাতীয় স্বার্থে রাষ্ট্রীয় আইন ও নৈতিকতা বিরোধী এসব অপতৎপরতা বন্ধে টেলিভিশন চ্যানেলসহ সংশ্লিষ্ট সকলের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
কেকে/এএম