কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার বিএডিসির (আলুবীজ) উপপরিচালক হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতি বস্তায় কৃষকের কাছ থেকে ১০ কেজি অতিরিক্ত আলু নেওয়া, জেনারেটরের তেল ও কৃষকের কীটনাশক না দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী কৃষকদের।
এর প্রতিবাদ করায় কার্যালয়টির সহকারী মেকানিক কাম-অপারেটর মো. দিদারুল আলম সজলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। এ নিয়ে দিদারুল আলম সজল গত ১৫ সেপ্টেম্বর কৃষি মন্ত্রণালয়ে সচিব বরাবর অভিযোগও করেছেন। দিদারুল আলম সজল মাস্টার রোলে ওই কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। অন্যদিকে অভিযুক্ত হারুন অর রশীদ ২০১৯ সাল থেকে এই কার্যালয়ের কর্মরত রয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১ মার্চ চাকরিতে যোগদান করেন দিদারুল আলম সজল। গত বছরের ১৮ আগস্ট তিনি অফিসে কৃষকের কাছ থেকে প্রতি বস্তা আলুতে ১০ কেজি অতিরিক্ত নেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন। তাছাড়া বিদ্যুৎ চলে যাওয়া দেখিয়ে জেনারেটরের তেল ও কৃষককে কীটনাশক না দিয়ে উপপরিচালকের অর্থ আত্মসাতের বিপক্ষে অবস্থান নেন। সজলের শক্ত অবস্থানের প্রেক্ষিতে পরে উপপরিচালক তার বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেন। এমনকি চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় সজলকে।
পরে চাকরি ফিরে পেতে পাকুন্দিয়া সহকারী জজ আদালতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি একটি মামলা করেন সজল। মামলার বিবাদীরা হলেন- পাকুন্দিয়া বিএডিসির (আলুবীজ) উপপরিচালক হারুন অর রশীদ, সহকারী পরিচালক ওয়াহেদুর জামান নুর, উপসহকারী পরিচালক নায়েব আলী, সহকারী মেকানিক কাম অপারেটর আনোয়ারুল ইসলাম।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, দুর্নীতি, ঘুষ, অনিয়ম প্রসঙ্গে কথা বলায় সজলকে মৌখিকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। অব্যাহতি দেওয়ার সময় বিবাদীরা কোনো রকম অফিশিয়াল নিয়মনীতি অনুসরণ করেননি। হারুন অর রশীদের অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়।
এর আগেও ২০২০ সালে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কৃষকদের মাঝে ভেজাল বীজ বিতরণসহ প্রতারণার অভিযোগ ওঠে। তখন তার শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছিলেন কৃষকেরা। সেই সময়ে তার কার্যালয় থেকে ভিত্তি বীজের পরিবর্তে নিম্নমানের বীজ বিতরণের কারণে আলু উৎপাদিত হয়নি।
ভুক্তভোগী দিদারুল আলম সজল বলেন, ‘আমার সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে। নিয়োগ পেয়ে আমি ১২ বছর চাকরি করেছি। হাইকোর্টের রায়ও আছে। ৫ আগস্টের পর আমি বলেছিলাম, দুর্নীতি করা যাবে না, তেল চুরি করা যাবে না। যে কারণে আমাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আমি বিষয়টি বিএডিসির চেয়ারম্যান মহোদয়কেও জানিয়েছি। এছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়ের কেবিনেট সচিবকে জানিয়েছি। পরিশেষে আমি মামলার আশ্রয় নিয়েছি। তিন বছরের বেশি একই কর্মস্থলে থাকার বিধান না থাকলেও অদৃশ্য শক্তির বলে তিনি এই কর্মস্থলে ছয় বছর ধরে রয়েছেন।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হারুন অর রশীদের বক্তব্য নিতে গেলে তিনি অভিযোগের বিষয়ে কোনো উত্তর না দিয়ে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন।
বিষয়টি পাকুন্দিয়ার ইউএনও মো. বিল্লাল হোসেনকে জানানো হলে তিনি বলেন, ওই কর্মকর্তা খুবই নিন্দনীয় ও অপেশাদারসুলভ আচরণ করেছেন। তাকে সতর্ক করা হয়েছে।
কেকে/এজে