নির্লিপ্ততা
সন্ধ্যায় মগভর্তি দুধ চায়–
শরণার্থীর লাশের মতো
নির্বিচারে মুড়ি ভেজানো থাকে।
সুনীলদা নির্বিকারে নভেল পড়েন আর
শব্দ করে চায়ে চুমুক দেন।
তার বেসুরো রবীন্দ্রসংগীতের হামিং
বেলকনি পেরিয়ে আমার ঘরে
চোরা চোখে উঁকি দেয়।
**
উপাখ্যান
গোলযোগ মেট্রোপলিটনে গুবরে
পতঙ্গ তরঙ্গাকার জীবন পায়।
যে তরঙ্গ তাকে রঙ্গ করে বেলায় বেলায়।
রেট্রো মেমোরিতে অন্তরঙ্গ চুমুক তেষ্টাই বাড়ায়
রাস্তা রাস্তা বিষাদগ্রস্ত ক্যাপিটালিস্ট
তাই ক্যাসেটটা একেবারে পেটি বুর্জোয়া কি মানায়?
রিপুসমূহ ঝগড়া করে সব গুবলেট পাকায়,
তাই তো ভেনাস ঘুমায়–
দেখতে পারি না সন্ধ্যায়।
**
কোনোক্রমেই
কোনোক্রমেই,
চর্ব্য নয়, লেহ্য নয়
কোদাল আর দাঁতের সাঁড়াশি নয়
সরাসরি গিলে খাওয়ার শহরে
নিয়ন গিলছে নিয়মিত রাত পিয়ন।
সাইডারের ঝাঁজালো মদিরা
সাজুয্যের দিক থেকে সারমেয়
(হুংকার আর ধিক্কারে)
সরাসরি গলায় ঢেলে খাওয়ার শহরে
বই থেকে লাইন দুই বা রেললাইন
গড়লে ডোবানো নবাবী ভোজন
করুণ অপ্রস্তুত বাক্যচয়ন
কী—এই ভাবে শক্তিমেয়
বাধ্য করছে নাগরিকে; এক বঙ্কিম দীর্ঘ ঈ-কারে
রাজ হয়ে যায় রাজি!
নিতান্তই গিলে খাওয়ার শহরে।
**
পরবর্তী প্রতিক্রিয়া
ছাইরঙা খোয়াবের তলে,
অতি সত্য ‘গোপন’ কোনোমতে যত্রতত্র লুকায়ে
নবীন চোখের গহ্বরে ফ্যালে কিম্ভূত
সংস্পর্শীয় অসুখ।
ঘুমের জামা পরে আসে পরম্পরার এই অসুখ;
নরমে নরমে গাঁথে নখর
কতদূর আর যাবে, অসুখ তো আমার গাত্রবর্ণে।
অনুক্ত অভিযোগ যত ছিল তোলা রাখা,
এক এক করে নামছে সমঝদার পেয়ে।
ক্ষীণ এই এক প্রাণেই জমিয়ে তুলছে
গত হাজার প্রজন্মের কৃতকর্মের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া।
**
দরিদ্র কবিতা
বেদনাহীন দুপুরে,
বেদনাহীন আকাশ।
গতকালের ধোঁয়া নেই
জ্বরতাপে ভেসে গেছে রাতের চাঁদ।
একটা চন্দ্র-জরাহীন আকাশ
দুপুরে রোদবুকে পাথর পোড়া গন্ধ
তুমি আমি পুড়েছি, সে তাপের আভাস।
সমস্ত বেদনা পুড়ে গ্যাছে
যা আছে তা বোকা ক্যানভাস–
শরীর আমার এই বোকা ক্যানভাস
শরীর তোমার এই বোকা ক্যানভাস
বাকি যা সব চুষে নিয়ে গেছে তপ্ত আকাশ।
একটা বার্তাহীন দুপুরে
বেকার আকাশ। রোদের দুর্গম রোগ আছে
আছে মন পোড়া রঙ চুরির অভ্যাস।
**
বিস্মৃত দর্শন
অবশ্যই সেকেলে, খুব প্রাচীন–
কিয়দংশ ভাঙা, ক্ষয়ে খোয়ানো তত্ত্ব
যা এককালে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল,
মনে করতে চাওয়ার হাপিত্যেশ আর
স্নায়বিক চাপ নিয়ে দর্শনেরা নিজস্ব ক্ষুধায়
আবার জাগতে চাইছিল।
তবে আমি দর্শন দিলাম উপরে, এবং
ওঃ মেঠো মাটি, তোমার সমীপে;
কী কী দেখো এত বুড়ো জীবন কালান্তরে?
বিভ্রাট তো এই–
আকাশ দেখে মাটি পুরো ঢেকে গেছে
মখমলি পাঁপড়িওয়ালা ফুলে
এদিকে মাটি বুক চিতে–
দেখে আকাশ সেজেছে তারই সৃজিত দলে।
পোকাদের ঈশ্বর দর্শন হলো না বলে,
তারা দলভঙ্গ হয়ে গেছে বোধহয়।
**
নতুনের জন্যে
ভাবনায় আছো, মানছি। ঠিক অবিকল
প্রথম সাক্ষাতের মুখ, মায়া। কিন্তু
কিছু হলেও পরিবর্তন এসেছে নিশ্চিত জানি।
বিবাদ অথবা দ্বন্দ্বের নিয়মে, পোষা গাছ
আর বনের ঝাউ একই স্বপ্ন বিকোয় না যেমন
ঠিক তেমন, সর্ব মনের কর্তৃত্ব হারিয়েছ।
ক্ষত মলিন হয়ে যাওয়ার দুর্ঘটনা যতটুকু
ততখানি জুড়ে আছো, মনের আর যা–
নতুনের জন্যে নির্বিচারেই হয়েছে পুনরায় বরাদ্দ।
**
অগোচরে
যারা কখনোই সাড়া দেয়নি
ছিল স্পর্শ-সীমার বাইরে
আজ তাদেরই সৎ লাগে।
তারা ঝিঝি পোকার মতো ভালো
তাদের দৃষ্টি-প্রভা স্মরণে মাথা হয়ে আসে অবনত।
**
ধোঁয়াট
শূন্য ব্যাপিত হতে থাকে-চৌকাঠে, পাজেরোয়, পাঁজরায়।
ধোঁয়া ধোঁয়া হয়ে যায় সন্ধ্যে, নাকের ডগা দিয়ে উবে যায়
বহুলচর্চিত ইচ্ছেমালা।
মিনিট, মাসের নাম নিয়ে বুড়ো হয়ে উড়ে যায় আয়ু,
খণ্ডকালীন কিছু উড়বার পারঙ্গমতা দেখিয়ে,
আসলে কখনোই কিছুই না, কথনের কিছুই না–
প্রায়শই দামি আলখাল্লায় মুড়ে রাখি আমাদের অস্পৃশ্যতাগুলি।
ফুরফুরে হবার চেয়েও হালকা, জীবনজাতের মেঘমালা–
ভীত করে: আসলে সেখানে কি কিছুই নাই!
এই ভয়টাও, সবচেয়ে কম দৈর্ঘ্যের হতে হতে, আদপে নঞর্থক
হয়ে-তোড়ে ভেসে যায় অপ্রচলিত তত্ত্বকথার মতো।
**
প্রলেতারিয়েত উপাংশ-১
কর্কট সংলগ্ন কানাগলে, তুমি হেঁটে যাও
তাবৎ নিজস্ব উষ্ণতা বহে;
একান্ত সংস্পর্শ কিছু চেরা লিচির টুকরো–
দানার মিহি আবহে।
অনবগত মুহুর্মুহু যেন; গত সব সমালোচনা–
প্রায়ই প্রকাশিতব্য মুহূর্তে,
ভীতচকিত কিছু ঠান্ডা ঘাম জমছে কপালে–
আমার। ভাগ্য ঈষৎ আছে বিবসনা।
**
প্রলেতারিয়েত উপাংশ-২
জানালায় ভিড় ভাঙো, অর্বাচীনেরা–
মেঘের শৌর্য কেবল দরকারি কবিদের!
হটাও বৃষ্টিকেন্দ্রিক সমাগম! যাও!
ভিনসেন্ট কবিকে দেখতে দাও–
মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি।
কেকে/এএম