মাদারীপুরে পৌর শ্রমিকদলের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলা শ্রমিকদল একাংশের সভাপতি শাকিল মুন্সিকে (৩০) কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন।
রোববার (২৩ মার্চ) রাত ১১টার দিকে মাদারীপুর সদর উপজেলার নতুন মাদারীপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত শাকিল মুন্সি নতুন মাদারীপুর এলাকার মোফাজ্জেল মুন্সির ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান আক্তার হাওলাদারের ছোট ভাই যুবলীগ নেতা লিটন হাওলাদারকে সম্প্রতি মাদারীপুর পৌর শ্রমিকদলের সভাপতি করা হয়। এই কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে উপজেলা শ্রমিকদলের একাংশের সভাপতি শাকিল মুন্সির সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় আক্তার হাওলাদার ও লিটন হাওলাদারের।
এ ছাড়াও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একই এলাকার রুবেল হাওলাদারের বংশের লোকের সঙ্গে আক্তার হাওলাদারের দ্বন্দ্ব ছিল। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা আক্তার হাওলাদার দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে। তার মামলার শুনানি ছিল রোববার। তার সমর্থকদের ধারণা ছিল মামলায় কারাবন্দী আক্তার হাওলাদার জামিনে মুক্তি পাবেন। তাকে বরণ করে নিতে আদালত চত্বরে হাজির হন তার সমর্থকরা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
পরে রোববার দুপুরে দুপক্ষের মাঝে ধাওয়া পালটা-ধাওয়াসহ দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের পরপর বিকালে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছালে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। এরপর রাতে রুবেল হাওলাদারের সমর্থক উপজেলা শ্রমিক দলের একাংশের সভাপতি শাকিল মুন্সিকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।
নিহতের পরিবারের দাবি, লিটন হাওলাদার, আল-আমিন হাওলাদার, জাহাঙ্গীর হাওলাদারসহ বেশ কয়েকজন হামলা করে শাকিলকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানেই চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যায় শাকিল। এদিকে মারা যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিএনপির সমর্থকরা হত্যাকারীদের বিচার দাবি করে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে। ঘটনায় পরে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
নিহত শাকিলের ভাই মাদারীপুর পৌর বিএনপির ২নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক হাসান মুন্সি বলেন, আমার ভাই শাকিলকে প্রতিপক্ষ লিটন, আল আমিন, জাহাঙ্গীরসহ বেশ কয়েকজন কুপিয়ে হত্যা করেছে। এরা সবাই আওয়ামী লীগের লোকজন। আমি এই হত্যার বিচার চাই।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মাদারীপুর পৌর শ্রমিক দলে লিটন হাওলাদারকে সভাপতি করে একটি কমিটি ঘোষণা করে জেলা কমিটি। এ নিয়ে শ্রমিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। জেলা কমিটির অনেক নেতাকর্মী লিটনকে আওয়ামীপন্থি অভিযোগ করে পৌর শ্রমিক দলকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ও কমিটি বাতিলের দাবি জানান।
নতুন মাদারীপুর এলাকায় এলে শাকিলের ওপর হামলা চালান লিটন হাওলাদারের ভাতিজা আল আমিনসহ ১৫-২০ জন। এ সময় শাকিলকে দেশি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। শাকিলের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে কুপিয়ে আহত করা হয় আরো দুজনকে।
এদিকে শাকিলকে হত্যার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে দেশি অস্ত্র নিয়ে লিটনের অনুসারীদের সঙ্গে শাকিলের অনুসারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত পাঁচজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে মাদারীপুরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিহত শ্রমিক দলের নেতা শাকিলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
জেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেমায়েত হোসেন বলেন, সম্প্রতি মাদারীপুর পৌর শ্রমিক দলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ওই কমিটিতে লিটন হাওলাদারকে সভাপতি, সেলিম রেজাকে সাধারণ সম্পাদক ও আরিফ হাওলাদারকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। যা সম্পূর্ণ আওয়ামীপন্থিদের নিয়ে গড়া এই কমিটি।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন মারা গেছেন। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
কেকে/এএম