গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামিরা কারাগারে। তবে এ সুযোগে তাদের পরিবারের নারী ও শিশু সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, মামলার বাদীপক্ষ ও তার লোকজন নিয়মিত হুমকি দিচ্ছেন এবং তাদের বাড়ি থেকে বাঁশ, পুকুরের মাছ, গাছ ও খড় লুট করে নিচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর নারী ও শিশু সদস্যরা আতঙ্কে ঘরবন্দি হয়ে আছেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে কেউ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। আত্মীয়স্বজন কেউ প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য নিয়ে আসতে চাইলে গোপনে, লুকিয়ে আসছেন।
ভুক্তভোগী পরিবারের এক নারী সদস্য জানান, ‘সকালে আমাদের ঝাড় থেকে বাঁশ কেটে নিয়ে গেছে বাদীপক্ষের লোকজন। দুপুরে পুকুরে জাল ফেলে মাছ তুলে নিয়ে গেছে, গাদা থেকে খড়ও নিয়ে গেছে। যাওয়ার সময় আমাদের হুমকি দিয়ে গেছে।’
তারা আরো অভিযোগ করেন, টানা পাঁচ দিন পুলিশ পাহারায় নিরাপত্তা পেলেও গত দুই দিন ধরে তাদের ওপর নতুন করে নির্যাতন নেমে এসেছে। তাদের দাবি, মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত করা হলে প্রকৃত সত্য প্রকাশ পাবে এবং নিরপরাধরা হয়রানির শিকার হবে না।
সাবেক চেয়ারম্যান ও মামলায় আটক মো. আবদুল মজিদ মিয়ার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী মোছা. নাজমুন্নাহার বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী ও ছেলেকে আসামি করা হয়েছে, তারা এখন জেলে। বাড়িতে কোনো পুরুষ নেই। এ সুযোগে বাদীপক্ষের লোকজন আমাদের হুমকি দিচ্ছেন। বাড়ি থেকে বের হলেই তারা মেরে ফেলার ভয় দেখাচ্ছেন। দরজা-জানালা বন্ধ করে থাকতে হচ্ছে। তারা বাড়ির সামনে এসে গালিগালাজ করছেন, দরজা-জানালায় লাঠিসোটা দিয়ে আঘাত করছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘নিহত বৃদ্ধা দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টের রোগী ছিলেন। ঘটনার দিন চিৎকার করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অথচ আমাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে হত্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, যেখানে অনেক নিরপরাধ মানুষও ফাঁসানো হয়েছে।’
মামলার ৭ নম্বর আসামি সাবেক স্কুলশিক্ষক হযরত আলীর কলেজপড়ুয়া নাতনি মিথিলা বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় আমাদের ফাঁসানো হয়েছে। আমাদের পরিবারের লোকজন এখন কারাগারে। সঠিক বিচার আমরাও চাই, কিন্তু তার আগেই বাদীপক্ষ আমাদের সঙ্গে খুবই খারাপ আচরণ করছে। ঘটনার দিন থেকে আমরা নিজ বাড়িতে তালাবদ্ধ অবস্থায় আছি। আত্মীয়স্বজন খাবার দিতে আসলেও তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমাদের পুকুরের মাছ, ঝাড়ের বাঁশ, গাদার খড়সহ নানা জিনিসপত্র লুট করে নিচ্ছে তারা। বাড়ি থেকে বের হলে হাত-পা কেটে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে, আচমকাই চালানো হচ্ছে ভাঙচুর। এমন পরিস্থিতিতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছি।’
মামলার বাদী মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, ‘ঘটনাস্থলে নতুন করে বিশৃঙ্খলা এড়াতে আমরা তৎপর রয়েছি। ঘটনার পর থেকে পুলিশ ছয় দিন পাহারা দিয়েছে। এরপর যদি কোনো ছোটখাটো ঘটনা ঘটে, তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানাতে হবে।’
প্রসঙ্গত, উপজেলার শান্তিরাম ইউনিয়নের পাঁচগাছি শান্তিরাম গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল মো. আকালু শেখের ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম ও প্রতিবেশী মৃত আবদুল হামিদ মিয়ার ছেলে মো. আবদুল মজিদ মিয়ার পরিবারের মধ্যে। গত ১৭ মার্চ দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে এবং রফিকুল ইসলামের মা মারা যান। পরে হত্যার অভিযোগ এনে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মজিদ মিয়াকে প্রধান আসামি করে ২২ জনের নামসহ আরো অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৭ আসামি কারাগারে রয়েছেন।
কেকে/এআর