এক পারভেজ উল আলম রাজনেই অতিষ্ঠ কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার মানুষ। প্রকাশ্যে একের পর এক অঘটন ঘটিয়েও পার পেয়ে যাচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি এক সংখ্যালঘু পরিবার রাজনের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে খোকসা থানায় চাঁদাবাজী মামলা করেছেন।
পুলিশ রাজনের সহযোগি আতিকুল আলমকে গ্রেফতার করেছে। তারপরও থেমে নেই রাজনের চাঁদাবাজী। অভিযোগে জানা গেছে, প্রায় তিনমাস আগে খোকসা হাসপাতাল গেটের সামনে সরকারি চাকরিজীবী দম্পতি প্রকৌশলী দিলীপ সেন ও অঞ্জণা রাণীর তিনটি দোকানে প্রকাশ্যে তালা মেরে দখলে নেয় রাজন গ্রুপ।
গেল সপ্তাহে প্রকৌশলী দিলীপ সেনের বাড়ির ভাড়াটিয়াদের বাড়ি ছাড়তে হুমকি দেয় রাজনের বিশেষ সহযোগী আতিক। এ ঘটনায় খোকসা থানায় চাঁদাবাজি মামলা করেছেন ভুক্তভোগী দিলীপ সেনের স্ত্রী অঞ্জণা রাণী। মামলায় পারভেজ উল আলম রাজন, আশিক বিশ্বাস জনি ও আতিকুল আলমকে আসামী করা হয়।
মামলার এজাজারে বলা হয়েছে, গত ২৬ নভেম্বর রাজন ও আতিক বাদীর শ্বশুরের বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে নেই। এছাড়া তিনমাস আগে আসামীরা তাদের দোকানে তালা লাগিয়ে নিজেদের দাবি করে। সর্বশেষ ১৫ মার্চ বাড়ির ভাড়াটিয়াদের প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলে।
মামলার বাদী ভুক্তভোগী অঞ্জণা রাণী বলেন, রাজনের দাবিকৃত ৫ লাখ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পরই আমাদের দোকানে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে হাসপাতাল গেট বণিক সমিতির এক স্বঘোষিত সভাপতি ও বিএনপি নেতা আমার স্বামীকে চাঁদা দেয়ার জন্য চাপ দেন। এমনকি রাজনের সাথে ঝামেলা মিটিয়ে নিতে হবে নয়তো ভাড়াটিয়াদের ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা দেয়া লাগবে বলে হুমকি দেন।
এদিকে চাঁদাবাজি মামলায় আতিক গ্রেফতার হওয়ার পর রাজন গত বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রকৌশলী দিলীপ সেনের দুই ছেলেকে অস্ত্র ধরে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। খবর পেয়ে খোকসা থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করেন।
সূত্রে জানা গেছে, গেল সপ্তাহে খোকসা আধুনিক হাসপাতালের মালিকের কছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে রাজন ও জনি। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় অপারেশন করতে আসা এক চিকিৎসককে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। বাধ্য হয়ে থিয়েটারে থাকা রোগীকে অপারেশন না করেই চলে যান সেই চিকিৎসক। রোগীর জীবন বাঁচাতে অন্য এক চিকিৎসককে দিয়ে অপারেশন করে রোগীর জীবন বাঁচায় মালিক হারুন অর রশিদ।
এ ছাড়া শোমসপুরের ইন্টারনেট ব্যবসা জোর করে নিজের নামে করে নেয়ার অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ী জিয়া। প্রতিনিয়ত তাকে ফোনে হুমকি দিচ্ছে রাজন বলে জানান।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন স্থানীয় জানান, এই দলে আছে খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুর রহিম খানের বড় ছেলে রবিন খান। রাজনের মেয়ের সঙ্গে নিজের ছোট ছেলে সিয়াম খানকে বিয়ে দেয় রহিম উদ্দিন খান। আর বিয়াই হওয়ার সুবাদে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খানের দখলদারিত্বের জমি ও সম্পত্তির সুরক্ষা দেয়ার গুরুদায়িত্বও পালন করছে এই রাজন।
তারা আরো জানান, রাজন বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যে অস্ত্র উচিয়ে হুমকি দেয়। মূলত এটার পেছনে নিজেকে জানান দেয়াই কারণ। যাতে মানুষ তার দেখে ভয় পায়।
একটি সূত্রের দাবি, রাত ১১টার পরেই মোটরসাইকেল নিয়ে শোমসপুরের দিকে গেলেই কিছু যুবক কাদিরপুর গ্রামে গতিরোধ করে সর্বস্ব কেড়ে নেয়। আর অটোভ্যান চুরির ঘটনা তো নিয়মিত। খোকসা বাজার থেকেও সংখ্যালঘু এক ব্যবসায়ীর ১৪ লাখ টাকার সার ও কীটনাশক চুরির ঘটনাও ঘটিয়েছে এই রাজনবাহিনী। যে খোকসাতে ডাকাতির কোনো ঘটনাই ঘটতো না এখন সেই খোকসা ডাকাতের নগরী।
এ বিষয়ে জানতে পারভেজ উল আলম রাজনের মুঠোফোনে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মঈনুল ইসলাম বলেন, মামলায় একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদেরও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
কেকে/এআর