নিজের অভিষেক ম্যাচ খেলতে নেমেই সামর্থ্যের প্রমাণ দিলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা দেওয়ান চৌধুরি।
মিডফিল্ড ও আক্রমণভাগে প্রাণবন্ত ছিলেন প্রথমার্ধে, বিরতির পর তপু বর্মণের অনুপস্থিতিতে তাকে খেলানো হয় সেন্টার ব্যাকে। সেখানেও দারুণ সফল। অন্যদিকে অবসর ভেঙে ফেরা সুনীল ছেত্রীকে তেমন সুযোগ দেয়নি বাংলাদেশ। ফলে ভারতের মাঠ থেকে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা গোলশূন্য ড্র নিয়ে ফিরছে।
তবে গোলমুখ খুলতে পারেননি হামজা চৌধুরীর বাংলাদেশ। ভারতকে রুখে দিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। শিলংয়ে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচটি গোলশূন্য (০-০) ড্র হয়েছে।
এর আগে ম্যাচের বয়স ৩০ সেকেন্ড না হতেই ভারতের শিবিরে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল বাংলাদেশ। ভারতের গোলরক্ষক বিশাল বায়েতের ভুলে বল পেয়েছিলেন মজিবুর রহমান জনি। তিনি কাটব্যাক করতে পারলে প্রথম আক্রমণেই এগিয়ে যেতে পারতো বাংলাদেশ। পারেননি জনি। ভারত বেঁচে যায় প্রথম মিনিটেই।
১০ মিনিট পর আবার ভুল করে বসেন ভারতীয় গোলরক্ষক বিশাল। এবার সেই ভুলে বল পান মোহাম্মদ হৃদয়। বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারেনি দ্বিতীয় সুযোগও।
১২ মিনিটের মধ্যে দুইবার গোল খাওয়া থেকে বেঁচে গেলে ভারত যেন খেই হারিয়ে ফেলেন। সেই সুযোগ হামজা চৌধুরীকে নিয়ে গড়া বাংলাদেশ চড়াও হতে খেলতে শুরু করে। মোরসালিনের ক্রমে ইমনের হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে আরেকটি সুযোগ হাতছাড়া হায় বাংলাদেশের।
১৯ মিনিটের মধ্যে ৩ বার ভারতের রক্ষণে আতঙ্ক ছড়িয়েও হ্যাভিয়ের ক্যাবরোর দল লিড নিতে পারেনি। শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে থাকা ১৬ হাজার ভারতীয় সমর্থকদের মধ্যে তখন নেমে আসে পিনপতন নিরবতা।
শুরুর দিকের বিধ্বস্ত অবস্থা কাটিয়ে ভারত ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। ২২ মিনিটে বাংলাদেশ দলের জন্য দুঃসংবাদ হয়ে আসে এ ম্যাচের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা তপু বর্মনের ইনজুরি।
ব্যথা পেয়ে তপু স্ট্রেচারে মাঠ ছাড়লে বদলি হিসেবে নামেন রহমত মিয়া। তপুর মাঠ ছাড়ার পর ভারত আস্তে আস্তে বাংলাদেশের সীমানা চিনতে থাক। সেই ধারাবাহিকতায় ২৮ মিনিটে লিস্টন কোলাসো বক্স থেকে নেন দুর্বল শট। বাংলাদেশ গোলরক্ষক মিতুল মারমার সেই শট ঠেকাতে কোনো বেগ পেতে হয়নি।
প্রথমার্ধে ভারত সবচেয়ে সহজ সুযোগ পায় ৩০ মিনিটে। পাল্টা আক্রমণ থেকেই সেই সুযোগটি এসেছিল ভারতের সামনে। উদান্তা সিংয়ের শট ঠেকিয়ে দেন বাংলাদেশের তরুণ ডিফেন্ডার শাকিল আহমেদ তপু। ফিরতে বলে বক্স থেকে শট নিয়েছিলেন ফারুক হাজি। তবে দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় সেই বল নিজের আয়ত্বে নিয়ে দলকে বাঁচান বাংলাদেশ গোলরক্ষক মিতুল মারমা।
হামজার উজ্জ্বল দিনে নিষ্প্রভ ছিলেন ভারতের কিংবদন্তি ফুটবলার সুনীল ছেত্রী। তিনি বাংলাদেশের গোলরক্ষক মিতুল মারমাকে তেমন কোনো পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি। কয়েক দফা বলের লাগাল পাননি, আবার পেলেও ঠিকমতো টাইমিং করতে পারেননি। তাই ভারতীয় কোচ মার্কোস ৮১ মিনিটে সুনীলকে তুলে নেন।
ম্যাচের সবচেয়ে সহজ সুযোগটা মিস করেছে বাংলাদেশ। একেবারে খেলার প্রথম মিনিটে ভারতীয় গোলরক্ষক বিশাল কেইত বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড জনির পায়ে বল তুলে দেন। জনি একেবারে ফাঁকা পোস্ট পেয়েও সাইড জালে শট নেন। কিছুক্ষণ পর হামজার নেওয়া এক কর্নারে ভারতীয় গোলরক্ষক বিশাল গ্রিপ করলেও শট নেওয়ার সময় বল বাধাগ্রস্ত হয়ে আবার ভারতের পোস্টের দিকে যায়। বাংলাদেশের হৃদয়ের শট ভারতীয় ডিফেন্ডার গোললাইন থেকে ক্লিয়ার করেন। ২২ মিনিটে চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক তপু বর্মণ। ফলে আরেক ডিফেন্ডার রহমত মিয়া আর্মব্যান্ড নিয়ে মাঠে নামেন।
প্রথমার্ধে বাংলাদেশ বল পজেশন ও আক্রমণে ভারতের চেয়ে এগিয়ে ছিল। ৪১ মিনিটে গোলরক্ষককে ১:১ পেয়েও বল জালে পাঠাতে পারেননি জনি। ৩১ মিনিটে ভারতীয় গোলরক্ষকের বাড়ানো বল ধরে দ্রুতগতির আক্রমণে ওঠে দল। ডান প্রান্ত থেকে নেওয়া ক্রসে ভারতীয় ফরোয়ার্ডের হেড গোললাইনে সেভ করেন বাংলাদেশের ডিফেন্ডার। ফিরতি বলে ভারতীয় ফুটবলার জোরালো শট নিতে পারেননি, ফলে সেভ করতে অসুবিধা হয়নি বাংলাদেশি গোলরক্ষক মিতুলের।
দ্বিতীয়ার্ধে দেখা যায় অন্য ভারতকে। খেলার শুরু থেকেই আক্রমণ করতে থাকে স্বাগতিকরা। ৫৫ মিনিটে লিস্টন কোলাসোর ক্রসে সুনীল ছেত্রী মাথা ছোঁয়াতে পারলেই গোল হতে পারতো। বাংলাদেশের গোলরক্ষক মিতুল পরাস্ত ছিলেন। এরপর ভারত একাধিক কর্নার আদায় করে কয়েক মিনিটের মধ্যে। হামজা এই অর্ধে রক্ষণেই বেশি সময় কাটিয়েছেন।
৬০ মিনিটে বাংলাদেশ শাহরিয়ার ইমন ও জনির পরিবর্তে চন্দন রায় ও ফয়সাল আহমেদ ফাহিমকে নামায়। ৭৫ মিনিটে রাকিবের বাড়ানো বলে ফাহিম বক্সের মধ্যে গোলের সুযোগ পেয়েও মিস করেন। দুই মিনিট পর হ্যাভিয়ের দুই সোহেল রানাকে এক সঙ্গে নামান হৃদয় ও মোরসালিনের জায়গায়। একাধিক খেলোয়াড় পরিবর্তন করলেও ম্যাচের ফল পরিবর্তন করতে পারেননি কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা।
কেকে/এজে