গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকার হুড়াভায়াখাঁ গ্রামের রতন চন্দ্র দেবনাথ (৩৫) অনলাইন জুয়ার নেশায় সব হারিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ছোট্ট পানের দোকান চালিয়ে সংসার চলত তার। কিন্তু অনলাইন জুয়ার ফাঁদে পড়ে জমি ও মোটরসাইকেল বিক্রি করেও ঋণের বোঝা সামলাতে পারেননি। পাওনাদারদের চাপ ও দুশ্চিন্তায় অবশেষে আত্মহননের পথ বেছে নেন।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সকালে নিজ শয়নকক্ষ থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রতন ওই গ্রামের মৃত বিমল চন্দ্র দেবনাথের ছেলে।
রতনের পরিচিতজন ও পাশের দোকানদাররা জানান, রতন নিয়মিত অনলাইন জুয়ায় আসক্ত ছিলেন। একাধিকবার জমি বিক্রি করে ও ঋণ নিয়ে জুয়ার টাকা পরিশোধ করেছেন। তবু জুয়ার নেশার ফাঁদ থেকে বের হতে পারেননি। সর্বশেষ তার ডিসকাভার মোটরসাইকেলও বিক্রি করেন এবং চড়া সুদে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ নেন। সব হারিয়ে পাওনাদারদের চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেন বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, অনলাইন জুয়ার ফাঁদ ও চড়া সুদের দাদন ব্যবসার কারণেই রতনকে জীবন দিতে হলো। এ ধরনের প্রতারণামূলক জুয়া ও সুদের ফাঁদ বন্ধ করা না গেলে আরো অনেক তরতাজা প্রাণ অকালে ঝরে যাবে। তাই অনলাইন জুয়া চক্রের মূল হোতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা, যাতে আর কোনো জীবন এমন করুণ পরিণতির শিকার না হয়।
সুন্দরগঞ্জ পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘রতন অনলাইন জুয়ায় আসক্ত ছিল। তাকে অনেকবার সতর্ক করেছি, কিন্তু সে শোনেনি। শেষমেশ এই জুয়ার কারণেই তার জীবন গেল। প্রশাসনের উচিত দ্রুত অনলাইন জুয়ার ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।’
সুন্দরগঞ্জ পৌর বিএনপির আহ্বায়ক নিপুন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি প্রায়ই রতনের দোকানে পান খেতাম। ছেলেটা ভদ্র ছিল, কিন্তু অনলাইন জুয়ার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়ে গেল। কিছুদিন আগেও জমি বিক্রি করে ঋণ শোধ করেছে। এখন প্রশাসন যদি কঠোর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আরও অনেক রতন একই পথে যাবে।’
এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, ‘রতন চন্দ্র দেবনাথ দীর্ঘদিন ধরে ঋণে জর্জরিত ছিলেন। বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন। পাওনাদারদের চাপ সহ্য করতে না পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে, অনলাইন জুয়ার কারণে তার এই পরিণতি হয়েছে কি না, সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’
কেকে/ এমএস