কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে একটি হত্যা মামলায় অভিযুক্তদের কারাগারে থাকার সুযোগে তাদের পরিবারের নারী সদস্যদের ওপর নির্যাতন ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে বাদীপক্ষের বিরুদ্ধে। পরিবারগুলোর অভিযোগ, বাদীপক্ষের লোকজন তাদের গরু ছাগলসহ বাড়ির চারপাশ থেকে বাঁশ কেটে নেওয়া, পুকুরের মাছ ধরে নেওয়া এবং লুটপাট করে বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। ১ বছরের বেশি সময় ধরে বাড়িঘরে যেতে পারছেন না, এতে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে ভুক্তভোগী পরিবারের নারী ও শিশুরা।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পরিবারের নারী ও শিশু সদস্যরা আতঙ্কগ্রস্ত। নিরাপত্তার অভাবে বাড়িতে আসছে পারছেনা। ওই পরিবারের নারী সদস্যরা বলেন, অনেক আগেই তাঁদের বাড়িঘর ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দিয়েছে, এ নিয়ে এলাকাবাসী কথা বল্লেই তাদেরকে মামলার হুমকি দেয় বাদীপক্ষ। ছয় পরিবারের সকল মালামাল ও ঝাড় থেকে বাঁশ গাছ কেটে নিয়ে গেছে বাদীপক্ষের লোকজন। জাল ফেলে পুকুরের মাছ তুলে নিয়ে গেছে এবং ঘরের চাল পর্যন্ত নিয়ে গেছে। আজ সকালে এলাকাবাসীকে নিয়ে বাড়িতে আসার পরে হুমকি দিয়ে গেছে তারা। এমন পরিস্থিতিতে লুকিয়ে থেকেও চরম অনিরাপত্তায় দিন পার করছে এই ছয় পরিবারের নারী শিশু ও বৃদ্ধরা।
ঘটনার প্রথম ৩ দিন এলাকাবাসীর পাহারায় নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল। পরে এলাকাবাসীকে মামলায় ফাঁসানোর বয় দেখিয়ে সরিয়ে দিলে তারা প্রথমে মালামাল লুটপাট করে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে পরিবারগুলো এলাকা ছাড়া হয়। পাঁচ পরিবারের সদস্যদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে দাবি করে নারী সদস্যরা বলেন, ঘটনার দিন আমরা ছিলাম না তবুও আসামি করা হয়েছে। বাদীপক্ষের হুমকি-ধমকিতে জানমালের চরম অনিরাপত্তায় দিন পার করছে তারা। পরিবারগুলো নিরাপত্তার পাশাপাশি মালামাল ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে।
মোছা. শিউলি আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী ও ছেলেকে আসামি করা হয়েছে, বাড়িতে কোনো পুরুষ নাই। এ সুযোগে মামলার বাদী ও তার লোকজন সব সময় আমাদের হুমকি দিচ্ছিলো। এলাকাবাসীর পাহারায় প্রথম তিনদিন বাড়িতে ছিলাম তখন বাড়ি থেকে বের হলেই বাদীপক্ষ আমাদের মেরে ফেলবে। দরজা-জানালা বন্ধ করে থাকছি। তারা বাড়ির সামনে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে এবং দরজা-জানালায় লাঠিসোঁটা দিয়ে আঘাত করছে। যে ছেলে হত্যা করেছে থাকে আমরা আইনের হাতে তুলে দিয়েছি। যাঁরা উপস্থিত ছিলেন না, তাঁদেরও ফাঁসানো হয়েছে মামলায়।
মামলার ৫ নম্বর আসামি মো. লুৎফর রহমান ছেলে মামলার ২ নাম্বার আসামি কলেজপড়ুয়া আঃ আল মামুন বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় আমাদের ফাঁসানো হয়েছে। সে কারণে আমাদের লোকজনকে জেলও কাটতে হয়েছে। সঠিক বিচার আমরাও দাবি করছি। কিন্তু তার আগেই বাদীপক্ষ ও তাদের স্বজনরা আমাদের সঙ্গে খুবই খারাপ আচরণ করছে। ঘটনার দিন থেকেই নিজ বাড়িতে তালাবদ্ধ আমরা। আমাদের কোনো আত্মীয়স্বজন আসলে তাদেরও হুমকি দিচ্ছে তারা। অতর্কিত বাড়িতে চালানো হচ্ছে ভাঙচুর। এমন পরিস্থিতিতে চরম অনিরাপত্তায় দিন পার করছি আমরা।’
মামলার বাদী শান্তি আক্তার সঙ্গে দেখা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি সাংবাদিকদের সাথে খারাপ আচরণ করতে থাকেন।
হোসেনপুর থানার ওসি মো.মারুফ হোসেন বলেন, হত্যা মামলার মূল আসামি জেল হাজতে আছে। অন্যান্য আসামিরা আদালতের মাধ্যমে জামিন পেয়েছে। তাদের বাড়িতে থাকতে দিবেনা বা তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করে লুটপাট করবে সেটা হতে পারেনা। অভিযোগ পেলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিব। ঘটনাস্থলে নতুন করে বিশৃঙ্খলা এড়াতে আমরা তৎপর আছি। এরপরে যদি কোনো ছোটখাটো ঘটনা ঘটে, তাহলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানাতে বলেন ওসি।
উল্লেখ্য, বাদীপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। তাঁদের বাড়ি উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামে।
কেকে/ এমএস