গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সাহাবাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা আক্তার মিলির বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (২৬ মার্চ) স্বাধীনতা দিবস অনুষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক ফাতেমা আক্তার মিলির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি শেখ মামুন উর রশিদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন এবং স্যান্ডেল খুলে লাঞ্ছিত করার হুমকি দেন।
ফাতেমা আক্তার মিলি প্রয়াত আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের শ্যালিকা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতির বোন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সহকারী শিক্ষক থেকে সরাসরি প্রধান শিক্ষক পদে আসীন হন।
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ের পর তৎকালীন এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফাতেমা আক্তারকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপর থেকে তিনি বিদ্যালয়ে একক আধিপত্য বিস্তার করেন। অভিযোগ রয়েছে, স্বামীর বড় ভাইকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বানিয়ে বিভিন্ন নিয়োগের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি।
২০১৫ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে তার বিরুদ্ধে শিক্ষক-কর্মচারীদের হয়রানি, ১১ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে আর্থিক লেনদেন, টিউশন ফি আত্মসাৎ, উৎকোচ ছাড়া বেতন-ভাতা অনুমোদন না করা এবং অবসরে যাওয়া কর্মচারীদের কাছ থেকে টাকা দাবি করার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এসব বিষয়ে একাধিকবার অভিযোগ করা হলেও প্রশাসন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
বুধবার স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে সাংবাদিক শেখ মামুন উর রশিদ তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ফাতেমা আক্তার ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তিনি সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তুই সাংবাদিক তো কি হইছিস? তোকে কেনো বক্তব্য দেব?’ এরপর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং একপর্যায়ে পায়ের স্যান্ডেল খুলে মারধরের হুমকি দেন।
প্রধান শিক্ষকের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েছেন এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা।
অবিভাবক বাবলু মণ্ডল বলেন, ‘একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এমন আচরণ দুঃখজনক। শিক্ষকরা জাতির ভবিষ্যৎ গড়েন, আর তিনি যদি এমন অসামাজিক আচরণ করেন, তবে তিনি শিক্ষক হওয়ার যোগ্য নন। একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এমন ব্যবহার মেনে নেওয়া যায় না।’
অপর অভিভাবক নুরুজ্জামান বলেন, ‘তিনি শিক্ষক হয়ে সাংবাদিকদের তুই-তোকারি করেন কিভাবে? সাংবাদিক স্কুল থেকে বের না হলে স্যান্ডেল খুলে মারার হুমকি দেন! আমি মনে করি, তার বিচার হওয়া উচিত।’
ভুক্তভোগী সাংবাদিক শেখ মামুন উর রশিদ বলেন, ‘আমি আমার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলাম। প্রধান শিক্ষক ফাতেমা আক্তার মিলির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় তার বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি রেগে গিয়ে তুই-তোকারি করেন, গালাগাল দেন এবং স্যান্ডেল খুলে লাঞ্ছিত করার হুমকি দেন। একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এমন আচরণ দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য। এটা শুধু আমাকে নয়, পুরো সাংবাদিক সমাজকে অপমান করেছে। আমি চাই, তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে এমন আচরণ বরদাশত করা হবে না। তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কেকে/ এমএস