দিলরুবা মুমতাহেনা। বেড়ে ওঠা ঢাকার মিরপুরে। ইডেন মহিলা কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন তিনি এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে। ২০০৩ সালে উদ্যোক্তা হিসেবে পথচলা শুরু তার।
সাভারের উলাইলে নিজ কারখানায় তিন চারজন কারিগর নিয়ে শুরু করেন নিজস্ব ডিজাইনে ব্লক, বাটিক, হ্যান্ড পেইন্ট, এমব্রয়ডারি করা শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার কামিজ ইত্যাদি তৈরির কাজ। সাভার বাসস্ট্যান্ড চৌরাঙ্গী মার্কেটে ছিল দিলরুবার শোরুম। তার তৈরি শাড়ি, পাঞ্জাবি দেওয়া হতো ধানমন্ডি দোয়েল সপুরা সিল্ক শোরুমেও।
সব কিছু ভালোই চলছিল, কিন্তু ২০০৪ সালে দিলরুবার বড় ছেলে গভমেন্ট ল্যাব্রেটরি হাই স্কুলে ভর্তির পর কারখানাটি বন্ধ করে দেন এবং তিনিও ছেলের সঙ্গে উলাইল ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় এসে নতুন করে স্বল্প পরিসরে কাজ শুরু করলেও ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হন। কারণ ২০০৭ সালের দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ২০০৮ সালে দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেন। এরপর তার পক্ষে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। সব ছেড়ে পুরোপুরি সংসারী হয়ে ওঠেন দিলরুবা মুমতাহেনা। যত্ন আর ভালোবাসায় ছেলেদের বড় করতে থাকেন।
২০২০ সালে দিলরুবার বড় ছেলে উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড চলে যায়। বিদেশে গিয়ে মাকে জানান, চুল পড়ে যাচ্ছে। দিলরুবা ছেলের জন্য ন্যাচারাল হেয়ার অয়েল তৈরি করার উদ্যোগ নেন। কেশুতি বা কেশরাজের খোঁজ করতে থাকেন তিনি। এরপর কেশরাজ দিয়ে তেল তৈরি করে ছেলের জন্য ইংল্যান্ডে পাঠান। ছোট ছেলের সহপাঠীদের মায়েরা কথায় কথায় সেই গল্প জানতে পারেন। তারা নিজেরা এই তেল কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। দিলরুবা নতুনভাবে উদ্যোগ নেন এবং ন্যাচারাল তেল তৈরি করেন। একে একে কাঠের চিরুনি, স্কিন প্রোডাক্ট, পাপায়া সোপ, নিম সোপ, ফেইস প্যাকসহ মোট ২৩টি পণ্য যুক্ত হয় দিলরুবার উদ্যোগে। এসব পণ্যের প্রচারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে BEED Bangla নামের একটি পেইজ খোলেন দিলরুবা।
২০২১ সাল থেকে তিনি যুক্ত আছেন TOP Women's Entrepreneur গ্রুপে। তার BEED Bangla পেজে যেসব পণ্য পাওয়া যায় সেসব হলো; কেশরাজ ম্যাজিক্যাল হেয়ার অয়েল, কেশরাজ ম্যাজিক্যাল ব্ল্যাক অয়েল, নিম ওয়েল, কেশরাজ ম্যাজিক্যাল শ্যাম্পু, কাঠের চিরুনি, নিম সোপ, পাপায়া সোপ, কিউকাম্বার সোপ, অরেঞ্জ পিল সোপ, টমেটো সোপ, চারকোল সোপ, স্যাফরান গোটমিল্ক সোপ, স্যাফরান টারমারিক গোটমিল্ক সোপ, ব্রাইটিনিং ফেইস প্যাক, স্পট আউট ফেইস প্যাক, সানস্ক্রিন ক্রিম, স্যাফরান জেল, নাইট ক্রিম, গ্রীন টি টোনার, রোজ ওয়াটার টোনার, স্যাফরান সিরাম, কুমকুমাদি অয়েল, আবে কাউছার, লিপ বাম ইত্যাদি। অর্গানিক এসব পণ্য বিক্রি করে দিলরুবা মাসে আয় করছেন গড়ে ২০ হাজার টাকা। বিভিন্ন উদ্যোক্তা মেলায় অংশগ্রহণ করে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন তার পণ্য।
এই উদ্যোক্তা সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আমাদের প্রতিটাটা পণ্যের বিএসটিআই এর অনুমোদন নিতে হয় এবং প্রতি বছর রিনিউ করতে হয়, এটা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য। তাই আমার মনে হয় সব পণ্যের ওপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে একবারে অনুমোদন দিলে আমাদের জন্য সহজ হয়। নতুন কোনো পণ্য যুক্ত হলে সেটার নতুন করে অনুমোদন নেওয়া যায়। এছাড়া ট্রেড লাইসেন্সও প্রতি বছর প্রতিটা পণ্যের মতো নবায়ন করতে হয়। এটা আমাদের মতো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য সমস্যাই মনে হয়। তাই সরকারের কাছে আমার আবেদন ট্রেড লাইসেন্স এবং বিএসটিআই এর বিষয়ে একটু সহজ করে দেওয়া হোক।
তিনি আরো বলেন, ‘আর আমাদের মতো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কিছু অনুদানের ব্যবস্থা করে দিলে আমাদের উদ্যোগ সামনে এগিয়ে নেওয়া সহজ হবে এবং আন্তর্জাতিক মানের কিছু ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হলে আমরা উপকৃত হব।’
কেকে/এমআই