প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০২৪, ৯:৩৯ এএম (ভিজিটর : ১২)
বাজারদর অনেক কারণেই বাড়তে পারে। কখনো বাড়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে, কখনো বাড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো কারণে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে এর প্রথম ধাক্কা লাগে দরিদ্র লোকদের গায়ে। এমন কোনো যুগ নেই যেখানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ঢেউ জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলেনি। নবীজির (সা.) যুগেও মূল্যবৃদ্ধি মানুষকে আঘাত করেছে। লোকেরা নবীজির (সা.)-এর কাছে মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ করেছিল।
আনাস (রা.) বলেন, লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। আপনি আমাদের জন্য দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহ মূল্যের গতি নির্ধারণকারী, তিনিই তা কমান ও বৃদ্ধি করেন এবং একমাত্র তিনিই রিজিকদাতা। তবে আমি আশা করি, আমি আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করব যেন আমার ওপর কারও জীবন বা সম্পদের ক্ষেত্রে জুলুমের অভিযোগ না থাকে (আবু দাউদ : ৩৪৫১)। এর কারণ হচ্ছে, নবীজি (সা.) যদি পণ্যের মূল্য বাজারদরের চেয়ে কমিয়ে দিতেন, তবে ব্যবসায়ীদের প্রতি জুলুম হতো। তবে তার বিপরীতে তিনি ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দেন আল্লাহকে ভয় করতে এবং কেনাবেচার মধ্যে সততা রক্ষা করতে। যাতে ভোক্তা বা ক্রেতার প্রতি পণ্যের অধিক মূল্য নির্ধারণ না করে অথবা পণ্য মজুদ করে বা আটকে না রাখে।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে এবং এ ধরনের সংকটকালে সমাজের লোকেরা তাকাফুল পন্থা তথা একে অপরের দায়িত্ব নেবে, জিম্মাদার হবে। ধনীরা গরিব, অভাবী ও দুস্থদের দায়িত্ব নেবে। এমন সংকটের সময়ে তাদের অধিকার জাকাত প্রদান করবে এবং দান-সদকা করবে, যা তাদের সংকটময় মুহূর্তে জীবন চালাতে সাহায্য করবে। ফলে জাকাত ও দান-সদকা সমাজের মানুষকে দরিদ্রতা ও অভাব থেকে হেফাজত করবে এবং রাষ্ট্রের বোঝা হালকা করবে। জাকাত ও সদকা বরকতের কারণ এবং সমাজের মানুষের মধ্যে ভালোবাসা ও হৃদ্যতা প্রসারের মাধ্যম।
সাহাবা কেরামের নীতি ছিল, কোনো পণ্যের দাম বেড়ে গেলে সে পণ্য ক্রয় করার পরিবর্তে অন্য পণ্য ক্রয় করতেন বা সে পণ্য ক্রয় করা হতে বিরত থাকতেন। ফলে সে পণ্য আবার সস্তা হয়ে যেত এবং ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে আসত। আলী (রা.)-এর আমলে মক্কায় কিশমিশের দাম বেড়ে গেল। লোকেরা বিষয়টা কুফায় আলী (রা.)-এর কাছে পত্রে লিখে পাঠালেন। তিনি উত্তরে লিখলেন, তোমরা খেজুর ক্রয়ের মাধ্যমে তা সস্তা করে দাও। অর্থাৎ তোমরা হেজাজে থাকা পর্যাপ্ত খেজুর ক্রয় করো আর তার মূল্যও কম। ফলে কিশমিশের ওপর চাহিদা কমে গেলে তা সস্তা হয়ে যাবে। ইবরাহিম বিন আদহামকে (রহ.) বলা হলো, মাংসের দাম বেড়ে গেছে। তখন তিনি বললেন, ‘তোমরা তাকে সস্তা করে দাও, অর্থাৎ তোমরা তা ক্রয় করো না’ (তারিখে দিমাশক : ৬/২৮২)। সুতরাং আমাদের কর্তব্য, বাজারে মূল্যবৃদ্ধি রোধে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ইসলামের বাণী প্রচার করা, মূল্যবৃদ্ধি পেলে অভাবী লোকদের সহায়তায় জাকাত ও দান-খয়রাত করা এবং কোনো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেলে বিকল্প কম মূল্যের পণ্যের প্রতি আগ্রহ তৈরি করা ও ক্রয় করা।