এই রমজান মাসে কক্সবাজারে পর্যটক না থাকলেও আসছে ঈদে পর্যটন নগরী পর্যটক বরণের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে এমন নজরে এসছে শহরের প্রতিটি হোটেল ঘুরে। অন্যদিকে ট্যুরিস্ট পুলিশের জনবল সংকট থাকলেও নিয়মিত পর্যটক থাকে এমন বিশেষ পয়েন্টে নিরাপত্তা জোরদার করার কথা বলেছেন।
এদিকে রমজান মাসের আগে শীত মৌসুম থাকার কারণে বেশ পর্যটক ছিল কক্সবাজারে। কক্সবাজারের প্রতিটি পর্যটন স্পটে তিল পরিমাণ জায়গা ছিল না পর্যটকের জন্য। এমনকি সে সময় হোটেলে রুম না পেয়ে অনেক পর্যটক সড়কে রাত যাপন করেছেন।
তবে রমজান এলেই এর ভিন্ন রূপ দেখা মিলে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। শুনশান নিরবতা যেন বলে দেয় এই মাস সিয়াম সাধনার মাস। যার কারণে রমজান মাসে রয়েছে পর্যটকশূন্য বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। সৈকতের নোনাজল বা বালুচর যেমন ফাঁকা ঠিক তেমনি পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস ও সাত শতাধিক রেস্তোরাঁতে নেই পর্যটকের আনাগোনা। তবে ঈদের টানা কয়েকদিনের ছুটিতে প্রচুর পর্যটক আসবে কক্সবাজারে। তাই হোটেল, রিসোর্ট ও রেস্তোরা সাজানো হয়েছে নতুনরূপে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তোলা হয়েছে নতুন পণ্য।
এর মধ্যে রুম বুকিংয়ে সৈকত পাড়ের তারকা মানের হোটেলগুলো বিশেষ অফার দেওয়া শুরু করেছে। ঈদে পর্যটক আসাকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ রিজিউন পর্যটক নিরাপত্তায় বিভিন্ন টিমের মাধ্যমে পর্যটন স্পটগুলো নিরাপত্তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে রমজান মাসে পর্যটক না থাকার কারণে হোটেল ও রিসোর্টগুলো ধোয়া-মোছাসহ পর্যটক বরণে যাবতীয় প্রস্তুুতি নিচ্ছে।
জানা গেছে, এরই মধ্যে অন্যলাইন ও অফ লাইনে হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস ও কটেজের প্রায় ৬০ শতাংশ বুকিং হয়ে গেছে । তাই কক্সবাজারে লেগেছে ঈদের হাওয়া। ঈদের টানা ছুটিকে ঘিরে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে হোটেল মালিকরা।
রমজানে অনেক হোটেল তাদের নিজস্ব কাজের জন্য বন্ধ রাখা হলেও অনেক হোটেলে অল্প সংখ্যক পর্যটক ভ্রমণে এসেছেন সৈকতের শহর কক্সবাজারে। যাদের অধিকাংশই ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন। হোটেল-মোটেলের কক্ষ ভাড়া, খাবারের দাম ও পরিবহন ভাড়া স্বাভাবিকের চাইতে অনেক কম হলেও দুর্ভোগে আছেন খাবার রেস্তোরাঁর সন্ধান পাওয়া নিয়ে। তারপরও ফাঁকা সৈকতে তারা বিনোদনে মেতেছেন।
পর্যটকরা জানান, এখন পর্যটক কম। ভালো করে ঘোরাফেরা করা যাচ্ছে। সাগরের দিকে তাকালে মনে হচ্ছে এটি শুধু আমার। জনশূন্য সৈকতে খুব ভালো লাগছে। পর্যটক না থাকায় বর্তমানে বন্ধ রয়েছে হোটেল জোনের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে এরই ফাঁকে আগামী ঈদে ব্যাপক পর্যটক সমাগমের আশায় কিছু হোটেল-রেস্তোরাঁয় চলছে সংস্কার কাজ।
এদিকে, পর্যটক কম থাকায় সাগরপাড়ে অনেকটা অলস সময় কাটাচ্ছেন লাইফগার্ড কর্মীরা। তাদের নেই কর্মব্যস্ততা। তারপরও সাগরে গোসলে নামা পর্যটকদের নিরাপত্তার পাশাপাশি তাদের চলছে পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন আর ঈদে আগতব্য বিপুল সংখ্যক ভ্রমণপিপাসুর নিরাপত্তা পরিকল্পনার কর্মতৎপরতা।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রমজান মাস এলেই কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা কমে যায়। বিশেষ করে দিনের বেলা রোজার কারণে ভ্রমণে আগ্রহী হন না অধিকাংশ মানুষ। তবে ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, ঈদুলফিতরের ছুটি শুরু হলে পর্যটকদের ঢল নামবে এবং কক্সবাজার আবারো ফিরে পাবে তার চিরচেনা কোলাহল। রোজা শুরুর পর থেকে শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-গেস্ট হাউস রিসোর্ট সমূহের ৯৫ শতাংশই খালি।
ফটোগ্রাফার মুজিবুর রহমান জানান, এখন পর্যটক নেই বললেই চলে। আমাদের আয় একদম কমে গেছে। তবে ঈদের পর ভালো ব্যবসা হবে বলে আশা করছি।
শামুক-ঝিনুক বিক্রেতা জসিম উদ্দিন জানান, রমজান মাসে ব্যবসা খুবই ধীরগতির হয়। তাও দোকান খুলেছি। গুটিকয়েক মানুষজন আসছে তাদের জন্য। কিন্তু আমরা অপেক্ষা করছি ঈদের জন্য, তখন বিক্রি বেড়ে যাবে।
কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল মোটেল জোনের সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান জানান, ঈদে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকরা সাড়া দিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় হোটেল-মোটেলের ৬০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে। এবারের ছুটিতে পর্যটকরা যেন হয়রানি না হয় সেজন্য টুরিস্ট পুলিশ, জেলা প্রশাসকের সমন্বয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সমিতির অর্ন্তভুক্ত কোনো হোটেল যদি অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পেলে তার সদস্য পদ বাতিল করা হবে। পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে আমরা প্রস্তুত।
ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, এবারের ঈদুলফিতর ও পহেলা বৈশাখের ছুটিতে কক্সবাজারে ৩ লাখ পর্যটক সমাগম হবে বলে আমরা আশা করছি। পর্যটকদের বরণ করে নিতে আমাদের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। কক্সবাজারের প্রায় হোটেল বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটকরা যেন হয়রানি না হয় সেটির লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মোর্তজা হোসেন জানান, ঈদের এক দিন আগ থেকে কক্সবাজার রুটে চাপ রয়েছে। ঈদের পরের দিন থেকে কক্সবাজার দৈনিক ২০টি ফ্লাইট আসবে ২০টি যাবে। এবারের ঈদে ছুটিতে পর্যটকদের টিকিটের চাহিদা বেশি। ইতোমধ্যে আমরা ফ্লাইট বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি।
কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনের মাস্টার মেহেদী হাসান জানান, পর্যটকদের জন্য স্পেশাল বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে প্রথমবারের মতো স্পেশাল কমিউটার ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ঈদের পরদিন থেকে টানা ১০ দিন পর্যন্ত চাপ থাকবে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নিহাদ আদনান তাইয়ান জানান, আমাদের জনবল সংকট রয়েছে তারপরেও আমরা পর্যটক নিরাত্তায় আন্তরিকভাবে কাজ করে যাবে। বর্তমানে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ রিজিয়নে মোট জনবল রয়েছে ১৪২ জন। আমরা তা দিয়ে মহেশখালী থেকে শুরু করে সিমান্ত এলাকা টেকনাফ পর্যন্ত দেখতে হয় । বিশেষ করে কক্সবাজারে ৩টি পয়েন্টে পর্যটক বেমি আসে তা হলো সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবণী পয়েন্ট ও এই ৩টি পয়েন্টে রাতে ৪৫ জন ও দিনে ৪৮ জন ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করবে।
এ ছাড়া মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক থাকবে বীচে। অন্যদিকে পাটুয়ারটেক, ইনানী, ও হিমছড়িতে ৩ জন করে ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করবে। আশা করছি কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা আমরা ঘটতে দেবো না।
কেকে/এএম