জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে সংস্কার প্রস্তাবনার ওপর নিজেদের মতামত জমা দিয়েছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। দলটি ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১২২টিতে একমত, ২১টিতে আংশিক একমত, আর ২৩টি প্রস্তাবে দ্বিমত পোষণ করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সকালে জাতীয় সংসদ ভবনে কমিশন সচিবালয়ে দলটির পক্ষ থেকে পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আনছার আলী দুলাল ও মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক স্প্রেডশীটে তাদের মতামত জমা দেন। কমিশনের পক্ষ থেকে জনাব বদিউল আলম মজুমদার এই মতামত গ্রহণ করেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি তাদের মতামতে রাষ্ট্রের নাম ও সংবিধানের মূল নীতিমালা বজায় রাখার পক্ষে মত দিয়েছে। একইসঙ্গে তারা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারকেও সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রেখেছে।
পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সংস্কারের মাধ্যমে নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে, রাষ্ট্র কোনো নাগরিকের মতাদর্শিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, লিঙ্গীয় পরিচয় ও সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের কারণে বৈষম্য করবে না। পাশাপাশি, সংবিধান নাগরিকদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মৌলিক গণতান্ত্রিক ও মানবিক অধিকার সুরক্ষিত করবে, যা কোনো আইন, বিধি বা অধ্যাদেশ দিয়ে খর্ব বা স্থগিত করা যাবে না।
সাইফুল হক বলেন, নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক পথে সরকার পরিবর্তনের জন্য অবাধ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের বিকল্প নেই। কিন্তু বর্তমানে গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থা টাকার খেলায় পরিণত হয়েছে। ফলে জাতীয় সংসদ বিত্তবানদের ক্লাবে পরিণত হয়েছে। অথচ নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবে টাকার খেলা বন্ধে নির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব নেই।
তিনি আরো বলেন, আমরা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ও এক্তিয়ার কমানোর পক্ষে নই। বরং নির্বাচন কমিশন যেন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সংসদ সদস্য নির্বাচনের বয়স ২৫ বছর রাখার পক্ষে মত দিয়েছে। এ ছাড়া, সংসদের উচ্চতর কক্ষে ১৫০টি আসন নির্ধারণ করে দলসমূহের সারাদেশে প্রাপ্ত মোট ভোটের আনুপাতিক হারে আসন বণ্টনের পক্ষে মত দিয়েছে।
সাইফুল হক বলেন, এতগুলো কমিশন গঠিত হলেও সমাজে নির্মম বৈষম্য বিলোপে কেন কোনো কমিশন গঠিত হয়নি, তা বোধগম্য নয়। দুর্বৃত্ত রাজনীতি ও দুর্বৃত্ত অর্থনীতির অশুভ মেলবন্ধন থাকলে প্রকট বৈষম্য দূর হবে না এবং রাজনৈতিক সংস্কারও টেকসই হবে না।
তিনি বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের লক্ষ্যে এখন জাতীয় সমঝোতা গড়ে তোলার অসাধারণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অনেক আগে থেকেই সংস্কারের কথা বলে আসছে, ফলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজ তুলনামূলক সহজ হয়েছে। যদি কোনো পক্ষের ওপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা হয়, তবে যে অর্জন সম্ভব হতো, তাও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
সংস্কার কমিশনের দায়িত্বশীল ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাফল্যের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।
কেকে/এএম