কিছুদিন শান্ত থাকার পর রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আবারও সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব শুরু হয়েছে। চাঁদাবাজি, গুলি ও সশস্ত্র মহড়ার ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা। সর্বশেষ গত সোমবার মোহাম্মদপুর শেরশাহশুরী রোডে ব্যবসায়ী মনিরের অফিসে এসে চাঁদার টাকা দাবি করে সন্ত্রাসীরা। টাকা না দেওয়ায় তারা অফিসে গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাটি মুহূর্তেই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়। ভিডিওতে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের নাম শোনা গেলেও গোয়েন্দা সূত্র বলছে, গুলি চালানো ব্যক্তিরা ইমনের সহযোগী নয়। বরং তারা স্থানীয় এক চিহ্নিত সন্ত্রাসীর হয়ে কাজ করে। গুলির ঘটনায় তিনজন জড়িতÑ শাওন, জাবেদ ও রুবেল। এদের মধ্যে জাবেদকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
এর আগে, গত ১৬ মার্চ বিকালে ১০-১২ জনের একটি সশস্ত্র দল মোটরসাইকেলে করে লালমাটিয়া জাকির হোসেন রোডের একটি ইন্টারনেট অফিস দখল করতে গিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। তবে ভয়ে কেউ মুখ না খোলায় সে ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।
গুলির ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে কেউ কেউ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে ৩২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি রুবেল দাবি করেছেন, তিনি এ ঘটনায় সম্পৃক্ত নন এবং ঘটনার দিন লালমাটিয়ার একটি মসজিদের ইফতার পার্টিতে ছিলেন। তার বক্তব্যের প্রমাণ হিসেবে সিসিটিভি ফুটেজও রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে মহানগর উত্তর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ মোড়ল বলেছেন, ‘যদি যুবদলের কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে মোহাম্মদপুর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। তবে মামলার বাদী জিহাদুল ইসলাম দাবি করেছেন, তিনি নিজে বাদী নন এবং হামলাকারীদের তিনি চিনতে পারেন না।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মেহেদী হাসান বলেন, ‘শেরশাহশুরী রোডের ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কোনো অপরাধীকেই ছাড় দেওয়া হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা কঠোর অবস্থানে আছি।’
স্থানীয়দের ভাষ্য, এক সময় সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্যে ভুগলেও মোহাম্মদপুর কিছুদিন শান্ত ছিল। কিন্তু সম্প্রতি পরপর দুটি গুলির ঘটনায় আবারও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা নীরব চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন, কিন্তু কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। স্থানীয়দের দাবি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধে প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে। অন্যথায় মোহাম্মদপুর আবারো ভয়ংকর সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য হয়ে উঠতে পারে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক তালিকায় উঠে এসেছে মোহাম্মদপুর এলাকায় সবচেয়ে বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। তালিকা অনুসারে, মোহাম্মদপুর থানার আওতাধীন এলাকায় ২০৫ জন ছিনতাইয়ের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরে সবচেয়ে বেশি ১০৮টি ছিনতাইয়ের স্পট রয়েছে।
এর আগে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ইবনে মিজান বলেন, ‘মোহাম্মদপুর এলাকাটি নদী এবং বেড়িবাঁধের (বাঁধ) কাছাকাছি হওয়ায় বিপুলসংখ্যক গৃহহীন মানুষ এখানে বাস করে এবং কাজ করে। এ ছাড়া অপরাধ করার পর বেড়িবাঁধ ব্যবহার করে যে কেউ সহজেই গাবতলী, পুরান ঢাকা এবং কেরানীগঞ্জে পালিয়ে যেতে পারে। ‘গত বছরের অপরাধের তথ্যের ভিত্তিতে একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে, তাই পুলিশ এখন তালিকা অনুসরণ করে নজরদারি এবং টহল বাড়াতে পারবে এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে পারবে,’ যোগ করেন তিনি।
কেকে/ এএস