পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরু হয়েছে আজ থেকে। আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি উপভোগ করবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আগেই রাজধানী ছেড়েছেন অনেকে। তবে পোশাকশিল্পসহ বেশকিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শনিবার (২৮ মার্চ) অফিস হয়ে ঈদের ছুটিতে যাবে।
এদিকে দীর্ঘ ছুটিতে অনেকটাই ফাঁকা হয়ে পড়বে রাজধানী। ঢাকার নিরাপত্তায় এরই মধ্যে তৎপরতা জোরদার করেছে পুলিশ-র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবু রাজধানীর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন নগরবাসী। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মধ্যে প্রকাশ্যে ডাকাতির ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে মানুষকে। ঈদের ছুটিতে ঢাকায় চুরি-ছিনতাই-ডাকাতির মতো ঘটনা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যেই ধানমন্ডিতে র্যাব পরিচয়ে ভবনে ঢুকে ডাকাতির ঘটান ঘটেছে। এ ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা হয়। পরে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গত বুধবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ডাকাত দলের সদস্যরা নিরাপত্তাকর্মীদের মারধর করে ও বেঁধে রেখে ধানমন্ডির একটি ভবনের গয়নার দোকান ও কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে প্রায় ৩৭ লাখ মূল্যের সমপরিমাণ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে।
এদিকে ঈদে ছুটিতে নিরাপত্তা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেছেন, আসন্ন ঈদুল ফিতর সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক সতর্ক থাকবে। আশা করছি, এবারের ঈদে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটবে না। তিনি বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছুটিতে নেই। তারা সব কাজের জন্য সতর্ক থাকবে। ঈদের ছুটিতে বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকা থেকে গ্রামে যাবে। আশা করছি, ঈদে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক সতর্কতার মধ্যে থাকবে।
র্যাব পরিচয়ে ডাকাতি, পুলিশের ওপর হামলা
গত বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ পুলিশ জানায়, রাজধানীর ধানমন্ডিতে এম এ হান্নান আজাদের ‘অলংকার নিকেতন জুয়েলার্স’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ভিকারুন্নেসা স্কুলের ধানমন্ডি শাখার গলিতে তার বাড়ির নিচতলায়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় এস এম সোর্সিংয়ের অফিস আছে। এ ছাড়া, ওই বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় একটি কনসালটেন্সি অফিস এবং পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলা নিয়ে তার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট রয়েছে। বুধবার ভোর আনুমানিক ৪ টা ৪০ মিনিটের দিকে, তিনটি মাইক্রোবাস এবং একটি প্রাইভেটকারে অভিযুক্ত ডাকাতরা দলবদ্ধভাবে ওই বাসার সামনে এসে গেইটে দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ডদের জানান, তারা র্যাবের সদস্য, এবং তাদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটও আছেন। তারা বাড়িতে অভিযান চালাতে চায়, তাই দ্রুত গেট খুলতে বলে। তাদের কয়েকজনের গায়ে র্যাব লেখা জ্যাকেট পরা ছিল। সে সময় সিকিউরিটি গার্ড তাদের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলে। এর পরই অভিযুক্ত ডাকাতরা সিকিউরিটি গার্ডদের গালাগালি করতে থাকে এবং গেইট না খুললে তাদের হত্যার হুমকি দেয়। কয়েকজন গেইটের ওপর দিয়ে ওঠে জোর করে গেট খুলে ফেলে। এরপর তারা সিকিউরিটি গার্ড, কেয়ারটেকার ও গাড়ি চালককে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে এবং বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।
পুলিশ জানায়, ডাকাতরা নিচতলার অফিসের গেট ভেঙে পিয়নকে মারধর করে এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে তার কাছে থাকা নগদ ৪৫ হাজার ১০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর তারা তাকে ভয় দেখিয়ে তৃতীয় তলায় গিয়ে এস এম সোর্সিংয়ের অফিসের গেইট ভাঙে। এ সময় গেইট ভাঙার শব্দ পেয়ে চতুর্থ তলায় থাকা এস এম সোর্সিংয়ের তিন অফিস সহকারী তৃতীয় তলায় নেমে আসে।
ডাকাতরা তাদেরও আটক করে মারধর করে এবং অফিস ও বাসার চাবি দিতে বলে। তারা চাবি নিয়ে তৃতীয় তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে এবং অফিসের ড্রয়ার ভেঙে নগদ ২২ লাখ টাকা লুট করে নেয়। এ ছাড়া, অফিসের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। একটি দল চতুর্থ তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে এবং আলমারি ভেঙে নগদ ১৩ লাখ টাকা লুট করে নেয়। পরে, তারা মালিক এম এ হান্নান আজাদের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। সেখানে তারা এক লাখ ৫০ হাজার টাকা, স্বর্ণের কানের দুল ও চেইনসহ আনুমানিক আড়াই ভরি স্বর্ণ (যার মূল্য তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা) লুট করে নেয়।
ডাকাতরা মালিক এম এ হান্নানকে জোর করে নিচে নিয়ে গাড়িতে উঠানোর চেষ্টা করে। তবে ধানমন্ডি থানার একটি টহল টিম ওই বাড়ির সামনে হাজির হয়ে তাকে ডাকাতদের হাত থেকে উদ্ধার করে। এ সময় ডাকাতরা তাদের হাতে থাকা ছেনি ও রেঞ্জ দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। তাদের হামলায় পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হন। পরে, আশেপাশের লোকজনের সহায়তায় পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে।
১৫ হাজার পুলিশের নিরাপত্তা বলয়ে থাকবে রাজধানী
পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ৯ দিনের সরকারি ছুটিতে রাজধানীতে বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে এ সময় মহানগরে অন্তত ১৫ হাজার পুলিশ তৎপর থাকবে। রাস্তায় তল্লাশিচৌকি বসানোর পাশাপাশি বিপণিবিতান ও আবাসিক এলাকায় টহল জোরদার করা হবে।
ডিএমপি সূত্র জানায়, ঈদ ঘিরে অনেক মানুষ ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন। এতে বাসাবাড়ি, ফ্ল্যাট ও অফিস ফাঁকা হয়ে যাবে। ফাঁকা ঢাকায় অপরাধ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে নগরবাসী। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি, এই ভয়ের অন্যতম কারণ। এসব বিষয় মাথায় রেখে ঈদের আগে ও পরে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছে ডিএমপি।
নগরবাসীকে উদ্দেশ করে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিজ দায়িত্বে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি, আমাদের ব্যবস্থাপনাটা আমরা করব।
ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ঈদে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ ঠেকাতে রাতের বেলায় বাড়ানো হবে পুলিশি টহল। নিরাপত্তা জোরদার করা হবে বাস টার্মিনাল, লঞ্চ ও রেলস্টেশনে। পুরান ঢাকা ছাড়াও মহানগরের বিভিন্ন এলাকার সোনার মার্কেটে থাকবে পুলিশের কড়া নজরদারি। বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইতিমধ্যে ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার, আড়তের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে স্পর্শকাতর স্থান, সড়ক, স্থাপনা, বিপণিবিতান, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনালে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। ছিনতাইকারী, ডাকাত, অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যদের ধরতে পুলিশ ও র্যাবের বিশেষ টিম সক্রিয় রয়েছে।
কেকে/ এএস