সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫,
১৭ চৈত্র ১৪৩১
বাংলা English

সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫
শিরোনাম: চীন সফর শেষে দেশে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      চাঁদ দেখা গেছে, সৌদি আরবে ঈদ রোববার      দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন চরমোনাই পীর      ঈদের দিন বন্ধ থাকবে মেট্রোরেল      অস্ট্রেলিয়ায় ঈদুল ফিতরের তারিখ ঘোষণা      ঈদের ছুটিতে পর্যটক বরণে প্রস্তুত মৌলভীবাজার      রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত চীনের      
গ্রামবাংলা
ঈদের আমেজ নেই চাঁদপুরের ৫০ হাজার জেলে পরিবারে
সুমন আহমেদ, মতলব (চাঁদপুর)
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০২৫, ৬:৪১ পিএম আপডেট: ২৮.০৩.২০২৫ ৬:৪৮ পিএম  (ভিজিটর : ১০৮)
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

কয়েক দিন পরই পবিত্র ঈদুল ফিতর। কিন্তু আনন্দের রেশমাত্র নেই চাঁদপুরের প্রায় ৫০ হাজার জেলে পরিবারে। জাটকা রক্ষায় দুই মাস (মার্চ-এপ্রিল) নদীতে মাছ ধরা বন্ধ। তাই সন্তানদের জন্য নতুন পোশাক কিনতে পারছেন না তারা। এমনকি ঈদের দিন চিনি-সেমাই কেনারও সামর্থ্য নেই অনেকের। কেউ কেউ আশা করছেন, ঈদের আগে দু-একদিন ইলিশ ধরতে পারলে বিক্রি করে খরচটা চালানো যেত। কিন্তু সে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ঈদ উপলক্ষে বিপুলসংখ্যক জেলেকে সহযোগিতা করা আপাতত সম্ভব না হলেও কয়েকশ অতি দরিদ্র জেলেকে সরকারের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার দেওয়া হয়েছে।

নদীর পাড় ঘুরে দেখা গেছে, মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বেকার সময় পার করছেন অধিকাংশ জেলে। ১ মে থেকে মাছ ধরা শুরু হবে। তাই অনেকে আবার জাল সেলাই এবং নৌকা মেরামতের কাজে ব্যস্ত।

জাল মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাঁদপুরের জেলেপল্লীর জেলেরা।

জাল মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাঁদপুরের জেলেপল্লীর জেলেরা।


মতলব উত্তর উপজেলার এখলাছপুর এলাকার জেলে মফিজল সরকার বলেন, গত বছরগুলোতে মাছ ধরেই যে উপার্জন করেছি, তা দিয়ে কোনোরকম সংসার চলেছে। ঈদে ছেলে-মেয়ে, বাবা-মাকে নতুন কাপড় দিয়েছি। তবে এবারের ঈদে সমস্যার মধ্যে আছি। ঈদের আর মাত্র কয়েক দিন আছে, এখনো জামা-কাপড় কিনতে পারিনি। ঘরে বাচ্চারা কান্নাকাটি করে। আমরা তো গরিব মানুষ। ৫-১০ হাজার টাকা খরচ করে ঈদের বাজার করার সামর্থ্য নেই। সেমাই-চিনি কিনতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নদীতে মাছ ধরতে পারলেই কেবল সেমাই-চিনি, সন্তান ও নিজেদের জন্য কাপড় নিতে পারতাম।

ষাটনল এলাকার জেলে রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকার দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দিছে, আমরা তা পালন করছি। সরকার যে সহযোগিতা দেয় তা আমি পাই না। আমরা খাইয়া, না খাইয়া খুব কষ্টে দিন কাটাইতাছি। গত এক সপ্তাহের বেশি আমাগো সংসার চলে না। বউ-পোলাপাইন নিয়া খাইয়া-না খাইয়া আছি। আমাগো কোনো কামকাজ নাই। এমন একটা ঈদ আইতাছে, কিন্তু কিছু করার আমাগো পক্ষে সম্ভব না। তিন-চারটা বাচ্চা স্কুল-মাদ্রাসায় পড়াই, তাদের পড়ালেখাও বন্ধ। বেতন দিতে পারি না। আমরা খুব অসহায় অবস্থার মধ্যে আছি। সরকার কিছু সাহায্য দিলে উপকার হইত।

বৃদ্ধ জেলে সাহেব আলী বলেন, ৫০ বছর ধরে নদীতে জাল বাই। কিন্তু এই বছরের মতো এমন অবস্থা দেখি নাই। আমার চার মেয়ে এক ছেলে। মেয়েগো স্কুল বন্ধ, ছেলের মাদ্রাসা বন্ধ। রুজি নাই, পড়ামু কি দিয়া? মাস্টারতো আগে চাইব বেতন। বেতনের টাকা না দিতে পারলে পিডায়। আর কিস্তির টাকা তো দিতেই হয়। সেদিন কিস্তির টাকা দেওয়ার জন্য ঘরের ছয় খান টিন বেইচ্চা দিছি। এখন ভাত যে খামু হেই টাকাও নাই। তাই ঈদে আমাগো কোনো উপায় নাই। একটা গেঞ্জি কেনার মতো অবস্থা নাই। এমন আরো অনেক জাউল্লা আছে, বেকের (সবার) একই অবস্থা।

জেলে বশির হোসেন বলেন, আমরা নদীর ওপর নির্ভরশীল। পোলাপাইনের লেখাপড়ার খরচ, সংসার খরচ দিয়াই আমরা কুলাইতে পারি না। পোশাক, টাকা-পয়সা এসব পোলাইপাইনকে আমরা দিতে পারি না। তারপরও বাচ্চাদের মুখে দিকে তাকিয়ে ঋণ করে লুঙ্গি-জামা দিছি। হয়তো চিনি-সেমাই মিলবে। কিন্তু ঈদের দিনের জন্য এক কেজি মাংস কিনতে পারব না। কারণ, এক কেজি মাংস কিনতে ৭৫০ টাকা লাগবে।

জেলে সোহেল বলেন, ঈদ আইয়া পড়ছে। কিন্তু এখনো বাচ্চাদের জামা-কাপড় দিতে পারি না। নদীতে নামতে পারলে হয়তো কিছু দিতে পারতাম। এবারের ঈদে নিজেও কিছু নিতে পারমু না, তাগও কিছু দিতে পারমু না। চলতেই তো কষ্ট হইতাছে। আমাদের কাছে টেকা-পইসা নাই, চিনি-সেমাই এগুলো মনে হয় এবার আমাগো কপালে জুটব না।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, চাঁদপুরে ৪৪ হাজার ৩৫ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এটা বড় সংখ্যক কমিউনিটি। এখানে তো এক-দুইশ লোক না। তবে সরকার সাধ্যমতো চেষ্টা করছে। জেলেদের বিকল্প আয়বর্ধকমূলক উপকরণ হিসেবে সেলাই মেশিন, ছাগল, গরু ও পরিবেশবান্ধব জালসহ বিভিন্ন উপকরণ দেওয়া হয়েছে। তাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য এগুলো করা হচ্ছে। ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় নিবন্ধনকৃত প্রত্যেক জেলেকে প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চার মাসে ১৬০ কেজি চাল দেওয়া হয়। চালের অর্ধেক ইতোমধ্যে জেলেদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, বর্তমান সরকার জেলেদের চাল, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করছে। ঈদকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে জেলেদের সরকারের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার দেওয়া হয়েছে। সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে যারা খুব দরিদ্র তাদের ঈদ উপহার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নিবন্ধিত সব জেলেকে ঈদের আগেই সরকারি চাল সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের সহায়তা বাড়ানোর বিষয়টি সরকারিভাবে চিন্তা করতে হবে।

কেকে/এএম

মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

লোহাগাড়ায় বাস সংঘর্ষে নিহত ৫
শহিদ আবু সাঈদের পরিবারকে বেরোবি উপাচার্যের ঈদ সামগ্রী প্রদান
মুন্সীগঞ্জে ১০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি
ঈদের দিন ঘরে বসে থাকার সময় শেষ: আসিফ মাহমুদ
রাজধানীতে ঈদ আনন্দ মিছিল শুরু

সর্বাধিক পঠিত

শৈশবের ঈদ বনাম আধুনিক ঈদ
ঈদের কেনাকাটার আনন্দে নতুন জুটি, আসছে ‘ঈদ শপিং’
পটুয়াখালীতে ২২ গ্রামের মানুষ ঈদ উদযাপন করছে আজ
নালিতাবাড়ীতে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে ৩ জনের কারাদণ্ড
মাদক সেবীদের পক্ষ নিয়ে সাংবাদিক পেটালেন যুবদল নেতা গেন্দা

গ্রামবাংলা- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close