সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫,
১৭ চৈত্র ১৪৩১
বাংলা English

সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫
শিরোনাম: চীন সফর শেষে দেশে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      চাঁদ দেখা গেছে, সৌদি আরবে ঈদ রোববার      দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন চরমোনাই পীর      ঈদের দিন বন্ধ থাকবে মেট্রোরেল      অস্ট্রেলিয়ায় ঈদুল ফিতরের তারিখ ঘোষণা      ঈদের ছুটিতে পর্যটক বরণে প্রস্তুত মৌলভীবাজার      রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত চীনের      
খোলাকাগজ স্পেশাল
আগের মতোই চলছে চাঁদাবাজি
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০২৫, ১১:৩০ এএম  (ভিজিটর : ১১৬)
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

গত পাঁচ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে একের পর এক চাঁদাবাজির কারণে রীতিমত আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে দেশের সাধারণ মানুষ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার পতনের পরও আগের মতোই চলছে চাঁদাবাজি। রাজধানীসহ সারা দেশেই বেড়েছে তাদের উৎপাত। নীরব ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন। অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। এ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারসহ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, চাঁদাবাজির হাত বদল হয়েছে। ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ নেতাককর্মীরা করত। তারা পালানোর পর এখন বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরা করছেন।

৫ আগস্ট-পরবর্তী বাংলাদেশে আগের মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজির মতো ঘটনাগুলো চলছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) কুমিল্লার মুরাদনগরে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শত-সহস্র শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা নতুন স্বাধীনতার কথা বলছি। কিন্তু আগের মতো এখনো সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজির মতো ঘটনাগুলো চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, আমাকে যে কেউ একটা টোকেন ধরিয়ে দিল, আমাকে ৫০ টাকা ১০০ টাকা দিতে হবে। আবার যারা চাঁদা আদায় করে, তারা মনে করে চাঁদাবাজি তাদের অধিকার। তারা মনে করে অতীতে এভাবে চলে আসছে, এখন কেন চলবে না?

এ সময় তিনি চাঁদাবাজদের হুঁশিয়ারি করে বলেন, যারা মনে করে চাঁদা নেওয়া আমার অধিকার, আমি তাদের একটি বার্তা দিতে চাই, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর এ ধরনের কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদেরা যে জন্য রক্ত দিয়েছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। পূর্ববর্তী সময়ে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসসহ যে বিষয়গুলো সমাজকে ধ্বংস করেছে, তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করেছে, সে বিষয়গুলো শক্ত হাতে দমন করা হবে।

এর আগে ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে বাজার সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজি নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, বাজারে আগের মতোই চাঁদাবাজি চলছে। এসব চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে রাজনৈতিক দলগুলো। তাই বাজারব্যবস্থায় সুস্থ ধারা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা দরকার।
 
অভিযোগ বিএনপির দিকে


দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সবজি, মসলা, মাছসহ নানান পণ্য নিয়ে প্রতিদিন কয়েকশ ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান আসে ঢাকায় সবচেয়ে বড় কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারে। বাজারে পণ্য আনার পর দুই ধাপে চাঁদার টাকা দিতে হয় বলে জানিয়েছেন গাড়ি চালক ও ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে গাড়ি রাখার জন্য প্রথমধাপে আকারভেদে দিতে হয় একশ থেকে তিনশ টাকা। এরপর পণ্য খালাস করার জন্য ফের ট্রাকপ্রতি গুনতে হয় কমপক্ষে এক হাজার টাকা।

ঢাকার একজন ব্যবসায়ী বলেন, আগে চাঁদা দিতে হতো একজনরে, এখন দিতে হইতেছে চার-পাঁচজনরে। তাহলে কীভাবে ভালো থাকি বলেন?

নাম প্রকাশ না শর্তে অন্য একজন ব্যবসায়ী বলেন, ঢাকায় আসার পর সবজির দাম বেড়ে যায়। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর কিছুদিন কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজি বন্ধ ছিল। কারণ তখন ছাত্রগো ভয়ে কেউ সাহস পাইতো না। কিন্তু কিছুদিন যায়তে না যায়তেই আবার সব আগের মতো।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী পরিচয়েই এখন চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। কেউ আইয়া কয় যুবদল, কেউ ছাত্রদল। আরো আছে শ্রমিক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল। একেক সময় একেক গ্রুপ আহে। তবে বিএনপির সুপরিচিত কোনো নেতা এখন পর্যন্ত সশরীরে এসে চাঁদার টাকা দাবি করেননি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

কারওয়ান বাজারের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা ঢাকার গুলিস্তানের। প্রতিদিন সকাল হতেই গুলিস্তান মোড় ও এর আশপাশের সড়কের ফুটপাত দখল করেন হকাররা। দুপুর গড়াতেই মূল সড়কও দখলে চলে যায় তাদের। স্থানীয়রা বলছেন, চাঁদাবাজিই গুলিস্তানের ফুটপাত ও সড়কের এই দুরাবস্থার জন্য দায়ী।

গুলিস্তানের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম আসাদ বলেন, এইডা এখন আর কোনো রাস্তা নাই। চাঁদাবাজির আখড়ায় পরিণত হইছে। খোঁজ নিয়ে দেখেন হকারদের কে কত টাকা দিয়ে তারপর বসছে।

হকারদের একজন বলেন, টাকা ছাড়া কেউ এখানে বসতে পারে? আওয়ামী লীগ আমলে যা দিয়া লাগতো এখনো তা-ই দেওয়া লাগে।

গুলিস্তানের ফুটপাত ও সড়কে অবৈধভাবে যেসব দোকান বসিয়ে থেকে নিয়মিতভাবে চাঁদা আদায় করা হয়, সেগুলোর সংখ্যা কমপক্ষে তিন হাজার বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রায় সারা দেশেই আওয়ামীপন্থিদের স্থান দখল করে বাজার কমিটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বিএনপিপন্থি ব্যবসায়িক নেতারা।

কারওয়ান বাজারেও সেটার ব্যতিক্রম ঘটেনি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটনার পর সেখানকার কিচেন মার্কেটেও নতুন করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেই কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন আব্দুর রহমান। তিনি যুবদলের তেজগাঁও থানার আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব পদেও ছিলেন। যদিও চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠার পর তাকে সম্প্রতি দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এদিকে গুলিস্তানে চাঁদাবাজিতে অভিযুক্ত শাকিল এবং সেলিম হকারদের কাছে নিজেদের স্থানীয় বিএনপির নেতা পরিচয় করিয়ে দিলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে, তারা আসলে কর্মী।

কঠোর অবস্থানে বিএনপি


সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের বিষয়ে বিএনপি কঠোর অবস্থানে বলে বলছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। অভিযোগ পেলে সেগুলো খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আমরা পুলিশের হাতে পর্যন্ত তুলে দিচ্ছি।

পাঁচ আগস্টের পর দলটির বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করতে দেখা গেছে। দলীয় নির্দেশনা না মানায় গত সাত মাসে প্রায় দেড় হাজার নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলেও বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে দলটির ১২টিরও বেশি কমিটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

তারপরও চাঁদাবাজির মতো ঘটনার সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের নাম কেন বার বার সামনে আসছে? এ বিষয়ে দলটির সিনিয়র নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আসলে বাংলাদেশের কালচারটাই নষ্ট করে দিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের দেখানো পথে বিএনপি নেতাকর্মীরা যেন না হাঁটেন, সেই প্রচেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

বিএনপির বাইরে গত কয়েক মাসে ফেনীতে জামায়াতে ইসলামীর জেলা পর্যায়ের এক নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠতে দেখা গেছে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর জাকির হোসেন নামের ওই নেতাকে বহিষ্কার করেছে দলটি। তার বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলাও হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া গত সাত মাসে বিভিন্ন স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধেও চাঁদাজাবির অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে চলতি মার্চ মাসের শুরু দিকে রংপুরে নাহিদ হাসান খন্দকার নামে এক নেতার চাঁদা দাবির ভিডিও এবং অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। জেলার হাজির হাট এলাকায় গ্রীন সিটি ইকো পার্ক নির্মাণ প্রকল্পের এক কর্মকর্তার কাছে এক লাখ টাকা দর-কষাকষির ওই ভিডিও সামনে আসার পর অভিযুক্ত নাহিদকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয় প্ল্যাটফর্মটি। তবে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অন্যদিকে, ইকোপার্ক কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।

ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজির অভিযোগে ‘ছাত্র সমন্বয়ক’ পরিচয় দেওয়া দুজনকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা। তারা হলেন, শাহরিয়ার সিকদার ও আবির চৌধুরী।

বুধবার (২৬ মার্চ) ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ওই দুজনসহ আরো কয়েকজন আগ্রাবাদ এলাকার বরিশাল হোটেলে গিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন বলে স্থানীয়রা আমাদের জানিয়েছেন। স্থানীয়রা তাদের আটক করে এবং পুলিশকে খবর দেয়। এরপর আমরা দুজনকে হেফাজতে নিই।

এদিকে গত রোববার রাজধানীর উত্তরায় একটি হোটেলে সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে তানজিলা মাহমুদা খানম (৩১) নামের এক নারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক আবু সাঈদ বলেন, তার বিরুদ্ধে উত্তরার বেইজিং সমন্বয় পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে একটি মামলা রয়েছে।

দলগুলো বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও মাঠের বাস্তবতা ভিন্ন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তারা বলছেন, পাঁচ আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শুধু বদল হয়েছে মানুষ, বদলেছে ব্যানার, নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে চাঁদাবাজি। এর থেকে কখনও রেহাই পাওয়া যাবে কি না, এই প্রশ্নের জবাব পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।

কেকে/এএম
আরও সংবাদ   বিষয়:  চাঁদাবাজি   সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড   অন্তর্বর্তী সরকার   আওয়ামী লীগ   বিএনপি   ছাত্র সমন্বয়ক  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ড. ইউনূসকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ
মিয়ানমারে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২০০০ ছাড়াল, ৭ দিনের জাতীয় শোক
আমরা দেশে শান্তি চাই, কারো ভয়ে যাতে ভীত হতে না হয়: প্রধান উপদেষ্টা
ভারতে ঈদের নামাজ আদায়কারীদের ওপর ফুল ছিটালেন হিন্দুরা
কালাইয়ে প্রিমিয়ার লীগ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধন

সর্বাধিক পঠিত

শৈশবের ঈদ বনাম আধুনিক ঈদ
ঈদের কেনাকাটার আনন্দে নতুন জুটি, আসছে ‘ঈদ শপিং’
নালিতাবাড়ীতে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে ৩ জনের কারাদণ্ড
মাদক সেবীদের পক্ষ নিয়ে সাংবাদিক পেটালেন যুবদল নেতা গেন্দা
ভোলায় বাবাকে খুন করে পালিয়েছে ছেলে

খোলাকাগজ স্পেশাল- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close