শৈশবের ঈদ ছিল এক অন্যরকম আনন্দের উৎসব। ঈদের চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হতো বাচ্চাদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। পুরো পাড়া-প্রতিবেশির মাঝে যেন এক নতুন প্রাণ সঞ্চারিত হতো। নতুন জামা-কাপড় কেনার আগ্রহ, সেলাইয়ের কাজ চলছে কি না, সেটি তদারকি করা—সবকিছুতেই এক অন্যরকম আনন্দ লুকিয়ে থাকত। মনের ভেতর বইতো খুশির হাওয়া।
সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠেই গোসল করে নতুন পোশাক পরার আনন্দ ছিল বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো। আতর-সুগন্ধি লাগিয়ে ঈদগাহে যাওয়ার পথে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়া, কোলাকুলি করা—এসব স্মৃতিতে এখনও মনের কোণে ভেসে উঠে। ঈদের নামাজ শেষে বাবা-চাচাদের সঙ্গে বাড়ি ফিরে সেমাই-মিষ্টির আয়োজনে বসা ছিল অবধারিত।
গ্রামের ঈদ মানেই ছিল সবার ঘরে ঘুরে ঘুরে মিষ্টি খাওয়া, আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় যাওয়া, বড়দের সালামি পাওয়া। বিকালে নতুন জামা পরে মাঠে খেলতে যাওয়া কিংবা মেলায় ঘুরতে যাওয়া ছিল ঈদের অন্যতম আনন্দের অংশ।
কিন্তু সময় বদলেছে, আধুনিক জীবনে ঈদের আনন্দের রূপও বদলে গেছে। এখন ঈদের কেনাকাটা হয় অনলাইনে, দোকানে গিয়ে জামা-প্যান্ট কেনার সেই উন্মাদনা আর আগের মতো নেই। ঈদের নামাজ শেষে অনেকেই বাসায় ফিরে মুঠোফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আত্মীয়-স্বজনের বাসায় যাওয়া অনেকটাই কমে গেছে, ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ও অনেক সময় সীমাবদ্ধ থাকে সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট আর ইমোজির ভেতর।
শৈশবের সেই প্রাণবন্ত ঈদের আনন্দ হয়তো কিছুটা ফিকে হয়ে এসেছে, কিন্তু স্মৃতির পাতায় সেই দিনগুলো আজো জ্বলজ্বলে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঈদের আনন্দের ধরন বদলালেও, পারিবারিক মিলন, ভালোবাসা আর একসঙ্গে থাকার আবেগ যেন কখনো না হারিয়ে যায়—এই হোক আমাদের কামনা।
কেকে/এএম