শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫,
২৮ চৈত্র ১৪৩১
বাংলা English

শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫
শিরোনাম: আইন হাতে তুলে নিতে চাইলেই পুলিশ একশনে যাবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা      জ্যোতির সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের রানের পাহাড়       জবিতে ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’, মার্কিন দূতাবাসে স্মারকলিপি      কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা নিয়ে বসে থাকা সাজ্জাদের স্ত্রী পেলেন আগাম জামিন      পূর্বাচলে প্লট দুর্নীতি: শেখ হাসিনাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা      শুল্ক ইস্যুতে ড. ইউনূসের অনুরোধ রাখলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প      তথ্য উপদেষ্টার বাবার ওপর হামলা, বিএনপির ২ নেতা আটক      
খোলাকাগজ স্পেশাল
ড. ইউনূস-মোদি বৈঠক
হাসিনাকে চায় বাংলাদেশ, সুসম্পর্ক চায় ভারত
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৫, ৯:৩০ এএম  (ভিজিটর : ১২০)
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

ব্যাংককে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সকারের প্রধান উপদেষ্টা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় ব্যাংককের সাংগ্রিলা হোটেলে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। শেখ হাসিনার শাসনের পতনের পর দুই দেশের সরকারপ্রধানের মধ্যে এটিই প্রথম দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। 

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের প্রসঙ্গ তুলেছেন বলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, বৈঠকে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ, ভারতে বসে উনি (শেখ হাসিনা) বিভিন্ন ইনসেনডিয়ারি (আক্রমণাত্মক) মন্তব্য করছেন, সেসব বিষয়ে কথা বলেছেন। 

বৈঠকটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ ও গঠনমূলক হয়েছে উল্লেখ করে প্রেস সচিব আরো বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট যতগুলো ইস্যু আছে, তার সব কটি নিয়ে কথা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব কটি বিষয় আলোচনায় তুলেছেন। সীমান্ত হত্যা বন্ধ, গঙ্গার পানি চুক্তির নবায়ন, তিস্তা চুক্তির প্রসঙ্গ এসেছে। দুই শীর্ষ নেতার আলোচনা ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ হয়েছে।

বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আগ্রহ প্রকাশ করে চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন ঢাকায় কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ হলেও, ভারতীয় কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেননি বিষয়টি। ফলে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এক ধরনের অনিশ্চয়তা ছিল বৈঠকটি নিয়ে। 

নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এ বৈঠকে এক দশক আগের স্মৃতিময় এক ছবি তাকে উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, ২০১৫ সালের ৩ জানুয়ারি মুম্বাইয়ে ১০২তম ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূসকে স্বর্ণপদক পরিয়ে দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সে ছবিই দশ বছর পর মোদিকে উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশের বর্তমান সরকারপ্রধান অধ্যাপক ইউনূস। 

এদিকে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা তার সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তিনি বলেন, আমি আমাদের জনগণকে আশ্বস্ত করেছি যে, প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন হলে আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব অনুযায়ী আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করব। 

বাংলাদেশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ১৯৭১ সালে লাখ লাখ সাধারণ নারী-পুরুষ, শিশু ও যুবক একটি নৃশংস সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসব্যাপী গণহত্যায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন। আমাদের জনগণ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়সংগত ও স্বাধীন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিল, যেখানে প্রতিটি সাধারণ মানুষ তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে। দুঃখজনকভাবে গত ১৫ বছরে আমাদের জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজ ক্রমাগত তাদের অধিকার ও স্বাধীনতা সংকুচিত হতে দেখেছে। তারা রাষ্ট্রের প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের অবক্ষয় ও নাগরিক অধিকারের অবমাননা প্রত্যক্ষ করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সাধারণ জনগণ একটি নৃশংস স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়েছেন। কিন্তু স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে প্রায় দুহাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই তরুণ। প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের মধ্যে ১১৮টি শিশু। বাংলাদেশের জনগণ তার ইতিহাসে এক নবজাগরণ প্রত্যক্ষ করেছে। যেসব ছাত্রনেতা এ গণজাগরণে নেতৃত্ব দিয়ে শেখ হাসিনার দুর্নীতিগ্রস্ত ও স্বৈরাচারী শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করেছেন, তারা তাকে অনুরোধ করেছিলেন এ সংকটময় মুহূর্তে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে। আমি আমাদের জনগণের স্বার্থে এ দায়িত্ব গ্রহণে সম্মত হয়েছি। 

সরকারপ্রধান আরো বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, তারা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই প্রবৃদ্ধি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বলিষ্ঠ ও সুদূরপ্রসারী সংস্কার গ্রহণ করবে। আমরা সুশাসন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ও অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ বিষয়গুলোই আমাদের পরিকল্পিত সংস্কারের মূল লক্ষ্য। সরকার ইতোমধ্যে বিচারব্যবস্থা, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সংবিধান সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করেছে, যাতে জনগণের মালিকানা, জবাবদিহি ও কল্যাণ নিশ্চিত করা যায়। এ কমিশনগুলো ইতোমধ্যে তাদের সুপারিশ জমা দিয়েছে, যা বর্তমানে সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করেছি। আমি নিজেই যার নেতৃত্ব দিচ্ছি এবং এতে ছয়টি কমিশনের প্রধানরা রয়েছেন। এ কমিশনগুলো যে সুপারিশগুলো জমা দিয়েছে, তা পর্যালোচনা এবং গ্রহণ করার জন্য এ কমিশন গঠন করা হয়েছে। আমরা যখন বাংলাদেশকে পুনর্গঠন করছি, তখন আমরা দেশের প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে অবিচলভাবে কাজ চালিয়ে যাব, তারা নারী হোক কিংবা জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু হোক। 

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিমসটেক অঞ্চল বিশ্ব জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশের আবাসস্থল, যেখানে বহু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। এ চ্যালেঞ্জগুলোকে সম্ভাবনায় হিসেবে রূপান্তর করা গেলে সব দেশের জন্য বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। বিমসটেক অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আমাদের যৌথভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সীমান্ত পেরিয়ে বিদ্যুৎ বাণিজ্য এবং জ্বালানি দক্ষতা ব্যবহারে এগিয়ে আসতে হবে, যাতে আমাদের জনগণের জন্য একটি নিরাপদ ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা যায়। আমরা আমাদের বিমসটেক অঙ্গীকার অনুযায়ী কানেক্টিভিটি বাড়াতে, পারস্পরিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রসারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসার, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত গমনাগমন সহজ করা বিমসটেক জনগণের সমৃদ্ধ কল্যাণের মূল চাবিকাঠি। 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পঞ্চম বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত ‘পরিবহন কানেক্টিভিটি মাস্টার প্ল্যান’-এর সময়মতো বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু দেশ দ্বিপাক্ষিকভাবে অনেক কিছু অর্জন করেছে। তবে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একত্রীকরণ ও উন্নয়নের সুফল পেতে হলে যৌথ আঞ্চলিক উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশ এ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার স্বাক্ষরিত ‘বিমসটেক সামুদ্রিক পরিবহন সহযোগিতা চুক্তি’ বিমসটেক অঞ্চলে বিশেষ করে ভূমিবেষ্টিত দেশ ও ভারতের সাত রাজ্যের সঙ্গে কানেক্টিভিটি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমাদের বেসরকারি খাত ও নাগরিক সমাজ বিশেষভাবে চায় বিমসটেক কার্যকর, ফলপ্রসূ ও প্রকল্পভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণ করুক। 
বাংলাদেশ বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যানশিপ গ্রহণ করছে উল্লেখ করে তিনি সংস্থাটিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সম্মিলিত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সব সদস্য দেশকে সহযোগিতার আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মতভেদ উপেক্ষা করে আমাদের পারস্পরিক আস্থা ও স্বার্থে সত্যিকার অর্থে সমৃদ্ধি ভাগাভাগির মনোভাব থাকা দরকার। যা কিছু আমরা একত্রে গ্রহণ করি, তার যেন প্রভাব থাকে ও ফলপ্রসূ হয়। তিনি বিমসটেকের অধীনে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার কৌশল ও প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনরুজ্জীবিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। 

এদিকে নরেন্দ্র মোদি ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক খারাপ হয় এমন বক্তব্য পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদি আশা প্রকাশ করেছেন, ভবিষ্যতে ভারত এমন এক গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় যেখানে নির্বাচনের একটি ভূমিকা রয়েছে। গতকাল দুপুরে ব্যাংককের সাংরিলা হোটেলে ইউনূস-মোদি বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি এসব তথ্য জানান। 

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের জনকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন যে, দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা উভয় দেশের জনগণের জন্য বাস্তব সুবিধা বয়ে এনেছে। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে বাস্তবতার নিরিখে একটি ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে ভারতের আকাক্সক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, তিনি আরো বলেন, ভারত বাংলাদেশের কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের পক্ষে নয়, আমাদের সম্পর্ক মানুষে-মানুষে।

বিক্রম মিশ্রি বলেন, সীমান্তে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং অবৈধ সীমান্ত অতিক্রম প্রতিরোধ, বিশেষ করে রাতে সীমান্ত অতিক্রম ঠেকানো সীমান্ত নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বলে উল্লেখ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক পর্যালোচনা এবং এগিয়ে নেওয়ার জন্য দুই দেশের প্রতিনিধিরা বৈঠক করতে পারে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় বিশ্বাস ব্যক্ত করেছেন যে, দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থের সব বিষয় গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধান অব্যাহত থাকবে। আর এটা হবে দুদেশের দীর্ঘস্থায়ী ও পারস্পরিকভাবে উপকারী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের স্বার্থে।

বিক্রম মিশ্রি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশ সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর সদস্যদের ওপর সংঘটিত নৃশংসতার সব ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। 

নরেন্দ্র মোদি বিমসটেকের সভাপতিত্ব গ্রহণের জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ফোরামের নেতৃত্বে আঞ্চলিক সহযোগিতা আরো এগিয়ে নেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ফোরামের সদস্য দেশগুলোর নেতারা বিমসটেক কাঠামোর আওতায় আঞ্চলিক একত্রীকরণ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে পরামর্শ করা এবং সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সম্মত হয়েছেন। 

শেখ হাসিনাকে প্রত্যপর্ণের বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস অনুরোধ করেছেন কি না জানতে চাইলে বিক্রম মিশ্রি বলেন, শেখ হাসিনার যে বিষয়টি আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে অনুরোধ এসেছে, সে বিষয় নিয়ে কথাবার্তা হয়েছিল। আর আমাদের যে মুখপাত্র তিনি এ বিষয়ে আপনাদের অবগত করেছেন। আমাদের কাছে এ বিষয়ে একটি আবেদন এসেছিল। তা নিয়ে আর কিছু বলা আমার এখন সমীচীন হবে না। সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে দুই নেতার বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, সেখানে (বাংলাদেশে) যে অবস্থা আর তা নিয়ে দুই নেতার মধ্যে যে কথাবার্তা হয়েছে, আমি আমার বক্তব্যে যেমনটি জানিয়েছি, প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি খোলাখুলি সামনে এনেছেন। এ বিষয়ে আমাদের গভীর উদ্বেগ তিনি ব্যক্ত করেছেন। বাকি সমাজে এর যে প্রভাব তা নিয়ে তিনি অধ্যাপক ইউনূসকে অবগত করেছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের যে দায়িত্ব সেটা তারা পালন করবে বলে তিনি আশা করেন।  
বাংলাদেশে নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিক্রম মিশ্রি বলেন, যে কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিয়মিত অন্তর্ভক্তিমূলক নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়েও অধ্যাপক ইউনূসকে অবগত করেছেন। জানিয়েছেন যে, ভবিষ্যতে আমরা একটি গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে পাব। এ ব্যাপারে নির্বাচনের একটি ভূমিকা আছে তা সবাই জানেন। 

এদিকে মোদির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের ফলে দু-দেশের মধ্যকার বহুদিনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইউনূস ও মোদির বৈঠকটি একটি আশার আলো তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বহুদিনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে এই বৈঠকের মাধ্যমে। তিনি আরো বলেন, এ বৈঠকের মাধ্যমে নতুন সম্ভবনা সৃষ্টি হয়েছে। বৈঠকে তারা দুজনই আন্তরিক ছিলেন, যা দুদেশের মানুষের সম্পর্ক উন্নয়নে আন্তরিকতা বাড়বে। 

মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও গুরুত্বের সঙ্গে এসেছে। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা শিরোনাম করেছে, ‘২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পর ভারতের মোদি এবং বাংলাদেশের ইউনূসের প্রথম বৈঠক।’ দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের শিরোনাম, ‘শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর ব্যাংককে বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী মোদির বৈঠক।’ দ্য হিন্দুস্তান টাইমস শিরোনাম করেছে, ‘শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর উত্তেজনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের ইউনূসের প্রথম আলোচনা।’

এদিকে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডের সামাজিক উন্নয়ন ও মানব নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ভারাওয়াত সিল্পা-আর্চা এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী জিরাপর্ন সিন্ধুপ্রাই অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ ছাড়া গতকাল তিনি সম্মেলনের ফাঁকে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হরিণী অমরাসুরিয়া ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন। 
দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গতকাল বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং থাইল্যান্ডের ন্যাশনাল অ্যান্টি-করাপশন কমিশন (এনএসিসি) একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোটের (বিমসটেক) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে এ সমঝোতা স্মারক সই হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও উপস্থিত ছিলেন। দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ও এনএসিসি প্রেসিডেন্ট সুচার্ত ত্রাকুলকাসেমসুক নিজ নিজ সংস্থার পক্ষে এ সমঝোতা স্মারকে সই করেন। 
সমঝোতা স্মারকটি বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কার্যকরভাবে লড়াই করতে সাহায্য করবে বলে আশা প্রকাশ করেন দুদক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগ আছে, এমন অনেকেই প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। আশা করি, এ সমঝোতা স্মারক তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে সাহায্য করবে।  

জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের ৪৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে এ সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এ অনুচ্ছেদে দুর্নীতি দমনে একাধিক দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে সরাসরি সহযোগিতা স্থাপনে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক চুক্তিতে প্রবেশের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, দুর্নীতি প্রতিরোধে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড একে অপরকে প্রাসঙ্গিক প্রাথমিক তথ্য দেবে, দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহে সবচেয়ে উপযুক্ত পন্থাগুলো একে-অপরকে জানাবে। এ ছাড়া দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনে প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদান, যৌথ প্রকল্প গ্রহণ, গবেষণা ও অন্যান্য সহযোগিতামূলক কার্যক্রমও পরিচালনা করবে। 

এদিকে আগামী দুবছরের জন্য বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোট বিমসটেকের চেয়ারের দায়িত্ব পেল বাংলাদেশ। গতকাল বিকালে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে এ দায়িত্ব বুঝে নেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। এরপর ড. ইউনূস তার বক্তব্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকরী বিমসটেকের ওপর জোর দেন এবং আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি ও অগ্রাধিকার উপস্থাপন করেন। 

ড. মুহাম্মদ ইউনূস মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় মিয়ানমারকে সম্পৃক্ত করার জন্য বিমসটেকভুক্ত রাষ্ট্রগুলোকে আরো দৃশ্যমান ও সক্রিয় ভূমিকা রাখান আহ্বান জানান যেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়।

এ সময় বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নেতারা সর্বসম্মতিক্রমে ব্যাংকক ঘোষণাপত্র এবং বিমসটেক ব্যাংকক ভিশন গ্রহণ করেন, যা একটি কৌশলগত রোডম্যাপ এবং এর লক্ষ্য সংগঠনটিকে টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক একীভূতকরণের দিকে পরিচালিত করবে। 

বিমসটেকের সনদ অনুসারে, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে চেয়ারম্যানের পদ বর্ণানুক্রমিকভাবে আবর্তিত হয়। শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয় অংশগ্রহণকারী নেতাদের একটি প্রতীকী গ্রুপ ছবির মাধ্যমে। এরপর থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী, বিদায়ী বিমসটেক সভাপতি স্বাগত ভাষণ দেন। মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং অন্যান্য বিমসটেক নেতারা আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়ে তাদের দেশের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে বিবৃতি প্রদান করেন। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বিমসটেক আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য বিশেষ করে বাণিজ্য, প্রযুক্তি, পরিবহন, জ্বালানি এবং সন্ত্রাসবাদ দমনের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমানভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

নীলফামারীতে যুবলীগ নেতার আত্মসমর্পণ
‘যৌক্তিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে নতুন ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে’
বাড়িতে বাবার লাশ রেখে এসএসসি পরীক্ষা দিলেন রিমা
মাইকিং করে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, আহত ২০
সংস্কার প্রস্তাব জমা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন

সর্বাধিক পঠিত

মানুষ বলে আরো ৫ বছর থাকতে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
নীলফামারীতে হাসপাতাল তত্বাবধায়কের অপসারণের দাবিতে মানবববন্ধন
সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে বিএনপি নেতার হুমকি, থানায় জিডি
শিক্ষক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে পরীক্ষা দিতে পারেনি ১৩ পরীক্ষার্থী
কেশবপুরে অবৈধ ডিড বাতিলসহ ঘের রক্ষার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

খোলাকাগজ স্পেশাল- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: kholakagojnews@gmail.com, kholakagojadvt@gmail.com

© 2024 Kholakagoj
🔝
close