সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫,
২৪ চৈত্র ১৪৩১
বাংলা English

সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫
শিরোনাম: চমকের অপেক্ষায় বাংলাদেশ       গত ১৫ বছরে অনেক চেষ্টা হয়েছে, আমি বিএনপিকে ভাঙতে দেইনি      বাধ্যতামূলক ছুটিতে ইসলামী ব্যাংকের এমডি      বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা       সন্ধ্যায় জরুরি সভা ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা      শরীয়তপুরে আ. লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, শতাধিক হাতবোমা বিস্ফোরণ      যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পালটা শুল্ক আরোপ চীনের      
খোলাকাগজ স্পেশাল
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের গলার কাঁটা হাসিনা
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: রোববার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:৩২ এএম  (ভিজিটর : ৭৫)
ছবি: খোলা কাগজ ই-পেপার থেকে

ছবি: খোলা কাগজ ই-পেপার থেকে

শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ ইস্যুতেই এখন সরগরম কূটনৈতিকপাড়া। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই শীতল হতে থাকে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক। আনুষ্ঠানিকভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ফেরত চাইলেও মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে মোদি প্রশাসন। এমন প্রেক্ষাপটে থাইল্যান্ডে বিমসটেক সম্মেলনে ইউনূস-মোদি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিস্তা চুক্তি, সীমান্ত হত্যা এসব ছাপিয়ে বড় হয়ে ওঠে হাসিনার প্রত্যর্পণ। ইউনূস-মোদি বৈঠকে সম্পর্কের বরফ কিছুটা গললেও প্রশ্ন এখন ঢাকার অনুরোধে হাসিনাকে ফেরত দেবে কি দিল্লি? মূলত দুই দেশের সম্পর্কের বিষয়টি এখন নির্ভর করছে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের ওপর। বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের গলার কাঁটা শেখ হাসিনা।
 
‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল, টেকনিকাল এন্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন’ বা ‘বিমসটেক’ সম্মেলনের ফাঁকে মোদি-ইউনূসের সাক্ষাতের পর সচেতন মহলের দাবি, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক যে আঁধারে ছিল সেখানে থেকে ইউটার্ন নিয়েছে। বরফ কিছুটা হলেও গলেছে বলে ধরে নেওয়া যায়। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। এর মধ্যে ভারতে বসে উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছিলেন হাসিনা। যা ভালো চোখে দেখেনি ঢাকা। 
 
হাসিনাকে দেশে ফেরানোর প্রশ্নে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় ফেরত না দিলে সুযোগ আছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে আইনি লড়াইয়ের। তিনি বলেন, ভারত সরকারের ইচ্ছার ওপরই এটা মূলত নির্ভরশীল। তারপরেও বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে আমার মনে হয়। বাংলাদেশ সরকার যদি চায় ভারতের কাছে চাইতে পারে, চেয়েছে তারা। ভারত যদি দিতে রাজি না হয় তাহলে বাংলাদেশের কাছে অপশন আছে ভারতীয় আদালতে গিয়ে লড়াই করার। আর স্বেচ্ছায় যদি ভারত দিয়ে দেয় তাহলে তো সমস্যা এখানেই সমাধান হয়ে যাবে।

শেখ হাসিনাকে ঢাকার কাছে প্রত্যর্পণ করবে ভারত, এমন বিশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের। শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এমন মন্তব্য করেন প্রেস সচিব। ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস যখন শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়টি উত্থাপন করেন, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতিক্রিয়া নেতিবাচক ছিল না বলে জানিয়েছেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। পোস্টে তিনি লেখেন, যখন অধ্যাপক ইউনূস শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়টি উত্থাপন করেন, তখন প্রতিক্রিয়া নেতিবাচক ছিল না। আমরা আত্মবিশ্বাসী, একদিন শেখ হাসিনাকে ঢাকায় প্রত্যর্পণ করা হবে এবং আমরা ‘শতাব্দীর সেরা বিচার প্রত্যক্ষ করব।’ প্রেস সচিব আরো লেখেন, ‘এটি স্পষ্ট যে, ভারত এখন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিকনির্দেশনা তৈরি করতে চায়। বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী অধ্যাপক ইউনূসকে বারবার বলেন যে, ভারতের সম্পর্ক বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে, কোনো একক দল বা ব্যক্তির সঙ্গে নয়। অধ্যাপক ইউনূস সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেশ কয়েকবার বলেছেন, আমরা ভারতের সঙ্গে ‘সর্বোত্তম সম্পর্ক’ চাই। তবে সেটি হবে ন্যায্যতা, সমতা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে।

আলোচনায় শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ: গত শুক্রবার ব্যাংককে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রথমবারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আলোচনায়ও এসেছে শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ। অভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি বৈঠকে তুলেছে ঢাকা। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের সাংরিলা হোটেলে ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন শেষে দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বৈঠকে দুই নেতা সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করার পাশাপাশি পারস্পরিক স্বার্থ ও উদ্বেগের বিষয়গুলোও উঠে এসেছে। বৈঠকের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলা হয়েছে, বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে বাংলাদেশের গভীরভাবে মূল্য দেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আমাদের দুই দেশের জনগণের কল্যাণের স্বার্থে সম্পর্ককে সঠিক পথে স্থাপনের লক্ষ্যে আপনার সঙ্গে একত্রে কাজ করতে চাই।’ বৈঠকের বিষয়ে নরেন্দ্র মোদি নিজের এক্স হ্যান্ডলারও লিখেছেন। তাতে বলা হয়, ‘ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে একটি গঠনমূলক ও জনগণকেন্দ্রিক সম্পর্কের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে। আমি বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা, অন্তর্ভুক্তি ও গণতন্ত্রের প্রতি ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছি। অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা করেছি এবং হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিয়ে আমাদের গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি।’

শেখ হাসিনাকে ফেরত প্রসঙ্গ: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ব্যাংককে সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। আলোচনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত আনা (প্রত্যর্পণ), ভারতে বসে তিনি যেসব উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন, সে প্রসঙ্গেও কথা হয়েছে। বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টেও উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের অনুরোধের বিষয়ে নরেন্দ্র মোদির কাছে জানতে চান। এ বিষয় এখন ভারত সরকারের কাছে বিবেচনাধীন রয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা ভারত সরকারকে অনুরোধ করছি যে তিনি আপনার দেশে থাকাকালীন এই ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।’ ব্যাংককের সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস অনুরোধ করেছেন কি না, জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি সাংবাদিকদের বলেন, ‘শেখ হাসিনার যে বিষয়টি আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে অনুরোধ এসেছে, সেই বিষয় নিয়ে কথাবার্তা হয়েছিল। আমাদের যে মুখপাত্র, তিনি এই বিষয়ে আপনাদের অবগত করেছেন। আমাদের কাছে এই বিষয়ে একটি অনুরোধ এসেছিল। তা নিয়ে আর কিছু বলা আমার এখন সমীচীন হবে না।’

ভারতের আশ্রয়ে হাসিনা: বাংলাদেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারত চলে যান শেখ হাসিনা। মূলত তখন থেকেই ভারতের সাথে আমাদের টানাপোড়েন শুরু। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ বহু মামলা দায়ের হয়েছে। যার সুনিশ্চিত প্রমাণও পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তিকে হাতিয়ার করে বারবার শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার মনে করে ভারতে আশ্রিত থাকা শেখ হাসিনা এখন দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতির পথে অন্যতম বাধা।


কেকে/এএস
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে হাবিপ্রবি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক পরিষদের ক্ষোভ ও নিন্দা
চমকের অপেক্ষায় বাংলাদেশ
গত ১৫ বছরে অনেক চেষ্টা হয়েছে, আমি বিএনপিকে ভাঙতে দেইনি
ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে চবির ফ্রিল্যান্সারদের ফাইভার বয়কট
মৌলভীবাজারে ছেলে-মেয়ের হাতে বাবা খুন

সর্বাধিক পঠিত

বাঞ্ছারামপুরে প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে মসজিদের ইমাম গ্রেফতার
বিয়ে বাড়িতে অবরুদ্ধ বরপক্ষকে উদ্ধারে গিয়ে ওসিও অবরুদ্ধ, সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে উদ্ধার
মৌলভীবাজারে ছেলে-মেয়ের হাতে বাবা খুন
মোবাইল বনাম টেলিভিশন সাংবাদিকতা
বাঞ্ছারামপু‌রে মিথ‌্যা সংবাদ প্রচা‌র করার প্রতিবা‌দে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন

খোলাকাগজ স্পেশাল- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close