কিশোরগঞ্জ জেলায় চলতি বছর ভুট্টার আবাদ করা হয়েছে ১২ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে। তার মাঝে সর্বোচ্চ আবাদ করা হয়েছে হাওর অঞ্চলের চার উপজেলায় ৭ হাজার ৭০৩ হেক্টর জমি। সবচেয়ে বেশি নিকলি উপজেলায় চাষ করা হয়েছে ৩ হাজার ১১০ হেক্টর, মিঠামইনে ২ হাজার ৮৮০ হেক্টর, বাজিতপুরে ২ হাজার ১০ হেক্টর ও অষ্টগ্রামে ৯৮০ হেক্টর জমিতে। বিকল্প ফসল হিসেবে এখন ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। উৎপাদন খরচ কম, দাম ভালো ও চাহিদা বেশি থাকায় ভুট্টা চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে তাদের।
আগের চেয়ে চলতি বছর হাওর অঞ্চলে বেড়েছে ভুট্টার আবাদ। কৃষকরা এখন ভুট্টা মাড়াই কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গত বছর লাভের মুখ দেখায় এবছর তারা ব্যাপকভাবে ভুট্টা চাষ করেছেন।
জেলার হাওর অঞ্চলে ধান চাষে প্রতিবছরই আগাম বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হন কৃষকরা। তখন মালিকদের দেনা পরিশোধে কৃষকরা হয়ে পড়েন দিশেহারা। এ অবস্থায় কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস। উঁচু ও পতিত জমিতে ভুট্টা চাষে কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছে মাঠ পর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। ফলে পালটে যাচ্ছে কৃষকের জীবন-জীবিকা ও চাষাবাদের ধরন।
ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম অলওয়েদার পথ ধরে গেলেই চোখে পড়ে মাঠের পর মাঠ সবুজ ভুট্টা ক্ষেত। দেখেই মনে হয় সবুজ ভুট্টা বাতাসের দোলায় কৃষকের সফলতার স্বপ্নগুলো হেসে বেড়াচ্ছে। এখন অপেক্ষা শুধু ফসল ঘরে তুলে, লাভের অঙ্ক গোনা। ভুট্টা চাষে খরচ কম, পরিচর্যাও তেমন লাগে না, কিন্তু লাভ প্রায় তিনগুণ। এজন্য কিশোরগঞ্জের হাওরে ভুট্টা চাষে কৃষকদের উৎসাহ বাড়ছে। বোরো মৌসুমে ধান আবাদে খরচ এবং ঝুঁকি দুটোই বেশি। এদিকে ভুট্টা চাষে লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই।
বন্যায় হাওর অঞ্চলে ধান চাষে ঝুঁকি থাকলেও ভুট্টা চাষে তেমন ঝুঁকি নেই। বর্ষার পূর্বেই কৃষকরা ভুট্টা ঘরে তুলতে পারে। ভুট্টা চাষে কমবেশি লাভ থাকে। আর তাই আর্থিকভাবেও এগিয়ে যাচ্ছে এখানকার কৃষক।
নিকলি উপজেলার শিংপুর গ্রামের ভুট্টা চাষি আমিনুল ইসলাম বলেন, ভুট্টা চাষে লাভ বেশি ও নিরাপদ। বিঘাপ্রতি ২০-২২ হাজার টাকা খরচ হয়। ভুট্টা ভালো হলে বিক্রি করা যায় ৪০-৪৫ হাজার টাকা। সার, কীটনাশক ও সেচের দিক থেকে দেশি জাতের ভুট্টার চেয়ে হাইব্রিড ভুট্টায় খরচ কম। ভুট্টা গাছ ও মাড়াই করার পর যে অবশিষ্টাংশ থাকে তা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
কৃষক রমজান আলী জানান, অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি গত বছর ভুট্টা চাষ করেছিলাম। ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর ভুট্টার চাষ বাড়িয়েছি। যদি ভুট্টার দাম ঠিক থাকে তাহলে এ বছরেও বেশ লাভ হবে।
মিঠামইন হাওরের ভুট্টা চাষি সফিউল ইসলাম বলেন, আমি গতবারও এই জমিতে ভুট্টা চাষ করি লাভ বেশি হওয়ায় এবারো চাষ করেছি আলহামদুলিল্লাহ গতবারের তুলনায় এবার আরো বেশি ফলন হবে বলে আশা করছি, বর্তমানে আমাকে দেখে অনেক কৃষক ভুট্টা চাষ শুরু করেছেন। এটি লাভজনক একটি ফসল। তা ছাড়া, জমি পড়ে থাকার চেয়ে ভুট্টা চাষ করে অনেক কৃষক তাদের পরিবার নিয়ে এখন ভালো আছেন।
এদিকে ভুট্টা চাষ লাভজনক ও ঝুঁকিমুক্ত হওয়ায় স্থানীয় অনেক কৃষক আগামীতে ভুট্টা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
অষ্টগ্রাম হাওরের আরেক কৃষক সুরুজ মিয়া বলেন, আমি কখনো ভুট্টা চাষ করিনি। কিন্তু প্রতিবছরই দেখছি আমাদের হাওরে ভুট্টার আবাদ বাড়ছে। তাই আগামীতে আমিও ৫–৭ খানি জমিতে ভুট্টা চাষ করার পরিকল্পনা নিয়েছি। আর তাই নিয়মিত কৃষি অফিসেও যোগাযোগ করছি।
করিমগঞ্জ উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা বরাবরই কৃষকদের ভুট্টা চাষে প্রণোদনা দিয়ে আসছি। ভুট্টা চাষে লাভ বেশি, খরচ কম। তা ছাড়া জমি পড়ে থাকার চেয়ে আমরা কৃষকদের ভুট্টা চাষে আগ্রহী করছি। এতে তারাও অনেক বেশি লাভের মুখ দেখছেন। ভুট্টার ফলন ঘরে ওঠাতেও আমরা বিভিন্ন কাটার মেশিন তাদের বিনামূল্যে হস্তান্তর করেছি। আশাকরি এ বছরও অধিক ফলনের মুখ দেখবেন এখানকার ভুট্টা চাষিরা।
কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. শাহিনুল ইসলাম বলেন, হাওরে ধান চাষে ঝুঁকি থাকলেও ভুট্টা চাষে তেমন ঝুঁকি নেই হাওরের জমি ভুট্টা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। যে জমিতে ধান চাষ করা যায়না সেই সব উঁচু ও পতিত জমির মাঝেও ভুট্টা চাষ করছে চাষিরা। দুর্যোগে ক্ষতির সম্ভাবনা না থাকায় কৃষকরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন, দেশে এখন ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কৃষক নিরাপদে ফসল উৎপাদন করে লাভ ও ভালো দাম পাওয়ায় দিন দিন হাওর অঞ্চলে বাড়ছে ভুট্টা চাষ, গত দুই তিন বছরের তুলনায় হাওর উপজেলা ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম,নিকলি ও বাজিতপুরে অনেক বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ করা হয়েছে। চলতি বছর ভুট্টা চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ায় আগামীতে আরো বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ করা হবে। ফসলের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হবে দ্বিগুণ।
কেকে/এএম