সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫,
২৪ চৈত্র ১৪৩১
বাংলা English

সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫
শিরোনাম: প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে অন্নপূর্ণা-১ পর্বত জয় বাবর আলীর      গাজায় নৃশংসতার প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ      গাজায় ইসরায়েলের অবিরাম বোমাবর্ষণ চলছে, নিহত অর্ধশতাধিক      চমকের অপেক্ষায় বাংলাদেশ       গত ১৫ বছরে অনেক চেষ্টা হয়েছে, আমি বিএনপিকে ভাঙতে দেইনি      বাধ্যতামূলক ছুটিতে ইসলামী ব্যাংকের এমডি      বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা       
ফিচার
দেখা হবে জান্নাতে
আল মাহমুদ অপু
প্রকাশ: রোববার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫, ৮:০০ পিএম আপডেট: ০৬.০৪.২০২৫ ৯:০৫ পিএম  (ভিজিটর : ২২৪)
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

গাজা উপত্যকার বাতাসে আজকাল আর শিশুরা দৌড়ে বেড়ায় না। কেউ আর ঘুড়ি ওড়ায় না, আর আকাশে হাসির রঙ নেই। আছে শুধু ধোঁয়া, বারুদের গন্ধ আর কান্নার প্রতিধ্বনি। ফিলিস্তিন যেন পৃথিবীর বুকের ওপর এক রক্তাক্ত পৃষ্ঠা, যেখানে প্রতিদিন লেখা হচ্ছে এক নতুন ট্র্যাজেডি। আর তাতে কালি হচ্ছে শিশুদের রক্ত।

এক সময় গাজার অলিগলি ছিল শিশুর খেলাধুলায় মুখর। আজ সেই গলিগুলো যেন কবরস্থান। শিশুদের কান্না, মা-বাবার নিথর দেহ জড়িয়ে ধরে কাঁপতে থাকা ছোট্ট হাতগুলো এখন এই জনপদের চিত্র।

এক মা তার সন্তানকে খুঁজছেন ধ্বংসস্তূপের নিচে, আরেক মা তার নিথর সন্তানকে বুকে নিয়ে বসে আছেন। সেই শিশুটি, যার গলায় এখনো স্কুলের আইডি কার্ড, যার হাতে ছিল রঙিন খাতা—সে আজ আর নেই। প্রতিদিন এই মায়েদের বুক চিরে বেরিয়ে আসছে হাহাকার।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলা আজ ২০২৫ সালের এপ্রিলে এসে গিয়ে গুটিয়ে যায়নি—বরং আরো হিংস্র, আরো নির্মম হয়েছে। দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে ১৮ মার্চ পুনরায় আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েল, আর তাতেই পুনরায় অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে গাজা। শান্তির আশা যেন প্রতিবারই ধুলোয় মিশে যায় একেকটি ক্ষেপণাস্ত্রের শব্দে।

৫ এপ্রিল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি বিমান হামলায় একদিনেই নিহত হয়েছে কমপক্ষে ৬০ জন ফিলিস্তিনি। আর অক্টোবর ২০২৩ থেকে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৫০,৬৬৯ জনে। এদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই নারী ও শিশু। আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ২২৫ জনে। যারা বেঁচে আছে, তারা হয় পঙ্গু, না হয় মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে, জীবিত না মৃত, কেউ জানে না।

যারা উদ্ধার করতে আসছে, তাদের ওপরও হামলা চলছে। একটি ভিডিওতে দেখায় যায়, ২৩ মার্চ রাতে ইসরায়েলি হামলার ফলে গাজার রাফাহ শহরে ১৫ জন মানবিক সহায়তা কর্মী নিহত হন, যাদের মধ্যে ৮ জন প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্য ছিলেন। এই হামলায় আরো ছয়জন সিভিল ডিফেন্স কর্মী এবং একজন জাতিসংঘ কর্মী প্রাণ হারান।

জীবন যেন এখানে প্রতিদিন পরীক্ষা দিচ্ছে মৃত্যুর সঙ্গে।

কী অপরাধ খেলার বয়সী শিশুদের? এরা কেউ সন্ত্রাসী নয়, কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। এরা তো স্কুলের বই হাতে নেওয়ার আগেই বোমার শব্দে ঘুম ভেঙেছে। খেলার মাঠে দৌড়ানোর আগে জীবন বাঁচাতে দৌড়াতে হয়েছে।

এক শিশুকে উদ্ধার করতে গিয়ে চোখে পড়ে তার আঁকা ছবিগুলো—একটিতে সে এঁকেছে ফুল, আরেকটিতে একটি ঘর; যার পাশে লেখা ‘আমার বাড়ি’। সেই বাড়ি আজ ধ্বংস। সেই ফুল আর ফোটে না। ওদের স্বপ্ন এখন ধুলোমলিন। ওদের শৈশব বেঁচে থাকার যুদ্ধে হারিয়ে গেছে।

প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে মিডিয়াতে ভেসে আসে ফিলিস্তিনের ছবি, খবর। কিন্তু সেই সব শিরোনামের পর কী হয়? জাতিসংঘ? মানবাধিকার সংস্থা? ওআইসি? কেউ কি সত্যি কিছু করতে পেরেছে, বিবৃতি দেওয়া আর শোক প্রকাশ করা ছাড়া?

শিশুদের কান্না, এই মায়েদের চিৎকার—এগুলো মানবজাতির ব্যর্থতার সবচেয়ে বড় দলিল। ইতিহাস বলে, যে শক্তি অন্যায়ের ওপর দাঁড়ায়, সে বেশি দিন টিকে না। রোমান সাম্রাজ্য পড়েছে, মঙ্গোলরা থেমেছে, ফারাওনের সৈন্যরাও ভেসে গেছে।

বিশ্ব রাজনীতি যখন অর্থনীতি আর সামরিক মিত্রতার গ্লানিতে ডুবে, তখন একটি জাতি তার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারা জানে, হয় মরবে, নয়তো মর্যাদার সঙ্গে বাঁচবে। গাজার শিশুরা আমাদের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করছে—‘আপনারা কী করছেন?’ এই প্রশ্নের উত্তর কি আমাদের আছে?

যারা আজ এই পৃথিবীর নিষ্ঠুরতার শিকার, তারা হয়তো জান্নাতে শান্তিতেই আছেন। তাদের কান্না, তাদের আর্তনাদ—সরাসরি গিয়েছে সেই মালিকের দরবারে, যিনি সবচেয়ে ন্যায়পরায়ণ। যারা তাদের মারল—তাদের বিচার একদিন হবে। এই দুনিয়ার আদালতে না হোক, আখিরাতে হবে।

এই পৃথিবীতে যারা বাঁচতে পারছে না, তারা হয়তো একটা কথাই রেখে যাচ্ছে, ‘দেখা হবে জান্নাতে’।

কেকে/এএম



আরও সংবাদ   বিষয়:  আল মাহমুদ অপু  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

নীরবতা ভাঙুন, গাজার পক্ষে দাঁড়ান
পহেলা বৈশাখে শাক-ভর্তা খাওয়ার পরামর্শ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার
ইসরায়েলি পণ্য বয়কট ও দেশি পণ্যের ব্যবহার প্রচারে লিফলেট বিতরণ
আদিতমারীতে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের গণহত্যার প্রতিবাদে ওলামা পরিষদের বিক্ষোভ মিছিল
জাতীয় নির্বাচনে নিষিদ্ধ হচ্ছে পোস্টার

সর্বাধিক পঠিত

মৌলভীবাজারে ছেলে-মেয়ের হাতে বাবা খুন
বাঞ্ছারামপু‌রে মিথ‌্যা সংবাদ প্রচা‌র করার প্রতিবা‌দে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন
গত ১৫ বছরে অনেক চেষ্টা হয়েছে, আমি বিএনপিকে ভাঙতে দেইনি
ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে চবির ফ্রিল্যান্সারদের ফাইভার বয়কট
গাজায় নৃশংসতার প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ

ফিচার- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close